somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

-বাবার মৃত্যুর দিনে অট্টহাসি হাসতে বাধ্য থাকা মেয়েটির গল্প

০৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনি কি খুব কষ্টের সময়ে অনেক হেঁসেছেন কখনও?
সেটা অনেক বেশী এবং ঘন্টার পর ঘন্টা আপনাকে হেঁসে মানুষকে আনন্দের খোরাক বানাতে হয়েছিল?


মনে করুন আপনার অনেক প্রিয় বাবা কিংবা মা যেদিন মৃত্যু বরন করেছেন, আপনি আপনার পেশার কারনে তাদের লাশ দাফন করে এসেই হাসতে বাধ্য হচ্ছেন। কিংবা কেউ বাবার লাগের পাশে আপনাকে হাসতে বাধ্য করেছে।
আমি যখন পোল্যান্ডের ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয় ছিলাম তখন এমন একজন মানুষের সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছিল। একটি কোর্সে আমার ক্লাশমেট ছিল মেয়েটি। নাম ইজাবেলা। পড়াশুনা করতেন মিডিয়া স্টাডিস বিভাগে। তবে পেশায় ছিলনে একজন মুখাভিনেতা।

মুখাভিনেতা হচ্ছে তারা যারা বিভিন্ন বিদেশী সিনেমা, কার্টুন কিংবা এই জাতীয় জিনিষকে নিজ ভাষায় রুপান্তর করতে কন্ঠ দিয়ে থাকেন। তাদের শব্দাভিনেতাও বলাও যেতে পারে। ইংলিশে আমরা যেটাকে dubbing বলে থাকি।
তবে অন্য আরেক মুখাভিনেতা আছেন যারা কন্ঠ ছাড়া মুখের ভঙ্গিতে অভিনয় করেন। আমি এখানে প্রথম মুখাভিনেতা বা শব্দাভিনেতার কথা বুঝাচ্ছি।

ইজাবেলা, এমনই একটি পলিশ মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি এর সাথে কাজ করতেছেন। এই অভিনেতাদের অনেক সময় একই সাথে বেশ কয়েকটি চরিত্রেও কন্ঠ দিতে হয়।

সেদিন খুব শীত ছিল, সন্ধা ৪ টা প্রায়। আমরা ক্লাশ থেকে বের হয়েছিলাম। ইজাবেলা এসে বলল, "চল কফি পান করি"।
আমি রাজি হয়ে গেলাম। ওর সাথে আমার আগে থেকেই ভাল পরিচয় ছিল। সেদিন আমাদের সাথে তার্কিশ একটি মেয়ে যার নাম শেনা আর চেক রিপাবলিকের ছেলে মার্শালও ছিল। আমরা ৪ জন গিয়েছিলাম কফি পান করতে।

আমরা আমাদের জীবনের সব থেকে ভাল এবং সব থেকে খাবার সময় গুলো নিয়ে কথা বলছিলাম। সবাই তাদের ভাল আর খারাপ সময়ের কথা বলে যাচ্ছ। আমিও বলেছিলাম।

এবার পর্যায়ক্রামে ইজাবেলার পালা। ভাল গল্পটি খুব অল্প সময়েই শেষ করেছিল সে। তবে পুরো গল্পটা আমার মনে নেই। এবার খারাপ সময়ের গল্প।

ইজাবেলা শুরু করেছিল এভাবে, " মাত্র ২ বছর আগে। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ বছর শেষ করেছি। আমি একজন মুখাভিনেতা হিসেবে কাজ করি আমার স্কুল জীবন থেকেই। আমি আমার পরিবারের সাথে থাকি এখানে (ওয়ারশ)। আমার বাবাও এখানেই একটা ব্যাংকে চাকরি করতেন আর মা একজন সিকিউরিটি অফিসার। সেদিন ছিল ২৩ মে। আমি তখন একটি কমেডি সিনেমাতে কাজ করছিলাম। সিনেমাটি আসলেই খুব হাসির ছিল। মুলত এটি একটি শিশুতোষ এনিমেশন সিনেমা ছিল। আমাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায় ছিল। আমাদের সিনেমা মার্কেটে ছেড়ে দেয়ার জন্য তখন আমাদের হাতে খুব অল্প সময় ছিল। আগের দিন রাতে আমাদের পরিচালক ম্যাছেজ দিলেন, আগামীকাল খুব সকাল থেকে আমাদের কাজ করতে হবে। উনি বলছিলেন, 'আমরা অনেক দেরি করে ফেলছি। তুমি আগামীকাল সকাল ১০ টায় চলে এসো'।

