হিল স্টেশন বলতে যেমনটা বুঝায় মাউন্ট আবু ঠিক তেমনটা নয়। এখানে ঘুরে দেখার মত স্থান হাতে গোনা কয়েকটি যা এক দিনেই দেখে শেষ করা যায়। আমরাও তাই করলাম। সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়লাম। প্রথমে যাব গুরু শিখরে যা মাউন্ট আবুর সবচাইতে উচু পাহাড়। পাহাড়ী আকাঁবাকা রাস্তা ধরে চললাম গুরু শিখরের পথে।
গাড়ি পাহাড়ের নিচে গিয়ে থামল। এবার সিড়ি পেরিয়ে চূড়ায় উঠতে হবে। ঠিক মনে নেই তবে বেশ কিছু সংখ্যার সিড়ি পেরিয়ে তবেই পৌছালাম গুরু শিখরে।
চূড়ায় উঠে দেখি চারিদিকে ক্যাকটাসের ছড়াছড়ি। একসাথে এত ক্যাকটাস এই প্রথম দেখা।
গুরু শিখর থেকে রাজস্থানের অসাধারন ল্যান্ডস্কেপ দেখা যায়। অবসারভেটরী সমেত চারপাশটা দেখতে অসাধারন লাগে।
গুরু শিখরে কিছু মন্দির আছে। দলের বাকী সদস্যরা ওদিকেই এগোতে থাকল আর আমি একটু শপিং করলাম। কাউবয় হ্যাট কিনে নিলাম খুব সস্তায়।
গুরু শিখর ছাড়িয়ে ঘুরতে এলাম পিস্ পার্কে শান্তির সন্ধানে। পার্কে প্রবেশের আগে এক রাজস্থানী লেবাসওয়ালা ফল বিক্রেতার দেখা পেলাম। কাঁচা আম এবং তেতুল সাজিয়ে বসেছে সে।
পিস পার্কটা অনেকটাই বোটানিকাল গার্ডেনের মতই। আহামরি কিছুই নেই তাই ছবি তুলে ক্যামেরার ব্যাটারী ক্ষয় করলামনা আর। পিস পার্ক থেকে বেরিয়ে রাজস্থানী ল্যান্ডস্কেপ দেখতে দেখতে এগোতে লাগলাম ট্রেভরর্স ট্যাংকের দিকে।
বনের ভেতর কুমির ভর্তি একটি পুকুর। যেখানে রাতে বনের সব পশু যেমন হরিণ, ভাল্লুক, চিতা পানি পান করতে আসে। এটাই মূলতা ট্রেভরর্স ট্যাংক। গেট পেরিয়ে বনের সরু রাস্তা ধরে আমাদের এস.ইউ.ভি এগিয়ে চলল। রাত হলে নির্ঘাত বনের বাসিন্দাদের দেখা পেতাম কিন্তু দিনের বেলায় কাঠ ফাটানো রোদে তাদের দেখা মিললনা।
ট্রেভরর্স ট্যাংকে পৌছে বন সংরক্ষন বিষয়ক একটি সাইন বোর্ড চোখে পড়ল। লেখা গুলো ভালো লাগল আমার কাছে।
ট্যাংকে কুমিরের দেখা নেই। গরম থেকে বাঁচতে সব কোথায় যেন লুকিয়েছে। রাতে আসতে পারলে ভালো হত। কিন্তু অনুমতি মিলবেনা তাই এযাত্রায় কুমির দেখা হলনা।
ট্যাংকে ঘুরে বেড়ানো লাল মাছগুলোকে দেখে অন্তত কিছু একটা দেখলাম ভেবে শান্তি পেলাম।
ট্যাংক পেছনে ফেলে ট্রেক ধরে বনের ভিতরে এগিয়ে গেলাম। অবসারভেশন টাওয়ার, ভাল্লুকের প্রিয় ফলের গাছ, নানা রকম পাখি, ইত্যাদি দেখে ফিরে এলাম গাড়িতে।
দুপুরে গেস্ট হাউজে ফিরে বিশ্রাম নিয়ে বিকেরের দিকে চললাম সানসেট পয়েন্টে। পাহাড় শিখরে বসে সূর্যকে বিদায় জানাতে বেশ ভালোই আয়োজন দেখলাম সেখানে।
[img|https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/images/thumbs/SaifulAzim26007happy_1398066809_1-17.Sunset_Point.jpg
সূর্য বিদায় নিতে শুরু করল। রাজস্থানের দূর মরুর বুকে সে হারিয়ে গেল।
ওইদিন সূর্যাস্তের পর গেস্ট হাউজে ফিরে ভলিবল খেলেই বাকী সময় পার করলাম। পরদিন শপিং করে পার হল সময়।
একটা অসাধারন ড্রিংকসের সন্ধান পেলাম মাউন্ট আবুর জুস কর্ণারগুলোতে। আইস টি ফ্লেভারটির স্বাদ অতুলনীয় ছিল। এই ড্রিংকস আমি আর কোথাও পাইনি।
পরদিন দুপুরে গুজরাটি থালি দিয়ে মধ্যান্নভোজন সারলাম। মজার কথা এই যে সবকিছুতেই চিনি দিয়ে অদ্ভুত এক স্বাদ আনা হয়েছে থালির আইটেমগুলোতে। আনলিমিটেড তাই পেট পুরে খেলাম।
খাওয়ার পরে যথারীতি সফটি হাতে তুলে নিলাম। তবে ভরা পেটে দুইটার বেশী খাওয়া হলনা।
ফিরে যাওয়ার আগে দুপুরের রোদে ঝলমল নাক্কি লেক ঘুরে এলাম একবার।
নাক্কি লেকের পেছনে উটের মত দেখতে একটা পাথর যার নাম ক্যামেল রক দেখতে পেলাম। আমার কাছে উটের চাইতে বরং ডাইনোসরই মনে হল বেশী।
সমাপ্ত হল মাউন্ট আবু ট্যুর। ট্রেন পরের দিন রাতে। তাই পর দিন ট্রেনে উঠার আগে গুজরাটের কিছুটা ঘুরে এসেছিলাম। আগামী পর্বে গুজরাটের ভ্রমনলিপি নিয়ে আসব।
***পর্ব-৩
৬ দিনের ভ্রমনলিপি (দিল্লী-মাউন্ট আবু-গুজরাট-দিল্লী)-৩: মাউন্ট আবুতে
Click This Link
**পর্ব-২
৬ দিনের ভ্রমনলিপি (দিল্লী-মাউন্ট আবু-গুজরাট-দিল্লী)-২: রেল যাদুঘরে
Click This Link
*পর্ব-১
৬ দিনের ভ্রমনলিপি (দিল্লী-মাউন্ট আবু-গুজরাট-দিল্লী)-১: বিমান বাহিনী যাদুঘরে
Click This Link