তথাকথিত আধুনিক সভ্যতার চালকের
আসনে বসা বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী
দেশটি অতি সম্প্রতি সমকামী বিয়ের
নোংরা অসভ্যতাকে নির্লজ্জের মতো
বৈধতা দান করেছে ।
১৩,২২৭ কিলোমিটার দূরে নিজস্ব ধর্ম ও
জাতিসত্ত্বাকে চরমভাবে বিস্মৃত, হুজুগে
এবং নির্লজ্জ অনুকরনপ্রিয় এক জাতির
কিছু উজবুকও LGBT (lesbian, gay, bisexual, and
transgender) সমর্থক হওয়ার বিকৃত বাসনায়
ব্যাকুল হয়ে উঠেছে ।বাংলাদেশ নামক
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সেইসব মূর্খ
ও নালায়েকদের জন্য আমার গুটি বাক্যবাণ........
.
██ কালরাত্রি । (সত্য ঘটনা অবলম্বনে) ██
.
.
(১)
শেষ বিকেলে বাড়িতে মেহমান এসে
হাজির হলো ।বেশ কয়েকজন ছোকরা
বয়সী যুবক ।গৌরবর্ণ নধরকান্তি দেহ
তাদের ।তাকালে চোখ ফেরানো যায়
না ।যৌবনের স্ফূরনে আপাদমস্তক
লাবন্যের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে ।
একেবারে মূর্তিমান বিপদ!
বাড়ির কর্তা হতকচিয়ে গেলেন অস্বস্থি
ও আতংকে !
হুট্ করে এতগুলো মেহমানকে আপ্যায়ন
করা কি চাট্টিখানি কথা ! তাছাড়া
দিনকালও ভালো না । চারপাশে অসংখ্য
লোলুপ চোখ ।
না জানি খবর পেয়ে কখন এসে হামলা
চালায় বাড়িতে সব দু’পেয়ে
জানোয়ারের দল ।
ভেতর বাড়িতে চলে গেলেন তিনি।
.
ব্যস্ত হয়ে হৈচৈ শুরু করলেন,
--‘কই গো,কোথায় গেলে,বাড়িতে
মেহমান এসেছে ।তাড়াতাড়ি
রান্নাবান্নার কী আছে যোগাড় করতো
দেখি।’
.
এমন সময় বাইরে থেকে প্রচুর চীৎকার
চেঁচামেচী শুনা যেতে লাগলো ।বাড়ির
কর্তা দুরু দুরু বক্ষে বাড়ির বাইরে
বেড়িয়ে এলেন ।সংগে সংগে ভয়ে মুখ চূর্ণ
হয়ে গেল তার ।যা ভয় করেছিলেন ঠিক
তাই হয়েছে ।হাজির হয়ে গেছে সব
শয়তানের দল ।ছোট,বড়,ধেড়ে,বুড়ো ।
ভিড় থেকে গাট্টাগোট্টা ও ষন্ডামতো
একজন এগিয়ে এলো ।দু’ চোখে তার
নোংরা লুলুপ লোভতুর চাহনি চকচক করছে।
ঠোঁটের একপাশ বেয়ে কষ গড়িয়ে পড়ছে ।
‘কী মিয়া,সুন্দর সুন্দর মেহমান পাইয়া
মনে হয় হেগো খাতির যত্নে খুব ব্যস্ত
হইয়া গেছ ।খুবই ভালো কথা ।’ -চিবিয়ে
চিবিয়ে উচ্চারন করলো সে ।‘তয়
প্রতিবেশী হিসাবে আমাগোওতো কিছু
হক আছে, নাকি! কও মিয়া সচ্চরিত্রবান?’
আমতা আমতা করতে লাগলেন বাড়ির
কর্তা হযরত লূত আঃ ।
‘আল্লাহ্র দোহাই লাগে আপনাদের,
ভাইয়েরা ।এরা আমার সম্মানিত
মেহমান ।ওদের দিকে কু-নজর দিবেন না
দয়া করে । আপনারা যা চান আমি তাই
দিতে রাজি আছি । তবুও ওদেরকে রেহাই
দিন । ওদের অসম্মান আমি করতে দেব না।
কক্ষনোই না’।
রাগে মুখ টকটকে লাল হয়ে গেল
ষন্ডামতো লোকটির ।পেছনের জনতাও
উত্তেজিত হয়ে উঠেছে ।আস্তিন গুটাতে
শুরু করেছে ইতোমধ্যে অনেকে ।
হাত তুলে ওদেরকে নিরস্ত করলো সে ।
তারপর চিকন কন্ঠে লূত আঃ কে বললো,
‘মনে হয় খুব বাড়া বাইরা গেছো তুমি।
আমাগো কী দিবার চাও তুমি ?অ্যাঁ ?
