রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির ‘আত্মহত্যার’ করেছিলেন এক বছর আগে, শুরুর দিকে কেউ বুঝতেই পারেনি উনি আত্মহত্যা করেছেন, মশারির ভিতরে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন, পরবর্তীতে দেখা যায় উনি সুইসাইড-নোট লিখে মারা গিয়েছেন। সেখানে লেখা ছিল পারিপার্শ্বিক চাপে আমি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলাম, আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। ছবিতে দেখেছিলাম এক অসম্ভব রূপবতী এবং জ্ঞানী মানুষ, সে কিভাবে আত্মহত্যা করে কিছুতেই মাথায় এলো না!!
তার ফেসবুক প্রোফাইলে গেলাম ছেলের সাথে একটা ছবি প্রোফাইলে দেয়া এরপর profile ঘাঁটতে ঘাঁটতে এক আশ্চর্য তথ্য পেলাম, দেখলাম তার হাজবেন্ড তাকে ছেড়ে গিয়েছে, বিয়ে করেছে অন্য এক নারীকে, সেই প্রোফাইলে আনন্দ উৎসবের বিভিন্ন দিবসের ছবি, ছেলে আলাদা থাকে।
বোঝাই যাচ্ছে তার হাজবেন্ড এর স্বর্গীয় জীবন, আনন্দ অনুভূতি বোধ, দিনে দিনে একসময় সে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
এটাকে বলা যেতে পারে হত্যা, আমাদের সামাজিক জীবনে অবশ্যই এজন্য পুরুষ দায়ী, তারা বিয়ের পর স্ত্রীর সাথে এতই দুর্ব্যবহার করেন এবং যেন একান্ত তার কেনা গোলাম বা নাচের কাঠপুতুল।
সেই ধ্যান-ধারনা থেকেই মেয়েদের ট্রিট করেন কাজের বুয়া হিসেবে, তাতে সে যতই শিক্ষিত হোক, যতই প্রতিভাবান হোক।
কয়েকদিন আগে অভিনেত্রী তাজিন আহমেদের মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন লেখালেখি পড়ে তার জীবন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলাম, তার কাছের মানুষজন এমন situation করেছিল যে মরে যেতে বাধ্য হয়েছেন বা তাকে বাধ্য করেছেন।
তাজিন আহমেদ অবশ্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন তার প্রিয় স্বামীর মন পাবার,
যখন সে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলেন তখন পর্যন্ত তিনি তার পরিচিত ছোটভাইকে বলছিলেন তোর দুলাভাইকে ফোন কর, যদিও তার হাজবেন্ড তার জন্য তার মোবাইল থেকে তাজিন আহমেদ এর নাম্বার ব্লক করে রেখেছেন, তবু চেষ্টা করেছেন, তবু সে বাঁচতে চেয়েছেন।
আসলে বাচতে চাইলেও কাছের প্রিয় মানুষগুলোই বাঁচতে দেয় না, একটু ভালোবেসে কথা বললে, একটু সাহায্য করলে কি হয়? একটা মানুষ একটা মানুষের পাশে দাঁড়ালে কি এমন ক্ষতি!!
যাকে ভালোবেসে বিয়ে করে সংসার সাজাবে বলে প্রতিজ্ঞা করে! সময়ের সাথে সাথে সেই ওয়াদা ভুলে যাওয়া সেই মানুষটির প্রতি নিষ্ঠুরতা নয়! ?
মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, কাছের মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি ভালোবাসা,বাবা মার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, পরিবার-পরিজনের প্রতি ভালোবাসা, যেন একদম শূন্য হয়ে যাচ্ছে, সবাই শুধু আমি আমি আমি আমি!! শান্তি সুখের চাহিদার শেষ নেই অথচ কিশে যে সুখ তাও জানা নেই।
আজকাল কাউকে বলতে শুনা যায় না যে সে সুখী। নিজের সুখের জন্য ক্রমাগত অপরকে কষ্ট দিয়েই চলছে কিন্তু এটা বোঝেনা স্বার্থপরতার ভিতরে কোন সুখ নেই,
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মানবজমিন বইটিতে একটি অংশে তিনি লিখেছেন "একদিন স্বর্গ সমান উঁচু মহান এক পাহাড়ে উঠবো, উঠবো কিন্তু চূড়ায় পৌঁছাব না কোনোদিন।পাহাড়ের উপর উঠলে তাকে ছোট করে দেওয়া হয়, আমি পাহাড়ের চেয়ে উঁচু নই, আমি চাই পাহাড়ে উঠতে উঠতে একদিনে পাহাড়ের কোলে ঢলে পড়বো,
দুঃখ দৈনদশা থেকে বাঁচার জন্য ঠিক এমন করে কি ভাবা যায় না! জীবন মানে কি অনন্ত পথ চলা নয় জীবন মানেই কি শুধুই নিজের সুখ প্রিয়জনদের সুখই সুখ নয়?
এখন কেউ কারো দুঃখ ভাগ করে নেয় না, কেউ কাউকে সান্তনা দেয় না, একাকীত্ব এক একটি দুঃখী মানুষকে হতাশাগ্রস্থ মানুষকে গ্রাস করে ফেলে,
বোঝা উচিৎ বেঁচে থাকা মানেই সুখে থাকা নয়, বেঁচে থাকা মানে তো এটাও হতে পারে, অপরের জন্য বাঁচা, ক্ষয় হয়ে যাওয়া, আপনজনদের জন্য চেষ্টা করে যাওয়া, সবার জন্য সঠিক পথ খুঁজে বের করা। কাউকে তো এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে, সবশেষে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম আলোতে রবীন্দ্রনাথের ছোট বৌঠান কাদম্বরীর আত্মহত্যার সময়ের ভাবনাগুলো, "সত্যি হেথা হতে যাও পুরাতন, হেথায় নতুন খেলা আরম্ভ হয়েছে, নতুন খেলা শুরু হলে পুরাতনের স্থান কোথায়? তাকে সরে যেতেই হয়, কিন্তু নতুন-পুরাতন হয়।
প্রতিদিন প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাওয়া এবং যুদ্ধ করতে করতে হেরে যাওয়া সকলের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:১০