ঘুমাতে যেতে যেতে আমারও প্রায় রাতের দুইটা তিনটা বেজে যায়। ঘুমানোর আগে ফেবুতে ডুকে একটু উঁকি মারি। সাথে সাথে কেউ একজন ম্যাসেজ দিয়ে বসেঃ
- বিল্লাহ ভাই, এখনো ঘুমান নাই ?
- না ভাই। মাত্রই শুইলাম। ঘুম বলছে সে আসতেছে। তো আপনি না ঘুমিয়ে কি করেন ?
- কি আর করমু ভাই, শুয়ে শুয়ে রবীন্দ্রগীতি শুনি।
- আহা খুব ভালো তো ! ভাবী রবীন্দ্রগীতি ভালো পারে তাহলে ?
- হুর্মিয়া, তা না...
- তাইলে...
- আরে ভাই, যার বৌ নাই তার মশা আছে ! এটা জানেন না নাকি ?
- ওহ্নো ! জানি তো...
- ঘুম আসতেছে না ভাই। তাই মশা কর্তৃক গান শুনি আরকি...
.
.
আমার আজকের লেখাটা এদের জন্য যারা ঘুমাতে গিয়েও ঘুমাতে পারছেন না, ঘুমানোর কিছু শর্টকাট কার্যকরী উপায় নিয়ে।
রাতের বেলায় আমারও ঘুম আসছেনা দেখে কিছু টিপসের জন্য গুগল মামারে কয়দিন আগে আস্কাইলাম।
মামা কয়ঃ এটা খাও, ওটা নাও, এটা ধরো, ওটা চুষো এরকম হাবিজাবি।
অনেক গুলো ট্রিকস থেকে বেঁচে বেঁচে মনমত কিছু ট্রিকস নিলাম।
প্রথম দিন ট্রাই করতে গিয়েই ঘুমাই গেছি।
বুঝলাম কাজ হয়েছে।
আজ আপনাদেরকে ঐ টিপসগুলো দিব যাতে করে আপনারা রাতের বেলায় তারাতারি ঘুমাইয়া যাইতে পারেন।
চলুন আমরা ঘুমাতে শুরু করি,
তার আগে মোবাইলটা/ল্যাপিটা বন্ধটা করুন।
আরে আরে এখন না, এখন না ! ঘুমানোর আগে।
মনিটর কিংবা স্ক্রীনের আলো আপনাকে সহজে ঘুমাতে দিবেনা। মনকে আর চোখকে অস্থিতিশীল করে ফেলবে।
সো, বিছানাটা ভালো করে ঝেড়ে মশারিটা টাঙ্গিয়ে মোবাইলটাকে মাথার থেকে কয়েক হাত দুরে রেখে ঘুমাবার প্রস্তুতি নিন।
মোবাইল হতে নির্গত রেডিয়েশন মাথার ক্ষতি করতে পারে, একারনে এসব সর্বদা নিজ থেকে দুরে রাখতে চেষ্টা করবেন।
আরামদায়ক ষ্টাইলে শুয়ে পড়ুন, তাহলে খুব তারাতারি ঘুম চলে আসবে।
এখন কইতাছেন, আরামদায়ক ষ্টাইল আবার কোনটা !
খেয়াল করেন তাহলে...
প্রথমে ডানদিকে কাত হয়ে শুয়ে পড়ুন। বাম পায়ের গোড়ালিকে ডান পায়ের হাঁটুতে এনে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ুন। এবার ডান হাতটা সম্পূর্ণ মেলে দিন। আর বাম হাতটাকে ঘাঁড়ের নিচে কাঁধের কাছে রাখুন। এটা এক প্রকারের আরামদায়ক শোয়া। আরোক কয়েক প্রকারেরও আছে।
একবার ট্রাই করে দেখুন না !
কি আরামইনা লাগে এরকম শুইলে !
অথবা ডান হাতটাকে ডান গালের নিচে রাখতে পারেন। এটাও খুব ভালো।
খবরদার ! উপুড় হয়ে শুবেন না। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
খুব বেশি ক্লান্তি লাগলেও বেশিক্ষন উপুড় হয়ে শুয়ে থাকাটা উচিত না।
ঘুমানোর পূর্বে হাত-পা-মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। তাহলে আপনি খুব শান্তির একটা ঘুম দিতে পারবেন।
আপনি মুসলিম হলে এক্ষেত্রে অজু করে নিতে পারেন। তাহলে পরম শান্তির এক ঘুম ঘুমাতে পারবেন।
অন্ধকার ঘরে ঘুম তারাতারি আসে। মোবাইল বা ল্যাপি টিপাটিপি করলে ঘুম সহজে আসবেনা। মশারি না থাকলে পোকারা আলোকিত স্ক্রীনে এসে আড্ডা বসাবে। যেটা আরো বেশি বিরক্তিকর। ওসব সাইডে রেখে ঘুমান।
শুয়ে শুয়ে বই পড়াটা মন্দ না। তবে পিডিএফ না, অরিজিনাল বই। কিন্তু লাইট অফ করবে কে ? কারন আপনি তো পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাবেন।
পরে আপনার মায়ের ডাকে আপনার কাঁচা ঘুম ভাঙ্গবেঃ কিরে সুজন, লাইট জ্বলে কেন রে ?
