somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“চিৎকার”

২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাতটা কিছুতেই কাটতে চাচ্ছেনা । কতক্ষণ আগে দেখলো বারোটা । এখন কেবল একটা । এক ঘন্টাও এমন দীর্ঘ সময় হয়! আজ রাতটাই রোশনি ঘুমাতে পারবে বলে মনে হয় না । কাল বিকেল পাঁচটায় হিমেলের সাথে ওর প্রথম দেখা হওয়ার কথা । দেখা হবে একটা কফি শপে । ঘন্টাখানেক আগেই ফোন দিয়ে কানফার্ম করেছে হিমেল । আয়োজন করে সাক্ষাতে এই প্রথম কারো সাথে একটা মনোরোম অনুভূতির ভাগাভাগি করতে চলেছে রোশনি । এভাবনাতেই তার হৃদপিণ্ডে রক্তের ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ । শিরা-ধমনিতে অবাধ্য গতি । কী করে ঘুমাবে রোশনি!

রোশনি ও হিমেলের প্রথম পরিচয়টা হয়েছে ফেসবুকে । শান্ত শান্ত চেহারায় হিমেলের প্রোফাইলের ছবিটা । বেশ আকর্ষণ আছে । About-এ, Studied at BBA তারপর একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির নাম । রোশনির প্রোফাইলে একটা বারবি ডলের ছবি । কিউট । রোশনি হয়তো জানে না এসব ডল-ফলের চেয়ে তার সৌন্দর্য আরো বেশি নিখুঁত । প্রথম ফ্রেন্ড রিকোএস্টটা হিমেলই পাঠিয়েছিল । রোশনি দেখলো এই ছেলেটা ও তার বান্ধবী ডিজনি মিউচুআল্ ফ্রেন্ড । সে হিমেলের রিকোএস্টটা একসেপ্ট করলো । হাই... হ্যালো... তারপর আরেকটু গভীরে... আরেকটু ব্যক্তিগত । বর্ণমালার পরিবর্তে ওরা এখন শব্দের বেশ ব্যবহার করে––মোবাইলে কথা বলে ।

রোশনি এইচ. এস. সি. সেকন্ড ইয়ারে । একমাত্র বড় ভাই ও আম্মু তার খুব কাছের বন্ধু । হেন বিষয় নেই যা ভাইয়া আর আম্মু জানে না । কোথাও হয়তো চামচিকা বা তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়েছে তা অন্তত ভাইয়াকে না বললে ঘুম আসবে না ওর । তবে হিমেলের বিষয়টা গোপন করে চলেছে রোশনি । ভাইয়া কিছুটা টের পেয়েছে কিন্তু রোশনিকে কিছুই বলছে না । ভাইয়া জানে, মানুষ বড় হতে থাকলে অনেক কিছু লুকাতে শিখে, লুকাতে হয় ।

রোশনিকে প্রায় সারাদিনই বাইরে বাইরে থাকতে হয় । ক্লাশ, প্রাইভেট, কোচিং––বেশ ব্যস্ততা ! কালকেও বিকেল পাঁচটায় কেমিস্ট্রি প্রাইভেট আছে । এই প্রাইভেটটা মিস দিয়েই হিমেলের সাথে দেখা করতে যাবে রোশনি । কেউ জানবে না ।

আজ রোশনি কলেজে গেলো না । আম্মুকে বলল, তেমন ইম্পরট্যান্ট ক্লাস নাই; বিকেলে কেমিস্ট্রি প্রাইভেট পড়তে গেলেই হবে । দুপুরের ঘুমের অজুহাতে বেডরুমের দরজা বন্ধ করে দুইটা থেকে সাজতে বসেছে রোশনি । একে একে তার সমস্থ ড্রেস পরে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে ট্রাইআল দিচ্ছে । অবশেষে একটা নীল ড্রেস পছন্দ করলো ও । ম্যাচ করে কানের দুল, ব্রেইসলিট, হাত-পায়ের নখে নেইল পলিশ; লোমহীন ধবধবে ডান পায়ে একটা পায়েল । একদম বাংলাদেশী ক্লিওপেট্রা ! এর আগেই কাজের ছেলেটাকে দিয়ে গোপনে একটা গোলাপ আনিয়ে রেখেছে । একটু খটকা লাগে রোশনির মনে, হিমেল কোন ফুল বেশি পছন্দ করে, গোলাপ নাকি অন্য কিছু । আহারে, এটা জিজ্ঞেস করা হয়নি ! রোশনি অবশ্য গল্পের বই পড়ে জেনেছে, প্রেমের সমার্থক হলো গোলাপ । ছেলেটা বেশকিছুদিন থেকেই ভালোবাসি ভালোবাসি বলে ঘ্যান-ঘ্যান করছে । আজ রোশনি এই ঘ্যান-ঘ্যানির অবসান ঘটাবে গোলাপ দিয়ে । ফেসবুকের ছবিগুলোতে হিমেলের আভিজাত্যই রোশনিকে এমন সাজতে উৎসাহ যুগিয়েছে । ছেলেটা কী দারুণ, কী অস্থির সব ছবি পোস্ট করে––আজ চকচকে কোন ফাস্টফুডে, কাল দানবীয় একটা মোটর বাইকের পিঠে বসে, পরশু প্রাডো গাড়ির স্টেয়ারিং-এ হাত দিয়ে নানা কিসিমের ছবি । এ যেনতেন ছেলে নয়; তাই যেনতেন সাজে যাওয়া ঠিক হবে না ।

