somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইহুদি রাজার গণহত্যা ও আ’দ জাতির খোঁজে-৫ (আরব ডায়েরি-৫৫)

২০ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব

ঠিক কোন সময়ে হযরত হূদ (আঃ) আ’দ জাতির মাঝে আল্লাহর বানী প্রচার করেছিলেন তা সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে অনেকেই ধারনা করেন মোটামুটি হযরত সালেহ (আঃ) এর ২০০ বছর পূর্বে তিনি এসেছিলেন। কিছু প্রত্নত্ত্বাত্তিক নিদর্শনের কারনে অনুমান করা হয় সময়টা খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০-৬০০ সালের মাঝে হতে পারে।

আ’দ জাতি ইয়েমেনের হাদ্রামাওয়াত নামক প্রদেশে বসবাস করত। জায়গাটি ছিল বালি পাহাড়ে ভর্তি। বর্তমানে জায়গাটি ইয়েমেন, ওমান ও সৌদি আরবের কিছু অংশে পড়েছে। এ জায়গাটির বিশাল অংশই “রুব-আল-খালি’র” অংশ, যেখানে এখন কোন বসতি নেই, পানি ও গাছপালা নেই।

আ’দ জাতি ছিল হযরত নুহ (আঃ) এর বংশধর, পাশাপাশি সামূদ জাতির পূর্বপুরুষ। ব্যাবসায় ও বাণিজ্যের পথটিতে তাদের কর্তৃত্ত্ব ছিল। তারা ছিল দীর্ঘদেহী ও অনেক শক্তিশালী। অনেকের ধারনা মিশরের পিরামিডগুলো তাদেরই কোন গোত্র তৈরি করেছিল। সুতরাং প্রাচীন আরবের ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরালে অবধারিতভাবে ইয়েমেনের জাতিস্বত্তাগুলোর ভূমিকা নজর কাড়বে।

ওল্ডটেস্টামেন্টে হযরত হূদ (আঃ)কে ইবার নামে বর্ণনা করা হয়েছে। আ’দ জাতি প্রতিষ্ঠিত হয় আ’দের নামে। আ’দ ছিল হযরত নুহ (আঃ) এর ৪র্থ বংশধর।

নূহ (আঃ) > শ্যাম > ইরাম > উজ > আ’দ > খুলুদ > রায়া > আব্দুল্লাহ > হূদ (আঃ)

পবিত্র কোরআনে সর্বপ্রথম ইরাম নগরীর উল্ল্যেখ পাওয়া যায়, যা ছিল আ’দ জাতির রাজধানী। আল্লাহকে অমান্য করার কারনে এই শহর ধ্বংস হয়ে যায়। অনেকে ধারনা করেন “রুব-আল-খালি’র” মাঝেই এই শহরকে খুঁজে পাওয়া যাবে।

তুমি কি দেখো নি তোমার প্রতিপালক কি করেছিলেন আ'দ জাতির সাথে। ইরাম গোত্রের প্রতি যারা সুউচ্চ স্তম্ভের অধিকারী ছিল? যার সমতুল্য অন্য কোন নগরে সৃষ্টি করা হয়নি, এবং সামূদের সাথে? যারা উপত্যকার পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল? (সুরা ফাজরঃ ৬-৯)

৯০ দশকের প্রথমদিকে সারা পৃথিবীতে হইচই পড়ে যায়। নিকোলাস ক্লাপ নামের একজন ফিল্ম মেকার ও শখের প্রত্নতত্ত্ববিদ ওমানে ইরাম নগরী খুঁজে পেয়েছেন। যাকে অনেক আগেই T. E. Lawrence (''Lawrence of Arabia'') প্রথম নামকরন করেন The Atlantis of the Sands নামে। নাসা’র স্যাটেলাইটে উঠানো ছবি দেখে সে ধারনা আরও শক্ত হয়। কিন্তু ২০০২ সালের দিকে প্রমানিত হয় যে সেটা আসলে ইরাম নগরী ছিল না। সেটা ছিল একটি সাধারন প্রাচীন দূর্গের ধ্বংসাবশেষ। সেই থেকে এখনও নতুন উদ্যমে ইরাম নগরীকে খোঁজা হচ্ছে।




