সংস্কৃতি নিয়ে বানিজ্য করা যায়, কিন্তু ব্যাবসা করা কখনই ঠিক নয়। যে দেশের মানুষ তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড নিয়ে ব্যবসা করা শুরু করবে সে দেশ তার নিজস্ব সংস্কৃতি অবশ্যই হারাবে এবং সে দেশের নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডগুলো ক্রমেই আনুষ্ঠানিকতায় রূপ লাভ করবে। বিশেষ দিনগুলোতে সেইসব আনুষ্ঠাকিতায় আনন্দ মিছিল বের হবে। কতিপয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরাও তখন সেইসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিজেকে নিয়োজিত করবে এবং তারা এমন একটা ভাব করবে যে তারা কখনোই ভিন্ন দেশের সংস্কৃতিকে অনুসরণ করেন না এবং নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে তারা অনেক গর্ববোধ করেন।

উন্নয়নশীল দেশের সংস্কৃতি ক্রমেই হারিয়ে যায় এবং হারিয়ে যাওয়ার বেদনাগুলো বেশীরভাগ মানুষই খুব কম উপলব্ধি করেন। এই যে আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে অনেক ভালোবাসি, সত্যিই অনেক ভালোবাসি। কিন্তু এই আমরাই অনেকে ভুল করে ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখেও মতমাতানো হিমেশ অথবা মাইকেল জ্যাকসনের গান বাজাতে ভুল করি না! আমরা অনেকেই নিজস্ব সংস্কৃতির মধ্যে ভিন্ন দেশের সংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অনুপ্রবেশ ঘটাই। এতে আনন্দ পাওয়া যায় বেশী এবং এতে সাধারণ মানুষের অবদান থাকে বেশী। তবে এইসব সাধারণ মানুষকে অনুপ্রেরণার যোগান দেয় কতিপয় মাথাওয়ালা সেন্সলেস সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, যারা সংস্কৃতিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করে খুব মজা পান। এদের অনেককেই সংস্কৃতির উপর ভর করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় বলে অনেকেই সংস্কৃতি নিয়ে ব্যাবসা করা শুরু করেন। ব্যাবসায়িক চিন্তাভাবনা যখন সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বদের মধ্যে চলে আসে তখন তারা উন্নত দেশের সংস্কৃতির দিকে চোখ মেলে তাকান। কিভাবে কি করলে সংস্কৃতিকে অথবা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে ব্যাবহার করে ব্যাবসায় বেশী লাভবান হওয়া যায় তা তারা বোঝার চেষ্টা করে । এবং তারা অনেকেই সফলও হন, কেননা তারা যে মাথাওয়ালা, তবে সেন্সলেস মাথাওয়ালা! আমি তাদেরকেই সেন্সলেস মাথাওয়ালা বলতে চাইছি যারা সংস্কৃতিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন।

ভিন্ন দেশ বা উন্নত দেশের সংস্কৃতিকে অনুকরন বা অনুসরণ করার বিপক্ষে আমি নই, কিন্তু খারাপ লাগে সেই ব্যাপারগুলো দেখে যে আমরা উন্নত দেশের সংস্কৃতির খারাপ দিকগুলোকেই বেশী অনুকরন করি অথবা করার চেষ্টা করি। এই খারাপ দিকগুলোর অনুকরনের পেছনেও ব্যাবসায়িক ব্যাপার জড়িত। কেননা খারাপের প্রতি আগ্রহ অনেকেরই একটু বেশী থাকে। এই অনেকের দলটার বেশীরভাগেরই বয়স ১৭-২৫ বছর। তাই কতিপয় সংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব যখন তাদেরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করতে চায় তখন সত্যিই খুব খারাপ লাগে! সেন্সলেস মাথাওয়ালা!
----------------------------------------------------------------
বিঃ দ্রঃ সব সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে ব্যাবসায়িক চিন্তাভাবনা অবশ্যই থাকে না। আমাদের দেশের অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বই আছেন যারা সত্যিই দেশের সংস্কৃতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন এবং যাদের ভেতর ব্যাবসায়িক চিন্তাভাবনা অনেক কম। তবে তাদের সংখ্যা খুব বেশী নয়।