somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতীয় চেতনার কবি, তুমি বেঁচে আছো তোমার অনবদ্য সৃষ্টির মাঝে!

১২ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এলো কে কাবার ধারে
আঁধার চিরে
চিনিস নাকিরে!
ওকে ও মা আমিনার
কোল জুড়ে চাঁদ
জানিস নাকিরে।

মুতালিব আজকে কেন
বেঁহুশ হেন
বক্ষে খুশীর বান
বেদনার সুপ্ত ক্ষতে
হাত বুলাতে
কার এ আগমন
সাহারার হৃদয় ভরা
ঝর্ণাধারা
বইলো নাকিরে। (আংশিক)

উপরক্ত কবিতাটি প্রথম যেদিন চোখে পড়ে ভেবেছিলাম এটি হয়তো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর লেখা কবিতা। শব্দ বিন্যাস দেখে আমার মত অনেকেই এই ধারণা করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই ভুলটা ভাঙ্গল। এটি জাতীয় চেতনার কবি মতিউর রহমান মল্লিক ভাই এর এক অনবদ্য সৃষ্টি। ইসলামীক সাহিত্য এবং সংস্কৃতির বিস্তারে যেসব মানুষের নাম বলতে হয় তাদের মধ্যে অন্যতম এই কবি মতিউর রহমান মল্লিক। খানজাহান আলীর বাগেরহাট জেলার বারইপাড়া গ্রামে ১৯৫৬ সালের ১ মার্চ মুসলিম মিল্লাতের এই জাগ্রত কবি জন্মগ্রহণ করেন। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে তিনি ছুটে বেড়িয়েছেন বাংলার প্রতিটি গ্রাম থেকে গ্রামান্তর। সেখান থেকে তুলে এনেছেন ইসলামী সংগীতের হাজারো শিল্পী। তাঁর হাত ধরেই ইসলামী সংগীতে আলো ছড়াচ্ছেন নওশাদ মাহফুজ,সাইফুল্রাহ মানছুর,সুমন আজীজ এবং তারিক মনোয়ারের মত শিল্পীরা।


সুস্থ সংস্কৃতির আলো ছড়িয়ে দিতে কবি মতিউর রহমান মল্লিক ছিলেন পাগলাপারা। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি নিজের প্রতিও উদাসীন ছিলেন। এমনকি তিনি তাঁর উপার্জনের টাকাও সংসারে খরচ না করে শিল্পীদের পিছনে খরচ করতেন। সেরকমই একটি ঘটনা শেয়ার করছি।

সিলেটের এক উদিয়মান শিল্পী ঢাকার একটি নামকরা কলেজে পড়াশুনা করতেন। পরবর্তিতে তিনি ঢাকা মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাশ করে ডাক্তার হয়েছেন। কিন্তু ঐ কলেজ পড়াকালীন সময়ে তার অর্থনৈতিক অবস্থা দারুন নাজুক ছিল। তিনি ঐ এক শার্ট গায়ে দিয়ে সংগীতের রিহার্সেলে আসতেন। বিষয়টি মল্লিক ভাই এর দৃষ্টি এড়ালো না। মল্লিক ভাইও যে খুব বেশি উপার্জন করতেন তা কিন্তু নয়। কিন্তু তিনি পরের মাসের পাওয়া টাকা নিয়ে সেই উদিয়মান শিল্পীর কাছে চলে গেলেন। তিনি দুইটি নতুন শার্ট এবং একটি প্যান্ট কিনে তাকে উপহার দিলেন। তখন সেই উদিয়মান শিল্পী মল্লিক ভাইকে বললেন, ভাই! আপনার পরিবারের খরচ? মল্লিক ভাই তাঁর ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে বললেন, আল্লাহপাক নিশ্চয়ই কোন না কোন ব্যবস্থা করে দিবেন। ঠিক এরকমই এক সাদা মাটা জীবনের অধিকারী ছিলেন জাতীয় চেতনার কবি মতিউর রহমান মল্লিক ভাই।



কবিরা নাকি একটু বেশিই উদাসীন হয়ে থাকে। কবি মতিউর রহমান মল্লিক ভাইও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। ইসলামীক সংস্কৃতির শেকড় গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে গিয়ে নিজের শরীরের খুব একটা যত্ন নিতে পারেন নি। নিজের শরীরের প্রতিও খেয়াল রাখতে পারেন নি। এমনকি পরিবারকেও যত্ন নেবার খুব একটা সুযোগ দেন নি। তিনি ছুটে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। তিনি গান লিখে গেছেন হাজারে হাজার। আর এইসব করতে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন। ভর্তি হন ইবনে সিনা হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালের বিছানাতে শুয়েও তিনি সংস্কৃতি বিস্তারে কাজ করে গেছেন। হাসপাতালের কেবিনেও তিনি শিল্পীদের নিয়ে মিটিং করেছেন। এইতো আমাদের প্রিয় কবি, জাতীয় চেতনার কবি মতিউর রহমান মল্লিক ভাই। তিনি সেই অসুস্থতা থেকে ফিরে আসতে পারেন নি। ২০১০ সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১২ আগস্ট মৃত্যু বরণ করেন। এইদিনে কবির দেহের মৃত্যু হলেও তাঁর রেখে যাওয়া হাজারো গানের মাঝে তিনি বেঁচে আছেন।

তাঁর অনবদ্য সৃস্টিগুলোর কিছু নমুনা। মৃত্যুকে ঘিরে তাঁর লেখা গান, ‘টিক/টিক/টিক, যে ঘড়িটা বাজে ঠিক ঠিক বাজে। কেউ কি জানে সেই ঘড়িটা লাগবে কয়দিন কাজে’। রাসূল (সঃ) এর প্রতি প্রেম নিবেদন করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ রাসূল আমার ভালোবাসা,রাসূল আমার আলো আশা। রাসূল আমার প্রেম বিরহের মূল আলোচনা। রাসূল আমার কাজে কর্মে অনুপ্রেরনা’।



কবি এমন জীবন যাপন করেছেন যার জন্য তাঁকে সার্থক বলা যায়। তাঁর চলে যাওয়াতে পুরো ভুবনটাই কেঁদেছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস মহান রব এই চেতনার কবিকে হাসি খুশিই রেখেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×