ভ্যানিটি ব্যাগের এককোনায় গোলাপটা যত্নে রেখে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে ঘর থেকে বের হলো রোশনি । বুকের মধ্যে ভীষণ ধকধক । আম্মু যদি বলে বসে এত সেজেগুজে কই যাস ? না, আম্মু তেমন লক্ষ্য করলোনা, বেসিনে হাত ধুচ্ছিলো । আসি আম্মু বলেই খুব দ্রুত মেইন গেইট পার হলো রোশনি । পড়লে হাত-পা ভেঙ্গে যেতে পারতো !

রিক্সা নিয়ে কফি শপের দিকে রওনা দিলো রোশনি । ঠিকানাটা আগেই জেনে নিয়েছিলো হিমেলের কাছ থেকে । রিক্সা থেকে নামতেই এগিয়ে এলো হিমেল । ছবির চেয়েও হ্যান্ডসাম ছেলে । রোশনির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো । রোশনি ইতস্তত, বুকের মধ্যে কাঁপন । এত মানুষের ভিড়ে কী করে অন্য ছেলের হাত ছোঁয় । না দেখার ভান করলো । বলল, চলুন ভিতরে যাই । হিমেল তৎক্ষণাৎ তার হাতটা সরিয়ে নিলো, যেন সে হাত বাড়ায়নি । কফি শপটার ভিতরে গিয়ে খুব অবাক হলো রোশনি । ডিমলাইট জ্বলা অন্ধকার । তারা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই । রোশনির চোখে একটা আসন্ন ভয়–– আঁচ করতে পারলো হিমেল । বলল, তোমার জন্য এটা সারপ্রাইজ, লজ্জা পাবে তো তাই পুরোটাই দুই ঘণ্টার জন্য রিজার্ভ নিয়েছি । এবার রোশনির চোখে একটু স্বস্তির ভাব–– ছেলেটা আমার জন্য এত কিছু করেছে ! হিমেল একটা চেয়ার টেনে রোশনিকে বসতে দিলো । ছেলেটা বেশ ভদ্রতা জানে । তারা দুজনে মুখোমুখি বসলো । রোশনি ভাবছে গোলাপটা এখোনি দেবে কিনা । ইতোমধ্যেই হিমেল উঠে দাড়ালো, বলল, ওয়েট দুকাপ কফি নিয়ে আসি । মৃদু হেসে সম্মতি জানালো রোশনি । কফি খেতে খেতে বেশকয়েকবার আলতো করে রোশনির হাত ছুঁয়ে দিয়েছে হিমেল । প্রতিবারই রোশনির বুকের মধ্যে কেঁপে ওঠা অথচ ভালো লাগা কাজ করেছে । উফঃ কী রোমাঞ্চিত সুখ!

কিছুক্ষণ পরে দরজায় নক হলো । হিমেলের দুজন বন্ধু এসেছে । দাঁড়িয়ে সালাম দিলো রোশনি । সালামের উত্তর না দিয়েই ফ্রেঞ্চকাটিং দাড়িওলা নাদুসনুদুস ছেলেটি বলল, মামা, দারুণ মাল পটিয়েছিতো । গাঁজাখোর মত দেখতে আরেকজন বলল, যা করার তাড়াতাড়ি কর একঘন্টা সময় তো মাগনা মাগনা খেয়ে ফেলছোস । পরবর্তী ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে গেলো । ঘণ্টাখানেক ধরে এই তিনটা জীব... । রোশনির কানের দুল, পায়েল ছিড়ে কোথায় ছিটকে পড়েছে । আর রোশনির তীব্র চিৎকার কফি শপটার দেয়ালে আটকে গেছে; কংক্রিট আর কাচ ভেদ করে মানুষের কানে পৌঁছেনি ।

রোশনি অবসন্ন দেহে রিক্সায় ফিরতে ফিরতে ভাবে, মেয়েদের প্রথম ভালবাসা ভুল প্রেম হয় । এই ভুলই রোশনিকে আজ বিধ্বস্ত মনে বাসায় নিয়ে যাছে । দরজায় পা দিতেই আম্মু বলল, কিরে আজ মনে হচ্ছে একটু দেরি হলো । আর তোকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে । কিছু হয়েছে । না আম্মু কিছু হয়নি । রোশনি কাউকেই বলবে না, না আম্মুকে, না ভাইয়াকে, আজ তার কী হয়েছে? রোশনি আজ ঘরের দরজা বন্ধ করে সারা রাত কাঁদবে... ।


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×