somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইহুদি রাজার গণহত্যা ও আ’দ জাতির খোঁজে-২ (আরব ডায়েরি-৫২)

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১ম পর্ব

Light at the end of the tunnel

পথে যেতে যেতে আশেপাশের পাহাড়গুলো দেখছিলাম। পাহাড়গুলোর মাঝেও কেমন যেন একটা সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। কিছু কিছু পাহাড় লাল বর্ণ ধারন করেছে। রাস্তা করার জন্য পাহাড় কাটা হয়েছে, সেই কাটা অংশে লাল রংয়ের বিচ্ছুরণ। আমি একটা পাহাড় দেখে অবাক হলাম – সারা পাহাড় জুড়ে ছোট ছোট একই সাইজের ধুসর রং এর পাথর। মনে হচ্ছিল পাহাড়ের সাথে কোন ভাবে আটকে আছে। কিন্তু কাছে গিয়ে ভুল ভাঙ্গল, এগুলো একধরনের গাছ। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পাথর।

লাল রং

পাথর নাকি গাছ?

শাকিলা হঠাৎ করে বলল, ‘দেখ দেখ, কাছিম’। আমরা তাকিয়ে দেখলাম সত্যি ছোট পাহাড়টা দেখতে ঠিক কাছিমের মতোই। পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ক্ষুধা লেগে গিয়েছিল। আমরা একটা পার্কে থামলাম। সাথে সকালের খাবার নিয়ে এসেছি। শাকিলা খিচুরি রান্না করেছে, সূধা এনেছে ডিম ভাজি। সবাই তৃপ্তির সাথে নাস্তা করলাম। পার্কে দেখলাম ৩ জন ইন্ডিয়ান কাজ করছে। আমরা বাকী খাবারগুলো তাদের দিয়ে রওনা দিলাম।

সকালের নাস্তা হল খিচুরি দিয়ে

আমরা কেউই নাজরানের পথ চিনিনা। এমনকি ড্রাইভারও কখনো সেদিকে যায়নি। আমরা রাস্তার পাশের সাইনবোর্ড আর মোবাইল সেটে গুগুল ম্যাপ দেখে দেখে যাচ্ছি। আমি কিছু জায়গার ম্যাপ প্রিন্ট করে নিয়েছিলাম। আমারা প্রথম যাব নাজরান বাঁধ দেখতে।

আমাদের ড্রাইভার কিছুটা সরলসোজা টাইপের। সামনে দুটো রাস্তা দেখে একদম পুলিশ চেকপোস্টে গিয়ে পুলিশের কাছে রাস্তার হদিস জানতে চাইল। পুলিশ এমন সুযোগ ছাড়বে কেন? পুলিশ আমাদের গাড়ী একপাশে দাঁড় করাতে বলল। কোথা থেকে এসেছি, কোথায় যাচ্ছি সব ধরনের কিচ্ছা কাহিনী জানতে চাইল। পুলিশটি আমাদের আইডি কার্ডও দেখতে চাইল। আমরা ড্রাইভারের নির্বুদ্ধিতায় অবাক হলাম। পুলিশ মানেই ঝামেলা! সাঈদ আমাদের আইডি কার্ড নিয়ে পুলিশের কাছে গেল। দেখলাম পুলিশ আমাদের তথ্য লিখে রাখছে। নাজরান শিয়া প্রধান এলাকা। প্রায়ই সেখানে আন্দোলন হয়। পরে জানলাম, পুলিশ আমাদের নিরাপত্তার জন্যই তথ্য নিয়েছে। পুলিশ আমাদেরকে নাজরান বাঁধের রাস্তা দেখিয়ে দিল।

৭৩ মিটার উচু নাজরান বাঁধ সৌদি আরবের সর্ব বৃহৎ বাঁধ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারনে এটা এ এলাকার একটি অন্যতম টুরিস্ট স্পট। এই বাঁধ ৩০০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট পানি ধরে রাখতে পারে। এটা তৈরিতে প্রায় ৭৭২ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল লেগেছিল।