সাদ্দাদের বেহেশতঃ

আমরা সবাই সাদ্দাদের বেহেশতের কথা জানি। তার তৈরি এই বেহেশতের কথা জানা যায়, এ্যারাবিয়ান নাইটস এক হাজার এক রাত্রি (আলিফ লায়লা ওয়া লায়লা) বই থেকে। ২৭৭-২৭৯ রাত্রিতে সাদ্দাদের বেহেশতের কথা বর্ণিত আছে। যদিও সরাসরি সাদ্দাদের কথা কোরআন শরিফে নেই, তারপরও বেদুঈনদের মুখে মুখে চলে আসা কাহিনীতে জানা যায় হযরত হূদ (আঃ) এর সময়ে সাদ্দাদ আ’দ জাতির রাজা ছিল। উবর (ইরাম) ছিল তার রাজধানী। আল্লাহ’র অভিশাপে তার সাম্রাজ্যই ধ্বংস হয়ে যায়।

কোরাআনে সাদ্দাদের তৈরি বেহেশতের কিছু আভাষও পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন, “No city has been constructed like it.”

তুমি কি দেখো নি তোমার প্রতিপালক কি করেছিলেন আ'দ জাতির সাথে। ইরাম গোত্রের প্রতি যারা সুউচ্চ স্তম্ভের অধিকারী ছিল? যার সমতুল্য অন্য কোন নগরে সৃষ্টি করা হয়নি। (সুরা ফাজরঃ ৬-৮)

তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আমার আনুগত্য কর। ভয় কর তাকে যিনি তোমাদেরকে দিয়েছে সেই সমুদয় বস্তুসমূহ যা তোমরা জান। তোমাদেরকে দিয়েছেন চতুষ্পদ জন্তু ও সন্তান-সন্ততি। এবং উদ্যান (জান্নাত) ও ঝর্ণাধারা। (সুরা শুআ’রাঃ ১৩১-১৩৪)

কিংবদন্তি অনুসারে সাদ্দাদ যখন বেহেশতের মনি, মুক্তা ও অপরূপ সৌন্দর্য্য সম্পর্কে জানতে পারল, সে তেমন একটা বেহেশত বানাতে চাইল। সাদ্দাদ ২০ বছর ধরে সারা পৃথিবী থেকে সোনা, রুপা, মুক্তা, চুনি, পান্না সংগ্রহ করল। পরবর্তী ৩০ বছর সে শুধু নগরীর দেয়াল তৈরি করল। আরো ২০ বছর লাগলো প্রাসাদ, দূর্গ ও মন্দির তৈরি করতে। পরবর্তী ২০ বছরে পুরো শহর সাজানো হল। প্রবেশদ্বার ও স্তম্ভগুলো ছিল সুগন্ধী কাঠের তৈরি এবং তা লাল ও হলুদ চুনি, পান্নায় মোড়ানো ছিল। প্রাসাদগুলো ছিল দ্যুতিময়, চারপাশকে আলোকিত করে রেখেছিল। চারপাশের সবকিছুই দামী রত্নে সজ্জিত ছিল। আরো ছিল নয়নাভিরাম বাগান ও ঝর্ণা।


হযরত নূহ (আঃ) এর সময়ের বন্যার পর সবাই খোদাভীরু ছিল। আ'দ জাতিই প্রথম আল্লাহকে অস্বীকার করে ও মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়। তারা তাদের শক্তিমত্তার কারনে উদ্ধত ছিল। আল্লাহ হযরত হূদ (আঃ) কে তাদের মাঝে পাঠান । (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:৩০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×