আমরা কী চাই বুঝবার পারতাছো না ?
আমাগো নজর কু নজর ? ব্যাটা....’
লূত আঃ খানিকটা পিছিয়ে গেলেন
অসহায় ভঙ্গীতে ।
.
মিনতি জানালেন তিনি আবারও,
‘দেখো ভাই, ঘরে আছে আমার সুন্দরী
কণ্যারা । আল্লাহ্ তোমাদের জন্য
তাদেরকে হালাল করেছেন । তোমরা
যারা যারা চাও এই মুহূর্তে তোমাদের
কাছে তাদেরকে বিয়ে দিয়ে দেবো
আমি ।বিশ্বাস করো ।আল্লাহ্ কে
স্বাক্ষী রেখে কসম কাটছি’ ।
.
হো হো করে আট্টহাসিতে ফেটে পড়লো
পালের গোদা ।পেছনের জনতার মাঝেও
সংক্রমিত হলো সে হাসি ।
‘আরে!!! উল্লুক টা কী কয় হুনছো মিয়ারা ?’
আরেক চোট হেসে নিল সবাই ।
তারপর কটমট করে পালের গোদা
তাকালো দুশ্চিন্তায় প্রায় ভেঙে পড়া
হযরত লূত আঃ এর দিকে ।
‘শোন মিয়া ভদ্দরনোক নবী, আইজকার
রাইতটা সময় দিয়া গেলাম তোমারে ।
যতো খুশী মেহমানগো আপ্যায়ন করাইয়া
লও। সকালে আমরা ফিরা আসমু । পোলা
গুলিরে আমাগো হাতে তুইল্লা দিবা ।
কাইলকা সারাদিন মউজ করমু এইগুলার
লগে । মিয়া, খাঁটি জিনিস আমদানী
করছো । দেখলেই একেবারে.......’ নীচের
দিকে তাকিয়ে অশ্লীল ভঙ্গিতে ইঙ্গিত
করলো সে ।
জনতার মাঝে আবারও হাসির হল্লা
উঠলো ।
রাগে ঘৃণায় সারা শরীর শিউরে উঠলো
লূত আঃ এর । দড়াম করে জনতার মুখের উপর
সদর দরোজা সজোরে বন্ধ করে দিলেন তিনি ।
বাইরে থেকে আবারো চীৎকার শুনা
গেল গোদাটার, ‘সকালে আসমু । ভুইলো
না কইলাম । আর অন্য কোন মতলব থাকলে
ছাড়ান দিও । শহরের চাইরদিকে পাহারা
বসামু আমরা । আবারো কইয়া যাই,
কালকে সকাল পর্যন্ত টাইম ।
জনতার গুঞ্জন আস্তে আস্তে দূরে
মিলিয়ে গেল ।
.
দরোজার ফাঁকে চোখ রেখে দেখলেন লূত
(আঃ) । দু’চোখ বেয়ে তাঁর অশ্রু গড়িয়ে
পড়লো । নিজের জাতির এই নিকৃষ্ট
আচরনে কষ্টে তার বুক ভেঙে যাচ্ছে ।
এতোটা কাল ধরে তিনি চেষ্টা করে
যাচ্ছেন এদের সংশোধন করার । কিন্তু
কিছুতেই কিছু হলো না । দু’চারজন ছাড়া
তাদের অধিকাংশেরই ঘৃণ্যতম
স্বভাবটিকে দূর করতে ব্যর্থ হয়েছেন
তিনি । লাজলজ্জা ভুলে একেকজন
মানুষরুপী পশুতে পরিনত হয়েছে তারা ।
এখন কী করে মুখ দেখাবেন তিনি
মেহমানদের কাছে ।
.
দু’চোখ মুছে দীর্ঘশ্বাস গোপন করলেন
তিনি । তারপর পেছন ফিরতেই একেবারে
তরুন মেহমানদের সামনাসামনি পড়ে
গেলেন । বিব্রত হয়ে শুকনো মুখে হাসি
ফোটানোর চেষ্টা করলেন লূত (আঃ) ।
‘ইয়ে ম্মানে........’
যুবকেরা তাকে আশ্বস্ত করলো ।
‘দুশ্চিন্তা করবেন না আল্লাহ'র নবী । ওরা
আমাদের কিছুই করতে পারবে না । আসুন
শান্ত হয়ে এইখানটায় বসুন । আপনাকে
এইবার আমাদের আগমনের আসল কারনটি
খুলে বলছি, শুনুন হে আল্লাহ্র প্রিয়
বান্দা’ ।
হযরত লূত (আঃ) অবাক চোখে তাদের দিকে
তাকিয়ে রইলেন ।
.
