শরীর কাঁপছে।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট বেড়ে নাজেহাল অবস্থা।ইনহেলার সকালেই ফুরিয়ে গেছে। । এই নিয়ে অসংখ্যবারই এমনটা হয়েছে। নাজিম সাহেব!! শুনছেন? ধরুন এইবারই শেষ এবং খানিক বাদেই আপনার মৃত্যু অনিবার্য। বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। মাথার কাছে ছোট ছেলে বসা।মিনমিন করে কাঁদছে। বড় ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে গেলো টেলিফোনের কাছে। ডাক্তার ডাকতে। বিছানার পাশের মেঝেতে দাঁড়িয়ে আপনার পুত্র বধুরা চোখ ভাসাচ্ছে। আর তাদের আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটা ট্যাব্লেট। আইমিন আপনার নাতি-নাতনিরা।আপনার তেরো বছরের আদরের মেয়েটি পায়ের কাছে বসে। আপনার পায়ের পাতা ভিজিয়ে দিচ্ছে চোখের পানিতে। আপনি কি দেখতে পারছেন? চোখের আলো ধীরে ধীরে কমে আসছে? ছেলেদের কথা মনে পড়ছে? পুত্রবধূদের রান্না খেতে ইচ্ছে করছে? মেয়ের বিয়ে দিতে হবে?নাতি-নাতনিদের সাথে খেলবেন? আর যে সময় নেই।আর একটু পরেই আজরাইল আসবে। আপনার তুলতুলে দেহ থেকে রুহুটা আলাদা করে দিবে। কি ভাবছেন? আজরাইলকে অনুরোধ করবেন? আরো কয়েকটা দিন বাঁচতে চান? সিদ্দিক সাহেবের সাথে জায়গা জমিন নিয়ে বোঝাপড়া আছে? ছাড়ুন না।কি হবে এত জায়গাজমি দিয়ে? দশতলা বিল্ডিং আরো একটা দিতে চান? আরো কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি কিনবেন? আচ্ছা সাড়ে তিন হাত সজমিতে এত কিছু আঁটবে তো?
চলে এলো শহরের বড় বড় কয়েকটা ডাক্তার। ডাক্তার আপনাকে স্পর্শ করতেই বুঝে গেলো আপনি আর নেই।দুঃখিত, আপনি আছেন।কিন্তু আপনার রুহুটা নেই। ওটা আজরাইল তার নিজ হেফাজতে নিয়ে গেছে। এখন আর কি! আপনার ছেলে,মেয়ে, পুত্রবধূ, নাতি-নাতনিরা আপনাকে জড়িয়ে ধরে গলা ফাটাচ্ছে।আশপাশ থেকে প্রতিবেশীরাও ছুটে আসছে।সবাই-ই একবার করে হলেও চোখের জল ফেলছে।সিদ্দিক সাহেবও এসেছেন। মজা দেখতে? তার একটা প্রতিপক্ষ কমে গেলো তাই? একি সিদ্দিক সাহেবের চোখেও পানি! তিনিও কাঁদছেন। কেন কাঁদছেন? তার তো কেঁদে চোখ ফুলানোর কথা নয়।তার তো ঢাক ঢোল পিটিয়ে মহোৎসব করার কথা।
নাজিম সাহেব! আপনি কি দেখছেন? সবকিছু অদ্ভুত মনে হচ্ছে না? সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে? আসলেই, যারা আপনাকে সামান্য পরিমাণও সহ্য করতে পারতো না,কখনো কখনো হয়তো আপনার মৃত্যু কামনাও করতো। আজ তারা আপনার জন্য চোখের পানি ফেলছে।স্বপ্নই তো হওয়ার কথা। নাহ নাজিম সাহেব এটাই বাস্তবতা।আপনি সত্যিই নেই। আপনাকে ঘিরে সকলের কান্নাও সত্যি। ছোটবেলায় মানুষের মুখে মুখে শুনেছিলাম, মানুষ মরে গেলে নাকি চল্লিশ দিন তার আত্মা নিজ বাড়ির আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। কথাটা যদি মিথ্যে না হয় তাহলে হয়তো আপনিও ঘুরবেন।হয়তো দেখবেন আপনার স্বজনরা আপনার অনুপস্থিতিতে কতটা কষ্ট পাচ্ছে।হয়তো বা না।
বছর খানেক ব্যয় হওয়ার পর কি হবে জানেন নাজিম সাহেব? আচ্ছা ধরুন বছর খানেক ব্যয় হলো। স্বজনরা আপনার তিল তিল করে গড়া সম্পত্তি ভাগাভাগি করে যার যার মত ভোগ করছে।শুধু এতেই যে থেমে আছে তা কিন্তু নয়। বাড়ির গেইটের পাশের দেয়ালটিতে লিখে রাখা আপনার নামটি মুছে লিখা হলো অন্য কারো নাম। ধরুন আপনার ছেলেদের মধ্যে যে কারো নাম।অন্যকারো নামও হতে পারে।
আপনি কবরের ভিতর গভীর নিদ্রায় তলিয়ে। কবরের পাশ দিয়ে আপনার পরিচিত কেউ হেঁটে যাচ্ছে। আর তার সংগেই হেটে যাচ্ছে আপনার অপরিচিত কেউ। আপনার পরিচিত লোকটি অপর লোকটিকে চোখে ইশারা করে আপনার কবর দেখিয়ে বলছে,"ওই যে কবরটা দেখছো ওটা আমাদের এলাকার নাজিম সাহেবের কবর।" এইভাবে যারাই এই কবরের পাশ দিয়ে যায় তারাই বলে," ওই যে নাজিম সাহেবের কবর দেখা যায়।"
কিছু বুঝলেন নাজিম সাহেব? এখনো বুঝলেন না? আরে ভাই এত্ত এত্ত সম্পত্তি,এত জায়গা জমিন জোড়ালেন।। কিন্তু যাওয়ার বেলা কিছু নিয়ে যেতে পারলেন কি? কিছুই না। ওই সাড়ে তিন হাত জমির কবরটাই শুধু আপনার নামে। আর কিছুই না। শুধুই সাড়ে তিন হাত জমি।
[[[ নাজিম সাহেব তো মারা গেলেন। মৃত্যুর পরে কি তিনি ঘটনাগুলো সত্যিই আড়াল থেকে দেখবেন? মৃত ব্যক্তি আসলেই কি তা দেখতে পারে? কি জানি! এসব উদঘাটন করতে হলে তো নিজেকে একবার মরতে হবে। কিন্তু একবার মরলেই তো শেষ। কি উদঘাটন করলাম তা জনসম্মুখে তুলে ধরারও কোনো সুযোগ থাকবে না।]]]
________
মেহেদী
০১/১০/১৫
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:২২