এরকম যেন না হয়। বাপের বিদ্যুত বিল বাড়বে।
.
.
এবার আপনাদেরকে এক মিনিটে ঘুমিয়ে যাবার ট্রিকটা দিচ্ছি। এটা খুব কার্যকরী...
প্রথমে জিভের আগাটা রাখুন সামনের দাঁতের সারির মাংসল জায়গার উপরে। ঘুম আসা পর্যন্ত এভাবে রাখুন।
এ বার বেশ জোরে ‘হুশশশ’ শব্দ করে গাল দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ুন।
এ বার গাল বন্ধ করে আস্তে আস্তে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন।
যে নিঃশ্বাসটা ছাড়বেন তা টানার নিঃশ্বাসটার চেয়ে কিছুটা বড় হবে।
একই ভাবে ‘হুশশশ’ শব্দ করে গাল দিয়ে শ্বাস ছাড়তে থাকুন আর নাক দিয়ে টানতে থাকুন।
এ ভাবেই কয়েকবার করলে ঘুম এসে যাবে, যদি মন মানসিকতা ভালো থাকে।
মানসিকতা খারাপ থাকলে ঘুম সহজে আসেনা।
অন্য আরেকটা ট্রিক আছ তারাতারির ঘুমানোর।
হ্যাঁ, নিজে নিজে স্বপ্ন তৈরী করুন।
আপনি ছেলে হলে কল্পনা জুড়ে দিন আপনার নায়িকাকে নিয়ে।
কল্পনা করুন, আপনারা চাঁদের দেশে চলে গেছেন। হাঁটছেন তো হাঁটছেন। উইদাউট অক্সিজেন। কল্পনাতে অক্সিজেন লাগেনা।
হঠাত্ করে আপনার নায়িকা চাঁদের মধ্যে থাকা একটা ছোট গর্তে পড়ে গেল। 'বাঁচাও অমিত, বাঁচাও আমাকে' বলে চিত্কার শুরু করে দিলো। এ চিত্কারে অবশ্য আপনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবেনা। আপনি একটা রশি দিয়ে আপনার নায়িকাকে টেনে তুলে ফেলবেন। কল্পনায় রশি পাওয়াটা দুরুহ কোনো ব্যাপার না। চাঁদে যদিও পাবেন কিনা সন্দেহ। নায়িকা রশি বেয়ে বেয়ে উঠে আসবে। যখন প্রায় কাছাকাছি উপরে চলে আসবে তখন আপনি আবেগের ঠেলায় জোরে টান দিবেন। আর সাথে সাথে বাংলা ছবির মত নায়িকা আপনার বুকের উপরে এসে পড়বে। তখন শুভদৃষ্টি বিনিময় হবে।
এরপর খুব সুইট রোমান্টিক একটা গান হবে।
আর আপনি ততক্ষনে গানের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়বেন।
আর হ্যাঁ, আপনি মেয়ে হলে নিজেকে চাঁদের গর্তে পড়ে যাওয়া মেয়েটা হিসেবে কখনো ভুলেও ভাববেন না।
ঘুম আজীবনের জন্য ঐ গর্তে পেন্দে যাবে।
আপনি ভাবতে পারেন আপনি একটা বিরাট শপিংমলে আছেন। আর আপনি যা ইচ্ছা সেখান থেকে তা কিনতে পারতেছেন। আপনার নায়ক কয়েকটা টাকার ব্যাগ নিয়ে আপনার পিছনে পিছনে কয়েকজনকে পাঠিয়ে দিয়েছে। আপনি নিরিবিলি মার্কেটিং করতেছেন। করতেছেন তো করতেছেন।
এভাবে এক পর্যায়ে মার্কেটিং করতে করতে আপনি মার্কেটেই ঘুমিয়ে পড়বেন। না না, মার্কেটে না, বাসাতেই ঘুমাবেন।
এতকিছুর পরেও যদি আপনার ঘুম না আসে তো বাহিরে বেরিয়ে বা ছাদে গিয়ে আকাশ দেখুন। কারন আপনার মনটা খারাপ আছে।
তাহলে মন কিছুটা শান্ত হবে।
কিছুটা ভালো ফীলও করতে পারবেন।
তারপরে ঘুমাতে যেতে পারেন।
অনেক অনেক কথা বলে ফেললাম ঘুম নিয়ে।
এবার একটা কথা বলি,
আমাদের আসলে মনে রাখা উচিত,
আজকের ঘুমটা আমার আপনার জীবনের শেষ ঘুমও হতে পারে। আর হয়তো কখনো এত আয়োজন করে ঘুমানোর সুযোগ নাও পেতে পারি।
সুতরাং, স্রষ্টার কাছে অন্তত একটাবার মাফ চেয়ে আমাদের ঘুমিয়ে পড়া উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০০