বাংলাদেশে বেশীরভাগ কাজের ক্ষেত্রেই কাউকে তেমন কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না!
যেমন, আপনি একটা ছবি বানালেন। ছবিটা অশ্লিল দৃশ্যে ভরা ফলে ছবিটা অনেক হিট হলো। মনে করেন এই ছবিটা বানিয়েছিলো জনাব ’হোসনে দালাল‘। তিনি একজন জনপ্রিয় ভিলেন। তার সহযোগী নায়কও একজন জনপ্রিয় নায়ক। নায়ক ’কবিরাজ ভান’। কবিরাজ ভান বলতেন, “অশ্লিল ছবি বর্জন করুন, সুস্থ ধারার ছবি দেখুন”। অথচ তিনি নিজেই অশ্লিল ছবিতে নায়কের অভিনয় করতেন। তিনিতো মরে গিয়ে বেঁচে যান, আর যারা বেঁচে থাকেন তাদেরকে কি জবাবদিহিতা করতে হয়েছে কোনোদিন?
আমাদের জলজল ভাই এখন মায়ের হাতে বেহেস্তের চাবি বানান। সেই ছবিও অনেকেই দেখেন। তিনি চাচ্চু সেজে বসে থাকেন। সেই চাচ্চুর পেছনের ইতিহাস ভুলি নাই! দেশীয় চলচিত্র তখন ধ্বংসের পথে যাচ্ছিলো। যারা কিনা দেশীয় চলচিত্রকে ধ্বংস করতে চাচ্ছিল শুধুমাত্র নিজেদের খায়েশ আর সস্তায় বস্তা ভরা হারাম টাকার জন্য তাদেরকেতো দেশের রাজপথে স্বাধীন ভাবেই ঘুরতে দেখি! তাদেরকে জবাবদিহিতা করতে হয় না! কেনো করতে হয় না! তাদের কি কোনো রেকর্ড নাই? তাদের সেইসমস্ত কুকর্মের রেকর্ড আছে এই দেশের বুকে, আমরা চাইলেই তা মুছে ফেলতে পারবো না!
সময়টা ১৯৯৬-২০০০। দেশীয় চলচিত্রের সবচেয়ে বেশী অবন্নোয়ন হয়েছিলো সেই সময়টাতে। আর দেশীয় চলচিত্র তার গৌরব আর ইতিহাস হারিয়েছে তখনই। টিনএজারদের কাছে বাংলা ছবিই মানে ”ছিঃ ছিঃ. . . .” এই ছিঃ ছিঃ শব্দটার জন্য যারা দায়ী তাদেরকে কারো কাছেই জবাবদিহিতা কোনোদিন করতে হয়নি! ভাববেন না এর সাথে সরকার জড়িত নয়। অবশ্যই সরকার জড়িত। সরকার কেনো সেইসব ক্ষমতাবান লোকদের ডাকেন না যারা সেন্সর বোর্ডে থাকেন! সরকার কেনো কোনো পদক্ষেপ নেন না! তোমরা বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক দেশ ভুলেও বলোনা! এদেশের সমস্ত ক্ষমতা থাকে সরকারের হাতে, জনগন শুধু নির্বাচনে অংশ নেয়। আমাদের ফখরুদ্দিন সরকারকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ। তাদের সময় থেকেই দেশীয় চলচিত্র কিছুটা তার আগের মহীমায় ফিরে আসার চেষ্টা করে।
ফারুকি ভাইকে নিয়ে কিছু বলিঃ
ফারুকির কয়েকটা নাটক দেখেছিলাম। তিনি অবশ্যই মেধাবীদের একজন। বাংলা ভাষায় আমরা যে তেছি, তেছো, তেছে, তেছেন ব্যাবহার করি তা তিনি খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে সংকার বিষয় হলো আমরা আগের দিনে চেষ্টা করতাম শুদ্ধ বাংলায় কথা বলার জন্য, আর এখন যারা একটু ভাবলেশহীন তারা সবজায়গাতেই খাইতেছি, পড়তেছি, যাইতেছি ব্যাবহার করেন। কেনোনো, নাটকেতো সবাই বলছে, স্টাররাই বলছে. . . তো আমিও তো বলতেছি. . .
ফারুকি ভাইয়ের মুক্তিযুদ্ধের উপর ভর করে গড়ে ওঠা ”স্পার্টাকাস‘ ৭১” ছবিটা দেখে একটু অবাকই হয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে গড়া এই ছবিতে ফারুকী কি ভুলে গেলেন ভাষা আন্দোলনের কথা? ফারুকী কি ভুলে গেলেন কেনো আমাদেরকে স্বাধীন হতে হলো? “উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা”। এটা কি আমরা মেনে নিয়েছিলাম? মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটা ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে ফারুকী কিভাবে উর্দু অথবা অন্য ভাষার গানকে নির্বাচিত করলো তা আমার মাথায় আসে না! ওনাকে কি সেন্সলেস মাথাওয়ালা বলে গালি দিবো?
“বাহির বলে দূরে থাকুক, ভেতর বলে আসুক না. .” টিনএজাররা এই লাইনটা নিয়ে অনেক মজা করার ক্ষমতা রাখে। খারাপভাবে নিলে গানের অর্থ খুব খারাপ ইঙ্গিত করতে পারে আর ভালোভাবে নিলে তো সত্যিই অসাধারণ প্রেমের গান। থার্ডপার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটা নিয়ে তেমন কোনো মন্তব্য করলাম না। তবে ফারুকী, সাবধান থেকো. . . টিন এজারদের দিয়ে ব্যাবসা করতে চাও? রাত বারোটার পরের জোকস্ গুলো একটা একটা করে নিজের ছবিতে তুলে ধরো। দেখো তোমার ছবি হিট। আর শুনে রেখো যদি পাশ্চাত্যের কমেডির মতো বাংলাদেশের ছবিতেও নোংরা কমেডি পরবর্তিতে দেখা যায় তবে কাকে দায়ী করা হবে বুঝে রেখো। আমি আশা রাখি একদিন সবাইকেই জবাবদিহিতা করতে হবে।
-----------------------------------------------------------
বছর চারেক আগেও তো আমি হিন্দি ছবি দেখতাম। কিন্তু তখন বা তার কিছু আগে ইন্ডিয়াতে শুরু হয়েছিলো কমেডির নামে নোংরামী। আমাদের দেশেও কি এটা শুরু হবে! মানুষ অনেক আশা নিয়ে বসে থাকে একটা ভালো ছবি দেখার জন্য। বিশেষ করে যারা নাটক নির্মান করেন তারা যখন ছবি নির্মানে হাত দেন তখন আমরা যারা হলে গিয়ে ছবি দেখি না তারা কিন্তু অধির আগ্রহে অপেক্ষা করি সে ছবিটা দেখার জন্য। অথচ. . .!
------------------------------------------------------------
আফসোস, যারা বদলে দেয় তাদেরকে জবাবদিহিতা করতে হয়না! যারা বদলে দেয় তাদেরকে কান ধরে উঠবস করতে হয় না! যারা বদলে দেয় তারা জানেও না যে তারা কি পরিবর্তন করতে যাচ্ছে! কিন্তু যারা মেধাবী তারা কেনো এমন কাজ করেন? টাকার জন্য? আরে টাকার জন্য কি সংস্কৃতি বিক্রি হয় রে বোকা!