আমরা হঠাৎ করেই এক অন্ধকার টানেলে পৌছে গেলাম। পাহাড়ের ভেতর দিয়ে তৈরি এই সুরঙ্গপথে কোন আলোর ব্যবস্থা নেই, গাড়ীর হেডলাইট একমাত্র ভরসা। তবে পথের শেষ প্রান্তে একটি উজ্জ্বল আলোর আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। একেই বোধয় বলে light at the end of the tunnel। সুরঙ্গপথটি মনে হয় ১ কিমি’র বেশী। সুরঙ্গের দেয়াল অমসৃণ, কিন্তু রাস্তাটি পিচঢালা। মনে হচ্ছিল আদিম যুগের কোন গুহায় ঢুকেছি। কিছুক্ষণ পর আমাদের সামনের সূর্যের আলো উজ্জ্বলতর হয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দিল। অন্ধকার থেকে হঠাৎ করেই একরাশ সাদা আলো। বলে বুঝানো যাবে না, এ এক স্বর্গীয় অনুভুতি।

আলোচ্ছটা-– ছবি ইন্টারনেট হতে।

টানেলে থেকে বের হয়ে মনে হয়েছিল এই সৌন্দর্য্য আমার ভেতরে এক আশ্চার্য্যরকম সুখানুভুতির সৃষ্টি করেছে। এই সুখানুভুতি দ্বিগুন হয়ে গেল যখন আমারা মিনিট খানেকের মাঝেই আরেকটি টানেলে ঢুকলাম। এই সুরঙ্গপথটি আগেরটির চেয়ে ছোট। কিন্তু শেষপ্রান্তে আগের মতোই সাদা আলোর বিচ্ছুরণ ঘটল। সবারই আমার মতো অবস্থা- আনন্দে বিহবল।

দূর থেকে বাঁধটি দেখতে পেলাম। বিশাল বাঁধ। আর্মিরা এর দেখাশোনা করে। ইয়েমেন বর্ডার খুব কাছে বিধায় এখানে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয়। পুরো এলাকায় কোন মোবাইলফোন নেটওয়ার্কের সিগন্যাল পেলামনা।ওয়্যারলেস সিগন্যাল বন্ধ রাখা আছে, যাতে কেউ কোন স্যাবটাজ করতে না পারে।

কিন্তু বাঁধটি দেখে আশাহত হলাম। বাঁধ নাহয় আছে, কিন্তু পানি কোথায়? অল্প একচিলতে পানি নীচে দেখা যাচ্ছিল। আমাদের দেশের বাড়ির পাশের ডোবায়ও এর চেয়ে বেশী পানি থাকে। আসলে বৃষ্টি হলে এখানে প্রচুর পানি জমে, পাহাড়গুলো একেকটি ঝর্ণা হয়ে যায়। পানির দেখা না পেলেও বাঁধের আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হতেই হল।



নাজরান বাঁধ



বাঁধের উপরে

বাঁধের মুখেই একটি ছোট রুম। আমরা গাড়ী থামালাম। রুমে এক সৈনিক টিভি দেখছিল, চিকন আর হাড়জিরজিরে শরীর। মনে হয় এখনি বুঝি তার ট্রাউজার খুলে যাবে। সে আমাদেরকে তেমন কিছু বলল না। আমরা পায়ে হেটে বাঁধের উপর উঠে গেলাম। অনেক ছবি তুললাম। বাঁধের অপরপাশটা একেবারে বন্য। ছোট একটা বন, পাশেই বিশাল মাঠ। একপাল বেবুনকে দেখলাম দৌড়ে বেড়াচ্ছে। ২/৩ টা উট একাকী দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ আর্তচিৎকার। অনেক নীচ থেকে কোন পশুর ডাক ভেসে আসছে। অবাক হলাম এত দূরে থেকেও আমরা কিভাবে শব্দ শুনতে পারছি। তাকিয়ে দেখি গাধা ডাকছে, তারা অনেক জোরে শব্দ করতে পারে। আমার ক্যামারার ১৮x জুম, এত উপর থেকেও ভালো কিছু ছবি পেলাম। গাধা পরিবারটি ডাকতে ডাকতে বনের ভেতর চলে গেল।



বাঁধের অপরপাশ ও বেবুন



গাধা পরিবার

উপর হতে প্রাকৃতিক বন

আমরা বেশ কিছুক্ষণ ওখানে থাকি। তারপর রওনা হই ‘আল ওখদুদ’ এর পথে, যেখানে ইহুদী রাজা গণহত্যা চালিয়েছিল।
সাথে রয়ে যায় স্বর্গীয় আলোর ইন্দ্রজাল।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৩
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×