সেদিন রাতে আমার বাবা হার্টস্টোক করে মারা গেলেন। রাত তখন প্রায় ৪ টা, উনি যখন মারা গেলেন। সব কিছু খুব দ্রুত হয়ে গেল। বাবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও আমাকে 'শুভ রাত্রী' বলে গিয়েছিলেন। এটাই ছিল তার সাথে আমার শেষ কথা।"
ইজাবেলার চোখ ভিজে উঠেছিল।
ইজাবেলা বলছিল,"বাবার সৎকার এর জন্য আমরা সকল প্রক্রিয়া শেষ করলাম। সকাল ১০ টায় আমার পরিচালক আমাকে ফোন দিলেন। আমি তাকে সব খুলে বললাম। উনি বিনয়ের সাথে বললেন,' আচ্ছা তুমি তাহলে সৎকারের কাজ শেষ করে বিকেলে ৪ টার মধ্যে এসো। তোমাকে এই সময়টা আমি ছুটি দিলাম। তুমি তো বুঝতেই পারছ আমাকে কাজটা তুলে নিতেই হবে আজ।'
আমি কিছু না বলে ফোন কেটে দিলাম। বাবার সৎকার শেষ হতে বেলা ১ টা বেজে গেল। আমাদের পরিবারে তখনও মাতম চলছিল। আমার ছোট ভাই এর মাঝে বেশ কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পরেছে। আমার বাবা মাত্র ৫০ বছরের ছিলেন। এভাবে সময় যাচ্ছিল। আমার পরিচালক আমাকে এর মাঝে আবার ম্যাছেজ করেছেন যে আমি যেন ৪ টার পরে দেরি না করি।

সব ভুলে আমি বিকেল ৪ টায় স্টুডিওতে হাজির হলাম। সেদিন অনেক হাসতে হয়েছিল আমাকে। অনেক হেসেছিলামও। কেন যেন ভেতর থেকে বন্ধি থাকা একটা হাসির আগ্নেয়গিরি ফেঁপে ফুটে উঠেছিল। "
এটা বলতে বলতে ইজাবেলা তখন আমাদের সামনে কাঁদছিল।
"সেদিন রাতে আমি বাসায় গিয়ে সারারাত কেঁদেছিলাম। বাবার মৃত্যুর দিনে আমার পেশা আমাকে খুব হাসিয়েছিল । হয়তো আমার সেই দিনের হাসির সিনেমা দেখে আরো অনেকে হেসেছিল আমার মত। কিন্তু সেই হাসির মাঝে লুখিয়ে থাকা বুকফাটা কান্নার রহস্য কি কেউ জানে?"
ইজাবেলা শেষ করল। তার্কিশ মেয়েটি শেনাও কান্না করে দিল। আমরা দুটি ছেলে কিছু বলছিলাম না। শুনেই গিয়েছিলাম।
পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য মার্শাল বললঃ এই যে, আমাদের আরও ৪টা কফি দেন। সাথে মিষ্টান্নও কিছু দিয়েন।।

বাসায় আসার পথে ভাবছিলাম, মানুষ তার পেশার জন্য জীবন দেয়। অনেকেই অনেক ত্যাগ মেনে নেয়। কিন্তু এই হাসি আর এমন হাসি যার উল্টো দিকে এক পাহাড় কান্না থাকে তার কি ব্যাখ্যা আছে কোন(?)।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:৪১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×