somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারীবাদ, মৌলবাদ, পুরুষতান্ত্রিক সমাজবাদ সবমিলিয়ে নারী অতি তুচ্ছ জাতি

১৪ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





নারীবাদ, মৌলবাদ, পুরুষতান্ত্রিক সমাজবাদ অমুকবাদ তমুকবাদ কম বেশি সবখানে সব মিলিয়ে নারীকে তার অবস্থান নিয়ে এই কথা ভাবতে বাধ্য করে যে তুমি নারী এবং তুমি স্বাভাবিক ভাবে ন্যূনতম সন্মান নিয়ে টিকে থাকতে চাইলে আমাদের সাহায্য নিতেই হবে তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ তুমি অতি তুচ্ছ জাতি।

একজন নারীকে বার বার তুমি নারী তুমি নারী স্মরণ করিয়ে দেয়ার অর্থ নারীকে হীনমন্য করা, আর এটাই হয়ে আসছে আমাদের সমাজে যুগ যুগ ধরে।

পরিবার থেকেই বোঝানো হয় কি দরকার লেখাপড়া করার বরং ভালো করে রান্নাটা শেখো,
শশুর শাশুড়ি স্বামীকে রান্না করে খাওয়াতে হবেনা? সে দায়িত্ব তো শুধু তোমার, এই তোমার জীবন কারন তুমি নারী। এর থেকে বেশি কোন শখ ইচ্ছা আহ্লাদ তুমি করতে পারবেনা। চাকরী বাকরি করার প্রয়োজন নেই ওসব করবার মত ব্রেন তোমাকে দেয়া হয়নি, তোমাকে তৈরি করা হয়েছে কেবল রান্না বান্নার জন্য, স্বপ্ন দেখার দরকার নেই, বাইরে যাওয়ার দরকার নেই, বাইরে নানা বিপদ কারন তুমি নারী, ঢাকো তোমার শরীর ঢাকো মুখমণ্ডল ঢেকে রাখো কারন তুমি নারী।

একদিন এক বোরখা পড়া মহিলাকে দেখলাম মুখের নেকাপ ঢাকা অবস্থায় বমি করছে, অনেক বলার পরও সে মুখের পর্দা সরায়নি কেননা সে নারী, মুখের নেকাব সরালে বেপর্দা হবেনা!
পর্দা শুধু মেয়েরা করবে, বউরা করবে, আর জামাইরা লাল শার্ট, নীল জিন্স, কালো সানগ্লাস পড়ে ফিটফাট বসে বসে মেয়েদের দেখবে তাতে কোন পাপ নেই।

ধর্ম সবার জন্যই তো সমান না কি?? কোন ধর্মেই বলা হয়নি তোমরা শুধু মেয়েদের বস্তায় বস্তায় কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে তোমরা হেয়ার জেল মেখে, ক্লিন সেভ করে, জিন্স, টি শার্ট পড়ে নায়ক সেজে মেয়েদের পাশে ঘুর ঘুর কর।

একদিন একটি সোশ্যাল সাইটে দেখলাম এক লোক মন্তব্য করেছে, “কচু পাতাও শাক মেয়েরাও মানুষ!’’ মেয়েদের চলতে ফিরতে পথে ঘাটে অফিসে আদালতে তুচ্ছ করে ছোট করে এমন হাজারো কথা হাজারো অঘটন ঘটছে ঘটেই চলছে, এই আধুনিক যুগেও কচু পাতার মতন নিম্নমানের মনে করে নারীদের।

রোজ পত্রিকা খুললেই দেখা যায় গৃহবধুর আত্মহত্যা, খুন, জখম, নির্যাতন ইত্যাদি হচ্ছেই।
যেন নারী জাতি এমনি এক জাতি যাদের সাথে যে কোন কিছু করা যায়, এরা যেন আসলে কোন মানুষের পর্যায়ে পড়েনা, এদের ইচ্ছে করলেই গায়ে হাত তোলা যায়, ব্যাঙ্গ করা যায়, এরা যুগে যুগে এসেছেই পৃথিবীতে ক্রীতদাস হয়ে।

