সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর কপাল আগুনের মতন গরম দেখে বুঝলাম দুদিন আগের বৃষ্টির ছাট গায়ে লাগায় এই জ্বর পরিনতি। জ্বর মাথা ব্যথা এইগুলা আমার কাছে ব্যাপার না, কিন্তু অফিসে যাবার জন্য প্রস্তুতি হিসেবে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাবার উপক্রম হলে আম্মুর রুমের ড্রেসিং টেবিলে গেলাম তেল চুরি করে মাথায় দিতে।
তেল মাথায় চুরি করে দেবার কারন আমি ইহ জিন্দেগীতে খুব একটা ঠেকে না গেলে মাথায় তেল দেই না, অথবা মাথায় তেল তক্ষুনি দেই যখন আমি ভেতরে ভেতরে মরে যাইতেছি ধরনের অসুস্থতা বোধ করি, এবং ব্যাপারটা মা ভালো করেই জানেন, কাজেই মা কে কিছুতেই দেখতে দেয়া যাবেনা যে আমি মাথায় তেল দিতেছি।
কিন্তু সকাল হলেও তার রুমের দরজা জানলা বন্ধ এবং সে তার রুমে ডিম লাইট পর্যন্ত ব্যাবহার করেননা বলে, ঘুটঘুটা অন্ধকারে ড্রেসিং টেবিল থেকে তেল চুরি করে মাথায় দেবার জন্য, লাইট অন করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি এক খণ্ড বেহেশত যেন চোখ বন্ধ করে আছেন।
আমার আম্মু আমার কাছে বেহেশত। হয়তো সব সন্তানদের কাছেই তাই।
সে গভীর ঘুমে অচেতন বুঝতে পেরে আমি তেল চুরি করে মাথায় দেয়ার মতলব পরিবর্তন করে সেইখানে দাঁড়িয়েই মাথায় দিচ্ছি, তখনি পেছন থেকে তার কণ্ঠ ঝন ঝন করে আমার মনে আতংক ছড়িয়ে বেজে উঠলো, কিরে তোর শরীর খারাপ লাগতেছে? কি হইছে মা? আয় আমার কাছে আয়।
তার কাছে যাওয়া যাবেনা, গেলেই কপালে হাত দিয়া হাহাকার করে উঠবেন, অফিসে যেতেই হবে দুনিয়ার কাজের বোঝা সেইখানে আমার মাথায় উঠবার জন্য বসে আছে। কাজেই আমি তাকে ধমক দিয়া বললাম যে চিরুনি নিতে গিয়ে ভুলে তেল পড়ার উপক্রম হইছিল! কথায় কথায় অসুস্থ নাকি অসুস্থ নাকি!! এই রকম ঝ্যান ঝ্যান করে জবাব দিয়ে রুমে চলে এলাম, ধমক না দিয়ে ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করতে পারতাম অথচ!!সব সময় আমি এই করি।
আমার সেঝ চাচা সিঙ্গাপুর থাকে, ৩/৪ দিনের জন্য বছরে দুইবার দেশে আসে। একদিন তুচ্ছ এক কথা কাটাকাটির পর্যায়ে তার মুখের উপর আঙুল তুলে বলেছিলাম, আমি চাই আপনি আমার সাথে আর কথা না বলেন। সে সেইবার যাবার সময় আমার সামনে এলো টা।
পরের আরও দুইবার ট্রিপে দেশে এলো এবং কিঞ্চিত আমার সাথে দেখা করার আসায় বাসায় দুই দিন এসে বসেও রইলো, কিন্তু ফিরতে আমার দেরি হওয়ায় দেখা হলনা। তার মোবাইল থেকে কল দেয় রিসিভ করিনা, এইরকম চতুর্থ বার সে প্লেনে উঠবার শেষ মুহূর্তে এক অচেনা যাত্রীর নাম্বার থেকে কল দিলো, আমি ভাবলাম অফিসের কেউ, রিসিভ করার পর অপাশ থেকে খসখসে গলা, আমি যাচ্ছি, প্লেনে উঠতেছি, আজকাল কি তুই খুব বিজি থাকিস? তারপর চুপ, নিঃশব্দ কান্না। আমি একদম পাত্তা দেইনি, এই নিঃশব্দ কান্না মৃত্যুর কিছুদিন আগে আমার মেঝো আপু ও কল দিয়ে কেঁদেছিল সেদিন ও আমি ব্যাপারটা গুরুত্ব দেইনি।
মাঝে মাঝে আমি এত নিষ্ঠুর!
মাঝে মাঝে মনেহয় কারো ভালোবাসা পাওয়ারই যোগ্য আমি না,
মাঝে মাঝে ভালোবাসাটা অসম্ভব বোঝা লাগে।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়
মা আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করুক,
আশেপাশের সবাই অনেক রুড হয়ে যাক,
আমি অবহেলিত পাথর হয়ে পথের বাঁকে পড়ে থাকি।
পড়ে থাকতে থাকতে থাকতে
জীবনীশক্তি হারাই
তীব্র মৃত্যু যন্ত্রনায়।
তারপর সবাই ভুলে যাক।
কবরটা মিশে যাক মাটির সাথে।
তোমরা যারা পরিচিত অপরিচিত থাকবে,
আকাশ মাটি জনপদ দেখবে,
তাদের জন্য আমার পুরো জীবনের ভালোবাসা।
আমি কোন ছিটেফোটা ভালোবাসা চাই না।
কারো কাছ থেকে না।
ঊপসংহার:-
কমেন্ট পড়ে বুঝলাম আমার প্রিয় সহ ব্লগার গন আমায় রাগী এবং সেঝো চাচুর সাথে বুঝি এখনো ফাইটিং চলতেছে এটা ধরে বসে আছেন তাই উপসংহার অংশ যুক্ত করতে হলো, সেটা হচ্ছে গিয়ে চাচার সাথে রাগ করেছিলাম আমাকে না জানিয়ে আমার বিয়ে কোথাও প্রায় ঠিক করে ফেলেছিলেন, ছেলে আমি দেখিনাই কি করে জানিনা এই রকম জটিল অবস্থা তৈরী করেছিলো। যাই হোক আজ চাচা দেশে আসছেন কিছুক্ষন আগে দেখলাম উনি এয়ারপোর্ট সেই আপডেট দিয়েছেন, এবং এক মাস আগে থেকে আমার সিডিউল নিয়েছেন,ঢাকার বাইরে ফ্যামিলি ট্রিপে আমি যেন যাই। গতকাল তাদের সাথে যাবো confirm করেছি সেই থেকে চাচা নানা রকম ছেলে মানুষী করেই যাচ্ছেন, হাসছেন একে ওকে ফোন দিচ্ছেন।আই লাভ চাচা, মামা, বাবা, মা, ভাই বোন সব।
এয়ারপোর্টে আমার সেঝো চাচা,কিছুক্ষন আগে পাওয়া ছবি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:২৯