আমি দেখেছি যত কাটখোট্টা লোকই হোক, যত ধনবান লোক হোক অথবা রাস্তা ঘাঁটে ফেরি করা ফেরিওয়ালা, অচেনা পথচারী টোকাই, নিজেরে যে মেয়ে বিশ্ব সুন্দরী ভেবে মাটি থেকে দুই ইঞ্চি উঁচুতে হাটে সেও, যখন ক্যামেরার দিকে তাকায় কিংবা ছবি তুলবার জন্য পোজ দেয় তখন তার ভেতর কিংবা প্রত্যেকের ভেতর এই কাজ করে যে তাকে সুন্দর লাগুক, তাকে তার ভেতরের মানুষটা নিজেকে যেরকম দেখতে পছন্দ করে সেই রকম সুন্দর লাগুক।
এই রকম চিন্তা এই মেয়েটির মাথায় এসেছিলো কিনা এটাই আমার মাথায় ঘুরপাক খেয়ে হৃদয় ব্যাকুল হচ্ছে।
১৩ নভেম্বর, ১৯৮৫, নেভাদো ডেল রুয়েজ আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরনের কারনে নেমে আসে এক ভয়াবহ দুর্যোগ কলম্বিয়ার আর্মারো শহরে। পাইনোক্লেস্টিকের প্রবাহ অগ্ন্যুৎপাতিক mudflows এর ধ্বংসাবশেষ প্রবাহের ফলে ভয়ঙ্কর রকম ক্ষতি হয়। প্রতি সেকেন্ডে ৬ মিটার(২০ ফুট)উঁচু এই অগ্নুৎপাতের প্রবাহ আর্মারো শহরের বেশির ভাগ স্থানে ছড়িয়ে পড়ার ফলে শহরটির ২০,০০০ লোক মারা যায়; আরেকটি আগ্নেয়গিরির ধারা নিকটবর্তী চিনচিনেতে ১৮,০০ জনের জীবন শেষ করে দেয়।মোট ২৩,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিল এই ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডিতে।
ওমায়রা সানচেজ ছিল ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী যে আর্মেরোতে বসবাস করত যখন "নেভাদো ডেল রুয়েজ" বিস্ফোরিত হয় এবং হঠাত আগ্নেয়গিরি ওদের বাড়িটি ধ্বংস করে ফেলে, তখন ওর বাবা ও চাচী সাথে সাথেই মারা যায়।
কিন্তু অদ্ভুত ভাবে ওমায়রা বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়, কিন্তু রেসকিউ দল তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করলেও তারা নানান চেষ্টার পর বুঝতে পারে যে, ওমায়রার পা ওদের ধংসপ্রাপ্ত ঘরের ছাদে আটকা পড়েছে।
মেয়েটির কোমরের উপরিভাগ মুক্ত,
ওমায়রাকে উদ্ধারকারীরা বের করার চেষ্টা করে, কিন্তু প্রক্রিয়াটিতে তার পা না ভেঙে কাজটি অসম্ভব বলে মনে হয়। পরবর্তীতে উদ্ধার কর্মীরা তার শরীরের চারপাশে ডুবে না যাওয়ার জন্য টায়ার রাখে এবং উদ্ধারের ডাইভার্স কর্মীরা আবিষ্কার করেন যে ওমায়রার পা ইটের তৈরি একটি দরজার নীচে আটকে আছে এবং ওর চাচির শরীর ঠিক ওর পায়ের নিচে।
এক পর্যায়ে ওমায়রা সব উদ্ধার প্রক্রিয়া অসম্ভব অনুধাবন করে সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে বলে। যাতে উদ্ধার কর্মীরা বিশ্রাম করতে পারে এবং অন্যান্য আটকে পরা মানুষকে উদ্ধার করতে পারে।
ওর নিশ্চিত মৃত্যু হতে চলেছে জেনেও তুলনামূলকভাবে ওমায়রা ইতিবাচক ছিল: স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ওখানে কাজ করছে এমন একজন সাংবাদিক সান্টা মারিয়া খাবারের জন্য ওমায়রাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, সে সময় ও শুধু সোডা পান করেছিলো, এভাবে তিনদিন আটকে ছিল ওমায়রা তৃতীয় রাতে ও হ্যালুসিকিং শুরু করে বলেছিল যে স্কুলে দেরী করতে চায়নি এবং গণিত পরীক্ষা দিচ্ছে।
জীবনের শেষের দিকে ওমায়রার চোখ লাল হয়ে যায়, মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়, এবং হাত সাদা হয়ে গিয়েছিলো।
পরবর্তীতে উদ্ধার কর্মীরা ওকে বাঁচাতে চেষ্টা করে, ওর পা কংক্রিটের মত বাঁকানো হয় বের করে আনার জন্য কিন্তু তারা বুঝতে পারে পা ছিঁড়ে ফেলা ছাড়া ওকে মুক্ত করা অসম্ভব।
অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামের অভাবে ওকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়না, সর্বোপরি, সানচেজ ১৬ নভেম্বর আনুমানিক ১০:০৫ মিনিটে মৃত্যু বরন করে। ও প্রায় তিন রাত(প্রায় ৬0 ঘণ্টা) ভোগেন,
ফ্রাঙ্ক ফোরনিয়ার, একজন ফরাসি সাংবাদিক, ওমায়রা সানচেজের চূড়ান্ত সময়ে ওর এই ছবি তুলেছিল, "দ্য এজোনি অব ওমায়রা সানচেজ" নামে।
একটি সাক্ষাত্কারে সেই ফটো সাংবাদিক বলেন আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ এর তিন দিন পর আমি ভোরের দিকে আর্মারো শহরে যাই আমায় একজন কৃষক বলেন একটি মেয়ের সাহায্যের প্রয়োজন। তিনি আমাকে ওমায়রার কাছে নিয়ে গেলেন, আমি সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে দেখি এবং আমি সম্পূর্ণ আক্ষম ছিলাম তাকে সাহায্য করতে, সেই সময় তার ছবিটি তুলি।
যখন ছবিটি তুলছিলাম তখন এই ছোট্ট মেয়েটির সামনে সম্পূর্ণ অসহায় ছিলাম অথচ ওমায়রার সাহস ও মর্যাদা ছিল অসীম, যখন ও মৃত্যুর সম্মুখীন তখনি তুলেছিলাম ছবিটা।
ছবিটি ওমায়রার মৃত্যুর ছয় মাস পরে প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফোটোস অফ দ্য ইয়ার লাভ করে। ওমরার মুখ বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয়ে ওঠে। আজ, তিনি আর্মারো ট্র্যাজেডির প্রতীক হিসাবে রয়েছেন।
প্রয়োজনীয় লিঙ্কঃ
Omayra Sánchez
Picture power: Tragedy of Omayra Sanchez
Omayra haunts Armero 30 years on
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:০৬