যুবকদের একজন বলতে থাকলো, ‘হে
আল্লাহ্র নবী, আমরা আল্লাহ্র প্রেরিত
ফেরেশতা । মানুষের ছদ্মবেশ ধারন করে
আল্লাহ্র আদেশে আমরা আপনার
কাছে এসেছি । আপনার জাতি
নাফরমানির সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে ।
আমাদের মালিক তাদেরকে অনেক
অবকাশ দিয়েছেন ।কিন্তু তারা
সংশোধনের অযোগ্য ।তাই আমাদের
মালিক তাদেরকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত
নিয়েছেন ।
আজ রাতই এই জনপদের শেষ রাত । এই
জনপদ ধ্বংসের জন্যই আমাদের আগমন’ ।
বিস্ময়ে চোখ কপালে উঠলো লূত (আঃ) এর।
ভয়ে সারা শরীর থরথর করে কেঁপে
উঠলো ।
হায়রে দুর্ভাগা জাতি ! পারলেন না
তিনি । পারলেন না তাদেরকে সত্য ও
সুন্দরের পথে আনতে ।
যুবক থামলো না । বলেই যেতে লাগলো ।
‘রাত ভোর হওয়ার অনেক আগেই আপনি
আপনার পরিবারের সদস্যদের আর আপনার
হাতেগুনা অনুসারীদের নিয়ে এই এলাকা
ত্যাগ করবেন । আর...’ একটু ইতস্তত করলো
যুবক, ‘আর আপনার স্ত্রীকে পেছনে ফেলে
যাবেন । সেও ধ্বংসপ্রাপ্তদের একজন!
আরোও একটা কথা । চলে যাবার সময়
কেউ যেন ভুলেও পেছন দিকে না তাকায়।
যতো কোলাহলই কানে যাক না কেন ।
সাবধান !’
ঝিম্ মেরে রইলেন হযরত লূত আঃ অনেক
অনেকক্ষন । তারপর একটা কথাও না বলে
আল্লাহ্র নবী ফেরেশতাদের
নির্দেশমতো ভোর হওয়ার আগেই এলাকা
ত্যাগের প্রস্তুতি গ্রহনে ব্যস্ত হয়ে
পড়লেন।
(২)
ভোর ।
তখনও সূর্য্য পূবাকাশে উঁকি দেয়নি । দূরে
কোথাও একটা মোরগের ডাক শুনা গেল ।
কন্ঠটি কেমন যেন কান্নার মতো ।
চারপাশে বাতাস হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেছে ।
গাছের পাতারাও যেন নড়াচড়া করতে
ভুলে গেছে । এক মহা প্রলয়ের আশংকায়
সমস্ত চরাচর রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে ।
তারপর । তারপর এলো সেই মুহূর্ত ।
আচমকা দোলে উঠলো পৃথিবী ।পায়ের
নীচে মাটি থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো।
।
চড়চড় করে ফাটতে লাগলো ভূপৃষ্ঠ ।
ভীষনভাবে দেবে যেতো লাগলো বাড়ি-
ঘর রাস্তা-ঘাট এখানে ওখানে ।
কোথাও কোথাও ভূগর্ভ থেকে
প্রবলবেগে লক্ষ কোটি ভারী শিলা
উৎক্ষিপ্ত হতে থাকলো শূন্যে । তারপর
সেগুলো সজোরে ভেঙ্গে পড়লো মাথার
উপরে । নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধের
আতংকিত আর্তনাদ, কান্না আর
গোঙানীতে যেন রোজ কিয়ামত শুরু হয়ে
গেল চারদিকে ।
অনেকক্ষন ধরে চললো এই তান্ডবলীলা ।
তারপর একসময় থেমে গেল সবকিছু ।
যতদূর চোখ যায় কোন প্রাণ বা জনপদের
কোন চিহ্নও রইলো না আর । কেউ
কোনদিন বলতেও পারবেনা এইখানে
একদিন প্রাণের কোন চিহ্ন ছিল ।
এইভাবেই নিজ হাতে নিজেরই সৃষ্টি
ধ্বংস করলেন মহান রাব্বুল আলামীন ।
একসময় ভূগর্ভ থেকে কুলকুল করে পানি
উঠে ছড়িয়ে গেল আদিগন্ত ।
ধ্বংসযজ্ঞের উপর তৈরী হলো বিশাল এক
সাগর ।
মৃত সাগর!!! যার নাম ।
(Dead sea)
.........
...............
....................
( সুরা আল আ’রাফ এবং সুরা হূদ অবলম্বনে
রচিত। )
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৫:৫২