থানা সদরে এক দোকানে বকলস আছে কি না জিজ্ঞেস করতেই দোকানী টাসকি খেল।
দোকানী-বকলস ? সে আবার কি? জীবনেতো এ নাম শুনিনি ?
জিকু সাহেব- আরে বকলস চিনেননা ! কুকুরের গলায় যে বেড়িরর মত পড়িয়ে রাখে।
কি কেইলেন কুত্তার গলায় পড়ায় বকলস ? হেই জিনিস কিনবার আ্ইছেন আমার দোকানে। কুত্তা আমি ঘেন্না করি, প্রচন্ড ঘেন্না। ছিঃ ছিঃ আপনে আমারে ভাবছেন কি ? আমি কুত্তার বকলস বেছনের মানুষ না।
দোকানীর কথা শুনে হতাশ হলেন জিকু সাহেব, আবার একটু হাসিও পেল ।
তার প্রিয় কুকুর টমির বকলসটা পুরাতন হয়ে গেছে যে কোন সময় খসে পড়বে। এমনিতেই নতুন পরিবেশে সে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে তার উপর বকলস না থকলে টমিকে সামলো দায় হবে।
মাস খানেক হল ঢাকা থেকে দাউদকান্দি থানায় নিজ গ্রামে এসেছেন জিকু সাহেব। সাথে বাসার কেয়ার টেকার ও আদরের কুকুর টমি।
গ্রামের মানুষ আনন্দ ও বিষ্ময় নিয়ে জিকু সাহেব ও তার কুকুরের কীর্তি কান্ড দেখে। বিশেষ করে সকাল বিকাল তিনি যখন ব্যায়াম করেন তখন টমি এমন ভাব ধরে যেন জিকু সাহেব কে পাহাড়া দিচ্ছেন। ভয়ে কেউ তখন কাছে আসেনা। কাছে আসার চেষ্টা করলে টমি রক্ত হীম করা চোখ নিয়ে হিংস্রভাবে তেড়ে আসতে চায়।
অনেক দোকান খোঁজ করেও বকলস না পেষে বিষন্ন মনে তিনি ঘরে ফিরলেন। না এখানে পাওয়া যাবে না। ঢাকায় গিয়েই বকলস কিনতে হবে।
জিকু সাহেবের অগাধ টাকা পয়শা ব্যাংকে অলস পড়ে আছে। তিনি দেখেছেন এখানে মানুষ সামন্য কিছু টাকার জন্য কত কষ্ট করে। ব্যবসা-পাতি ঠিক মত করতে পারেনা। গ্রামের মানুষকে তিনি বিনা সুদে টাকা দিচ্ছেন স্বনির্ভর হওয়ার জন্য। তবে শর্ত একটাই নির্দিষ্ট সময শেষে মূল টাকা ফেরত দিতে হবে। এতে অনেকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। তার সম্পর্কে মানুষের জানার কৌতহল আরও বেড়ে গেছে।
কেয়ার টেকার মজিদ-কে রাস্তায়, বাজারে, মাঠে যে যেখানে পায় জিকু সাহেব সম্পর্কে এটা সেটা জিজ্ঞেস করে।
গ্রামের মানুষ জন জানল তিনি অনেক বছর বিদেশ ছিলেন এবং তার পরিবার পরিজন এখনও বিদেশ থাকে তখন অবাক হল। তারা ভেবে পেলনা এই লোক ঢাকা শহর কেন এক থাকে ? কেনই বা মাঝে মাঝে কুকুরসহ গ্রামের বাড়িতে এসে থাকে ?
তারা আরও অবাক হল কুকুরের খাওয়া ও জীবন যাপনের কাহিনী শুনে। কুকুরের জন্য মাসং ও দামী খাবার এবং শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো, দামী বিছানায় শয়নের কথা বিদেশী কোন গল্পের মতই মনে হয় আর চিকিৎসার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ে।
ওমা ! বলে কিগো; মানুষ হয়ে আমরা কিনা দুবেলা ভাত খেতে পাইনা ঠিক মত। আর কোথাকার কোন বেজন্মা কুত্তা কিনা এমন সোনার সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। টমিকে তাদের হিসংষা হতে লাগলো।
গ্রামের নেড়ি কুকুর দিয়ে টমিকে হেনস্তা করতে চাইল কেউ কেউ গোপনে। কিন্তু টমির হুংকার শুনেই সেই গ্রাম্য কুকুরগুলো লেজ গুটিয়ে পালায়। টমির নাদুস নুদুস শরীর দেখে ওদের চোখ টাটায়।
কিছু ধান্দাবাজ তরুণ টাকা হাতানোর মতলবে একদিন জিবু সাহেবের বাড়িতে এসে হাজির।
প্রথমে এটা সেটা বলে-গুন কীর্তণ করে আসল কথা পাড়লো। তারা একটা পুকুর খনন করতে চায়। সবার কাছ থেকেই সাহায্য নিচ্ছে। জিকু সাহেবকে দশ হাজার টাকা দিতে হবে।
শুনে জিকু সাহেব বলল-এটাতো ভাল কথা গ্রামে একটা পুকুর হবে। তবে আমি খোঁজ-খবর নিয়ে জানব যে সত্যিই পুকুরের কোন প্রয়োজন আছে কিনা। তবেই টাকা দেব।
তরুণেরা যত সহজ ভেবেছিল টাকাটা পকেটে পুরবে।কাজটা তত সহজে হলনা। তারা বিফল হয়ে ফিরে গেল এবং ফঁন্দি আটতে লাগলো কেমন টাকাটা হাতে নেওয়া যায়।
এদিকে জিকু সাহেব দেখলেন গ্রামে ২ টি পুকুর আছে । আর কোন পুকুরের প্রয়োজন নেই। তাই তিনি টাকা দিবননা বলে দিলেন।
তরুণেরা টাকা না পেয়ে রটিয়ে দির তিনি কুকুর সাথে নিয়ে ঘুমান এবং...করেন। বাতাসের আগে রটনা রটে গেল । সবাই ছিঃ ছিঃ করতে লাগলো। এখন কেউ ওনাকে দেখে সালাম দেয়না, কথা বলেনা এমনকি টাকা ধার নিতেও আসেনা।
একদিন দেখা গেল কারা যেন টমিকে আহত করে ফেলে রেখে গেছে। বাগানের ফুল গাছগুলো উপরানো। রাতে টিনের চালে ঢীল।
এসব দেখে তিনি খুব কষ্ট পেলেন এবং একদিন খুব ভোরে মজিদ ও টমিকে নিয়ে চলে গেলেন।
পিছনে ফেলে গেলেন মিথ্যা কলঙ্ক।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:১১