রাজন্থাননের মাউন্ট আবু-গুজারাটে ৬ দিনের ভ্রমন শুরু হয়েছিল ৯ তারিখ সকালে। ট্রেন ঠিক সময়ে দিল্লী পৌছায় দেরাদুন থেকে। রাজস্থানের ট্রেন রাত ৮টায় তাই সকাল ১১টায় পৌছানো মানেই অনেকটা সময় হাতে পাওয়া। পরিকল্পনা ছিল বিমান বাহিনী ও রেল যাদুঘর ঘুরে দেখার। তাই সময় নষ্ট না করে এক্সপ্রেস মেট্রোতে চড়ে বসলাম। সাধারন মেট্রো থেকে প্রায় ৫ গুন ভাড়া হলেও এক্সপ্রেস মেট্রো সাধারনের তুলসায় দ্রুত ও বিলাশবহুল। মাত্র ১৫ মিনিটেই প্রথম গন্তব্য বিমান বাহিনী যাদুঘরের কাছাকাছি মেট্রো স্টেশন ঢৌলা কৌনে পৌছে গেলাম। ওখান থেকে অটো রিক্সা নিয়ে যাদুঘরের সামনে গিয়ে নামলাম।
যাদুঘরে প্রবেশের পথে একটি সারফেস টু এয়ার মিশাইল আমায় স্বাগত জানাল। এস.এ.এম পেরিয়ে প্রবেশ পথে এন্ট্রি ফর্ম পূরন করে যাদুঘর দর্শন শুরু করলাম। এখানে ছবি তোলায় কোন বাধা নেই জেনে খুবই খুশী হলাম।
শুরুতেই নজরে এল মিগ-২৩ যুদ্ধ বিমানের কনসোল। দেখতে গেমিং কনসোল মনে হলেও এই সামান্য কনসোলটা কত কি ই না করে মাঝ আকাশে!
যাদুঘরটিতে অসংখ্য বিমানের স্কেল মডেল রয়েছে। যুদ্ধ বিমান, সাধারন বিমান, ইত্যাদি না রকমের বিমানের মডেল পুরো মিউসিয়াম জুড়ে। এখানে তারই কিছু ছবি দিলাম এক সাথে। এত ছবি এক এক করে আপলোড করাটা একটু সময় সাপেক্ষ বলেই চালাকিটা করলাম। আশা করছি পাঠকরা ক্ষমা করবেন। মডেল বিমানগুলোর বিস্তারিত লিখলামনা কারন এত মডেল ছিল ওখানে যে তার বিস্তারিত মনে রাখা অসম্ভব ছিল।
বিমানের মডেলের পাশাপাশি যাদুঘরে প্রাচীন ও আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, বিমান বাহিনীকে নিয়ে প্রকাশিত স্ট্যাম্প, যুদ্ধে নিহত ভারতীয় বিমান বাহিনীর বীরদের ছবি (নিচে যার ছবিটি দেখছেন তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাক বাহিনীর উপর আক্রমনের সময় লাল-মনিরহাট, বাংলাদেশে তার বিমান বিদ্ধস্ত হয় এবং তিনি নিহত হন), উপহার স্বরূপ পাওয়া ব্যাটল ট্যাংকের মডেল ইত্যাদি সাজানো রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য।
সময় হয়ে এল আসল বিমান দর্শনের। প্রথমেই দেখলাম প্রপেলর বিমানগুলো। এখানে প্রদর্শিত প্রায় সবগুলো প্রপেলর বিমানই হিন্দুস্তান এরোনটিকস্ লিমিটেড (হাল) মডিফাই করেছে নানা প্রয়োজনে।
যাদুঘরে মিগ সিরিজের ব্যাপকতা বেশ। মিগ-২১ এবং তার মডিফাইড ভার্সন, মিগ-২৫, এফ সিরিজের কিছু বিমান এবং কিছু ট্রান্সপোর্টার যাদুঘরের বাইরে ও ভেতরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
নানা রকম বিমানের ভীড়ে দেখলাম একটি ভারতীয় বিমানের ধ্বংসাবশেষ। জানতে পারলাম পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর আক্রমনের শিকার হয়ে বিমানটি পালাম বেসে (যেখানে যাদুঘরটি অবস্থিত) ল্যান্ডিং করবার সময় বিদ্ধস্ত হয়। পাইলট নিহত হন সেই দুৃর্ঘটনায়।
কামাকাজি!! দেখে বিশ্বাসই হচ্ছিলনা। ২য় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম আলোচিত সুইসাইডাল কোর্সের এই বিমানটি দেখে ডিসকভারী চ্যানেলে দেখা কামাকাজি ডকুমেন্টারিটির কথা মনে পড়ল। কি ভয়ংকরই না ছিল কামাকাজিরা!!
