somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানসিক রোগ : অবসেসিভ-কমপালসিভ নিউরোসিস

১২ ই মে, ২০০৯ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সুমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। একদিন হঠাৎ প্রশ্ন এল তার মাথায় - মানুষের জন্যে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে, না, পৃথিবীর জন্যে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে? সে বুঝতে পারল, এ প্রশ্ন একেবারেই নিরর্থক। কিন্তু চিন্তাটা আর মন থেকে যায় না। সে বাড়িতেই হোক, ক্লাসেই হোক, খেলার মাঠেই হোক, চিন্তাটা তাকে রেহাই দিচ্ছে না কিছুতেই। সুমনের ক্ষেত্রে যা হচ্ছে, তা অবসেসিভ নিউরোসিস। অবসেসন এক রকম চিন্তা, ধারণা অথবা কল্পনা যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও রোগীর মনে অনবরত আসে।
নিতাই দাশ নামে এক স্কুল শিক্ষক প্রায় এক মাইল দূরে স্কুলে যেতেন একই পথে পায়ে হেঁটে। মজ্জাগত একটি অভ্যাসের ফলে প্রতিদিনই বাড়ির একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে স্কুলের একটি নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত পা গুণে গুণে হেঁটে স্কুলে আসতেন। কোনো দিন মাঝ রাস্তায় এসে যদি ভুলে যেতেন কত হাঁটা হয়েছে, তাহলে ফিরে গিয়ে বাড়ির সেই নির্দিষ্ট জায়গা থেকে আবার হাঁটা শুরু করতেন। এভাবে গুণে গুণে হাঁটার যে কোনো দরকার নেই, তা তিনি জানতেন । তবুও এটা না করে তিনি পারতেন না। নিতাই দাশের ক্ষেত্রে যা হচ্ছে, তা কমপালসিভ নিউরোসিস। কমপালসন একটা কাজ যা রোগীকে বারে বারে করে যেতে হয়, অথচ সে এ কাজ করতে চায় না।
অবসেসন এবং কমপালসন একই রোগীর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, অথবা একই সঙ্গে একই সময়ে থাকতে পারে। এজন্যেই এ দুটিকে একসঙ্গে মিলিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে - আবসেসিভ-কমপালসিভ নিউরোসিস।

একজন ২২/২৩ ব্যসের যুবকের হঠাৎ মনে হলো, যদি তার বাঁ দিক দিয়ে কোনো গাড়ি চলে যায়, তাহলেই মারা যাবে তার বাব। সে ভালোভাবেই জানে বাঁ দিক দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সাথে তর বাবার মৃত্যুর সম্পর্ক থাকতে পারে না। কিন্তু বুঝেও কিছু হচ্ছে না। তাই তাকে এমনভাবে রাস্তায় চলতে হয় যেন কোন গাড়ি তার বাঁ দিকে যেতে না পারে। এভাবে পথ চলতে গিয়ে তার কত যে কষ্ট।
কারো কারো এমন হয় যে, কোনো একটা কাজ করলেন বটে, কিন্তু করবার পরেই মনে হয়, বোধ হয় ঠিকমত করা হয়নি কাজটা। যদিও তিনি জানেন, ঠিকই করেছেন। তারপরেও বারে বারে দেখেন কাজটা, দেখতে বাধ্য হয়। যেমন, আলমারীটা বন্ধ করে তালাটা লাগিয়েছেন ঠিকই - তবুও বারে বারে টেনে দেখতে হবে ঠিকমত লাগানো হয়েছে কিনা। এভাবে এরোগের আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে যা এখনে আর উল্লেখ করলাম না।
উৎকন্ঠা উদ্দীপক আবসেসিভ চিন্তার প্রশমন ঘটতে পারে এমন কোনো কাজ যখন রোগী আবিষ্কার করে, তখন ঐ কাজটি বারবার ঘটিয়ে ঐ উৎকন্ঠাকে প্রশমিত রাখাবার চেষ্টা চলে। এর ফলে ঐ কাজটি অভ্যাসে পরিণত হয়। এইভাবে কমপালসিভ লক্ষণের সৃস্টি হয়। এন্টিডিপ্রেসিভ ওষুধ প্রয়োগে এরোগে সুফল পাওয়া যায়। মনোচিকিৎসা সময় সাপেক্ষ বটে, কিন্তু উপকার দেয় যথেষ্ট। আচরণপরিবর্তনকারী চিকিৎসা প্রয়োগেও যথেষ্ট সুফল পাওয়া যায়।

পুরানো পোস্ট:
১। মানসিক রোগের কারণ
২। মানসিক রোগের পূর্ব লক্ষণ
৩। মানসিক রোগের উপসর্গ
৪। মানসিক রোগের অন্যান্য উপসর্গ
৫। মানসিক সুস্থ লোককে কিভাবে চেনা যায়
৬। মানসিক রোগের শ্রেণীবিভাগ
৭। অবাস্তব ভয় বা ফোবিয়া
৮। অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধ
৯। ব্যক্তিত্বের বিকার
১০। বিষন্নতা ও ম্যানিয়া
১১। টেনশন বা মানসিক চাপ
তথ্যসুত্র:
মানসিক রোগ অজানা অধ্যায় - ডাঃ সজল আশরাফ
মনের সুখ-অসুখ - ডঃ শিবেন সাহা
ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০০৯ রাত ১০:২৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×