একদিন সকালে বাসে করে অফিস যাচ্ছি, ইদানিং সিটিং বাসে গান শোনার ব্যবস্থা থাকে। বিশ্বরোড এসে এমন জ্যামে পড়লো বাস, বাসের ড্রাইভার তখন অত্যন্ত ভক্তি ভরে কোন একজন মাওলানার ওয়াজ চালু করে দিলো।
মাওলানা খুব দ্রুতই আল্লাহ্‌ রাসুল নামাজ থেকে বিষয় গিয়ে ঠেকালো নারী জাতিতে।
সে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ তারমতে বর্তমানের নারী জাতি এ এক অশ্লীল জাহান্নামী জাতি ওয়াক থু থু এই বয়ান দিয়ে সে বক্তব্য আরম্ভ করলো, বলার অপেক্ষা রাখেনা ওয়াজ মাহফিলে উপস্থিত লোকজনের ঘন ঘন উচ্ছ্বাসিত করতালিতে মাওলানার কণ্ঠস্বর ঢেকে যাচ্ছিলো, নারী জাতিকে অশ্লীল বলে ছোট করাতেই এক ধরনের কুৎসিত আনন্দ উপভোগ করে আমাদের সমাজের বিরাট সংখ্যক মানুষ।
কিন্তু নারীরা এর কোন প্রতিবাদ করতে পারবেনা। প্রতিবাদ করলে, পুরুষের হ্যাঁ তে হ্যাঁ না বললে, তুমি তনু হবে, তুমি রিশা হবে,, তুমি খাদিজার মত মাথায় কোপ খাবে।

এই হচ্ছে অতি তুচ্ছ নারী জাতির জীবন। মাওলানার বক্তব্যে ফিরে আসি সে প্রবল প্রতাপের সাথে বলতে থাকলো
নারী জাতি হইলো নরম জাতি কোমল জাতি মায়ের জাতি অথচ এই কোমল নরম শরীর নিয়া নারী মাঠে ঘাটে দৌড়াবে পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অফিস আদালতে কাজ করবে এটা কি ঠিক?? উপস্থিত জনগন একত্রে বলে উঠলো না কিছুতেই না, হুজুর বলল বলুন নাউজুবিল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!!!
নারীর শরীর হইলো তার স্বামীর জন্য, তার স্বামীর বাচ্চা ধারন করার জন্য, লালন পালন করে সন্তান বড় করার জন্য কিন্তু তা না করে আজকালের নারীরা কি করতেছে? হাদিসে আছে মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত, কিন্তু না!
আমি বলবো না,
আসলে স্বামীর পায়ের নীচে মেয়েলোকের বেহেশত।
স্বামীর যদি অসুখ হয় শরীরের কোন অংশ কেটে গিয়ে যদি আহত হয় অথবা ঘা হয় সে ঘা দিয়ে পুজ পড়ে তবে স্ত্রী যদি সে পুজ/ রক্ত জিভ দিয়ে চেটে পরিস্কার করে দেয় তবে তার বেহেশত নিশ্চিত।
আল্লাহ্‌ তায়ালা মহিলাদের জন্য কত সহজে বেহেশত যাওয়ার পথ করে দিয়েছেন দেখছেন??

মানুষের মন কতটা নীচ হলে এত কুৎসিত মন গড়া কথা বলতে পারে ধর্মের নামে!!
নারীদের নিয়ে কুৎসিত আলোচনাই যেন এক তৃপ্তিদায়ক বিনোদন।
কেন এত আধুনিক যুগে এসেও এই নীচ ছোট মন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে পারছেনা! কেন মানুষ হিসেবে সহানুভূতি কাজ করেনা!
স্বজাতির লিঙ্গ ভেদাভেদ কে কেন্দ্র করে এই যে যুগ যুগ ধরে নির্যাতন কেন! কেন! ধর্মের দোহাই দিয়ে মেয়েদের দাবিয়ে রাখা, পথ রোধ করা, কেন!
কেন বলতে হবে নারী নির্যাতন বন্ধ করুন কেন বলতে হবে আমরা শুধু নারী না মানুষ, একজন মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষ কে নির্যাতন বন্ধ করুন, কেন বলতে হবে?
এমন দিন কবে আসবে যেদিন নারীবাদ নারীসংঘ করতে হবেনা অধিকার আদায়ের জন্য।
কবে আসবে সেই দিন যেদিন নারীরা যে রক্ত মাংসের মানুষ তারও যে কিছু ইচ্ছে আছে চাওয়া পাওয়া আছে ভালোলাগা আছে সেটার উপর পরস্পর সবাই শ্রদ্ধাশীল হবে, স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৫৪
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×