গ্লাইডার টাইপ একটা কিছু দেখলাম। ছোট্ট এই আকাশযানটি দেখতে সরল মনে হলেও চালানো মনে হয়না খুব একটা সরল।
হ্যাঙ্গারের বাইরে দুটো পুরোনো বিমান রাখা। ডান পাশেরটা দেখে অনেক পুরোনো মনে হল।
এত এত বিমানের ভীড়ে দুটো হেলিকপ্টার দেখতে পেয়ে ভালোই লাগল। দুটোই অনেক পুরোনো।
বিমান, কপ্টার, ইত্যাদি দেখাতো অনেক হল! এবার এদের শক্তির মূল দেখা যাক। পুরো যাদুঘর জুড়েই নানা রকম বোমা সাজিয়ে রাখা। পুরোনো আনগাইডেড বোমা, আধুনিক লেজার বোমা, রকেট, মিসাইল ইত্যাদি দেখতে দেখতে ভাবলাম ধ্বংস সাধনের কতইনা আয়োজন!
এখানে বিমানে ব্যবহার করা নানা রকম যন্ত্রপাতি যেমন এরিয়াল ক্যামেরা,জেট ইন্জিন, কমিউনিকেশন ডিভাইস ইত্যাদিও সাজানো রয়েছে।
কিভাবে বিমান আক্রমন করবে তার নানা রকম প্লান মডেল আকারে সাজানো দেখলাম যা পাইলট ট্রেনিংয়ে ব্যবহার করা হয়।
সবশেষে এক কোনে রাখা ভারতীয় বিমান ও সেনা বাহিনী কর্তৃক জব্দকৃত পাকিস্তানী ট্যাংক, সাজোয়া যান এবং বিদ্ধস্ত পাকিস্তানী বিমানের নানা অংশ দেখলাম। এমন কিছু যাদুঘরে দেখব ভাবিনি। যাই হোক, নতুন কিছু দেখালাম।
যাদুঘর দর্শন সমাপ্ত। ক্ষুধা-তৃষ্ণা দূর করতে যাদুঘর ক্যান্টিনে অবিশ্বাষ্য কম দামে পাওয়া প্যাটিস এবং কোকাকোলা হাতে তুলে নিলাম। প্যাটিসটির স্বাদ অমৃত ছিল।
প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী বিমান বাহিনী যাদুঘর দর্শন শেষে এবার গন্তব্য রেল যাদুঘর। যাওয়ার আগে এক দৌড়ে মিগ-২৫ বিমানটির সামনে গিয়ে ফটোসেশন করলাম। বিমানটির বোল্ড লুক আমার খুব ভালো লাগে।
বিদায় জানালাম যাদুঘরকে। সময়টা ভালোই কাটল এখানে। মুক্ত আকাশের যান্ত্রিক পাখির রহস্যদ্বার যেন উন্মুক্ত হল আজ!
*পর্ব-২তে রেল যাদুঘরের আদ্যোপান্ত থাকছে, সাথে অনেক ছবি.....
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:১৫