বিমান বাহিনী যাদুঘর ভ্রমন শেষে অটো রিক্সা করে হাজির হলাম রেল যাদুঘরে। টিকেট কিনে প্রবেশ দুয়ার দিয়ে সামনে পা বাড়াতেই ছোট্ট একটি রেল ইন্জিন ও এক বিশালকায় চাকা আমায় স্বাগত জানাল।
সামনে এগোতেই গাইড ম্যাপ পেয়ে গেলাম। একবার তাতে চোখ বুলিয়ে সামনে এগোতেই রেলওয়েতে ব্যবহার করা কিছু জিনিষ ভর্তি আইল্যান্ড এবং সুভেন্যুর শপের দেখা পেলাম। শপ থেকে স্মৃতি স্বরূপ কয়েকটি চাবির রিং কিনলাম যাতে নানা রকম রেল ইন্জিনের রেপ্লিকা রয়েছে।
রেল যাদুঘরের দুটি অংশ। একটি ইনডোর এবং আরেকটি আউটডোর। প্রথমে ইনডোর অংশটিতে প্রবেশ করলাম। নানা রকম রেল বিষয়ক জিনিষ, মডেল চারিদিকে। তো শুরু করলাম ইন্জিন দিয়ে। প্রথমেই দেখে নিলাম প্রথম বাষ্পীয় রেল ইন্জিনের মডেল। কে জানত যে এই ছোট্ট ইন্জিন থেকে আমরা ক্রমান্বয়ে বুলেট ট্রেনে পৌছে যাব!
প্রথম রেল ইন্জিনের পর অনেকগুলো কয়লা চালিত ইন্জিন দেখলাম। কয়েকটি ইন্জিনে ক্রস সেকশন করে কিংবা ট্রান্সপারেন্ট করে মেকানিজমটি বুঝানো হয়েছে যা দেখার সাথে সাথে জানার আনন্দও দিয়ে যাচ্ছে অবিরত।
কয়লা চালিত ইন্জিনের পর তাকালাম আধুনিক ইন্জিনগুলোর মডেলের দিকে। ডিজেল চালিত, বিদ্যুত চালিত, ডিজেল-বিদ্যুত চালিত, ইত্যাদি নানা রকম বর্তমান সময়ের রেল ইন্জিন সাজানো এখানে।
ইন্জিন যাকে টেনে নিয়ে যায় সেই রেল বগি বা কোচ দেখার পালা এবার। আর সে এক বিশাল ব্যাপার। ব্রিটিশ পিরিয়ডের ডিলাক্স কোচ থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের এসি কোচ কি নেই এখানে! প্রতিটি কোচে সিট, ফ্যান, ইত্যাদি ডিটেলিং একদম সঠিকভাবে সাজানো। দেখে মনে হচ্ছে লিলিপুট রাজ্যের ট্রেন স্টেশনে চলে এসেছি।
কোচের পর অবধারিতভাবেই ওয়াগন বা মালগাড়ির কথা চলে আসে। সাধারন ওয়াগন থেকে শুরু করে তেলবাহী ওয়াগন এমনকি ওয়াগনবাহী ফেরী এবং রেল যাত্রী বাহী ফেরীর মডেল সবকিছুই উপস্থিত এখানে।
রেলওয়েতে ব্যবহার করা ক্রেন ও একটি পুরোনো ফায়ার ট্রাক দেখলাম যা মাল লোড-আন লোড, জরুরী পরিস্থিতি, কনস্ট্রাকশন, ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়।
মডেল ছাড়াও নানা রকম তৈযষপত্র, সাইন, যন্ত্রপাতি, ইত্যাদিরও দেখা মিলল ইনডোর অংশে।
মডেল ট্রেন সেট যা কিনা চলতে পারে এবং ক্যান্টিলিভার ব্রীজের রেপ্লিকা দেখেও খুব ভালো লাগল। তবে মডেলগুলো চললে আরো ভালো লাগত কিন্তু পেইন্টিং চলায় সেটা সম্ভব হয়নি এবার!
ইনডোর যাদুঘর থেকে বের হয়ে আইটডোরে পৌছালাম। এ যেন রেল ইন্জিনের মিলনমেলা। তবে প্রথম দেখাতে নজরে এল কিছু জীর্ন-শীর্ন পুরোনো ইন্জিন। এর একটাকে সেকশন করে বাষ্পীয় ইন্জিনের কার্য পদ্ধতির বাস্তব চিত্র দেখানো হয়েছে।
সব পুরোনো ইন্জিনের যে বেহাল দশা তা নয়, বেশ কয়েকটি ইন্জিনকে রং করে তার আগের রূপে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কয়েকটিতে রং এবং মেরামত চলছে।
বাষ্পীয় এবং কয়লা চালিত ইন্জিনের পর বর্তমান সময়ের দানবীয় ইনজিনগুলোর দিকে তাকালাম। সবগুলো যে দানবীয় তা নয়, কিছু নিরীহ, ভদ্র ইন্জিনেরও দেখা পেলাম। তবে শক্তিতে কেউ কারও থেকে কম নয়।
রেল ক্রেন গুলোকে দেখে ভাবলাম পুরোনো দিনে কত কিছুইনা তুলেছে এগুলো অনায়াসে। স্মৃতিতে পুরোনো ওয়স্টার্ন মুভির কিছু রেসকিউ সিন ফিরে এল যেখানে এমন কিছু হয়তবা দেখেছিলাম।
সবশেষে দেখা মিলল সচল টয় ট্রেনের যাতে চড়ে পুরো আউটডোরে চক্কর লাগানো যায় নিমিষেই। কিন্তু হাতে সময় নেই তাই ফিরে চললাম রেল স্টেশনে। ট্রেন যদিও রাতে কিন্তু ক্লান্তি দূর করতে হলে দারুন একটা মধ্যান্নভোজন আর একটু বিশ্রাম চাই। অতএব, যে পথে এসেছিলাম সে পথেই ফিরে চললাম।
রেলে চড়তে শুরু করৈছি সেই ছোট্টবেলা থেকে। কত স্মৃতিই না জড়িয়ে ট্রেন ভ্রমনের সাথে। দেশে, বিদেশে আজ পর্যন্ত যতবার ট্রেনে চেপেছি সেই সব যাত্রার রেপ্লিকা যেন আমায় ফিরিয়ে দিল রেল যাদুঘর।
*পর্ব-৩য়ে থাকবে মাউন্ট আবু যাওয়া এবং সেখানে পার করা প্রথম দিনের ভ্রমনলিপি।
**পর্ব-১
৬ দিনের ভ্রমনলিপি (দিল্লী-মাউন্ট আবু-গুজরাট-দিল্লী)-১: বিমান বাহিনী যাদুঘরে-
Click This Link