somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলিম জাতির গর্ব, বিখ্যাত সমরনায়ক, মহাবীর সাহাবী হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“খালিদ আল্লাহর তরবারীর মধ্য হতে একটি তরবারী”- নবীজীর এই ঘোষনাই প্রতিফলিত হয়েছে তার ইসলামিক জীবনে। মুতার যুদ্ধে পতনোন্মুখ মুসলিম সেনাবাহিনীকে অপূর্ব কৌশল আর বীরত্ত্বে সমরাঙ্গন থেকে বের করে আনেন তিনি। নবীজী সন্তুষ্ট সেই ঘোষনা করেছিলেন। সেই থেকে তার উপাধি “খালিদ সাইফুল্লাহ”।

ইসলাম গ্রহনের পরেই মূলত তার ইতিহাস শুরু হয়। ইসলামের কারনে যেসব মহান সাহাবী জগদ্বিখ্যাত হয়েছিলেন, খালিদ তাদেরই একজন। তাই তো দেখা যায়, ইসলামের গ্রহনের পরে ইসলামের পথে বহু-সংখ্যক যুদ্ধ (জেহাদে) নেতৃত্ত্ব দিয়েছেন, কিন্তু একটিতেও পরাজিত হন নি। খলিফাতুর রাসুল হযরত আবু বক্বর রাঃ-ও তাকে মুসলিম বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নির্বাচিত করেছিলেন। তিনি খালিদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন। খালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে কেউ একবার অনুযোগ করলে খলিফা বলেছিলেন, “দেখো, খালিদ আল্লাহর তরবারী, আল্লাহ তাকে কাফেরদের বিরুদ্ধে কোষমুক্ত করেছেন”।

কখোন খলিফা বলতেন, “হায়, আজিকার মহিলারা কি খালিদের মত সন্তান প্রসব করা ভুলে গেল?”

ইসলাম গ্রহনের পরে জীবনের প্রায় অধিকাংশ সময়ই জেহাদের ময়দানে কাটিয়ে দিয়েছেন এই মহান সাহাবী। আরবের অভ্যন্তরে ভন্ড-নবীদের দমন, ইরাক জয় করে পারস্য জয়ের রাস্তা উন্মোচন ও ইয়ারমুকে রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয় হযরত খালিদ রাঃ এর হাত ধরেই। মাত্র ১ বছরের মধ্যে প্রায় ১২ টী যুদ্ধে টানা জয়ী হয়ে সমগ্র ইরাকের দক্ষনাঞ্চল (ইরাক-আরব) জয় করেন।

মহাবীর হযরত খালিদ রাঃ এর বিজয়াভিজানের প্রচার এতই হয়েছিল যে, বিভিন্ন এলাকার কাফের-মুশ্রিকেরা তার নাম শুনলে আতকে উঠতো। কাউকে বা কোন অবাধ্য গোত্র-কে দমন করার জন্য খলিফা যদি এতটুকু সংবাদ পাঠাতেন-“আমি খালিদ-কে পাঠাচ্ছি”, তাতেই অনেকে ভড়কে যেত। যেমন, ভন্ড নবী তোলায়হা-আল-আসাদীকে দমন করার জন্য খালিদ রাঃকে যখন বনু-আসাদ গোত্রের দিকে প্রেরন করা হয়, তখন সে সংবাদ শুনেই বনু আসাদ গোত্র নিজেদের ধ্বংস বুঝতে পারে ও অনেকে যুদ্ধের আশা ত্যাগ করে।

তেমনি, কোন সেনাপতি একবার খালিদের মুখোমুখি হলে ২য়বার আর তার সামনে পরতে চাইতেন না। ইরাক অভিযানের সময়, এরকম এক শত্রু-সেনাপতি খালেদের আগমনে সংবাদে যুদ্ধ ত্যাগ করে সন্ধি করে নেন।

খালেদ রাঃ ছিলেন তাদের অন্তর্গত, যারা জীবনের চেয়ে মৃত্যুকে বেশি ভালবাসতেন, বিছানার চেয়ে যুদ্ধের (আল্লাহর রাস্তায়) ময়দানই ছিল যাদের নিকট অধিক প্রিয়। জীবন ও জেহাদ সমার্থক ছিল তাদের কাছে। যুদ্ধ তাদের স্বাভাবিক জীবনের ব্যত্যয় ঘটাতে পারত না। জেহাদের ময়দানে তার সাথিরা বলতেন, “খালিদ ঘুমের মধ্যেও শত্রুর গতিবিধি টের পেতেন। ঘুমের মধ্যেও তিনি পরবর্তী দিনের ময়দানের ছক ও রণ-কৌশল কষে ফেলতেন”।

খালিদের নেতৃত্ত্বে যুদ্ধে সৈন্য-ক্ষয় কম হোত। কারন, তিনি শুধুই একজন মহাবীর ছিলেন না, ছিলেন অসাধারন ও অপূর্ব রণ-কৌশল ও সমরনীতির অধিকারী। প্রতিটি জেহাদে অবস্থা অনুযায়ী তিনি প্রায়ই নতুন ও অভিনব সমর-কৌশল নির্ধারন করতেন, ফলে ন্যূনতম সৈন্যক্ষয়ে বিশাল বিশাল জয় অর্জন করতেন।

এটাও ঠিক, তার সাথে ছিলেন মহান সাহাবা রাঃ গণের এক বিশাল মকবুল জামাত। যারা ঈমানে তেজোদীপ্ত ও মরনের জন্য থাকতেন তৈয়ার। তাদের উপরে অনেক কঠিন সময়ে এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য, যে সাহায্য ঈমানদারদের জন্য নির্ধারিত।

হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ রাঃ যুদ্ধের আগে ইসলামের চিরন্তন নীতি অনুযায়ী কাফেরদের ইসলামের দাওয়াত দিতেন। তাদের কাছে পত্র লিখতেন, যেখানে উল্লেখ করতেন, “আমার সাথে এমন এক বাহিনী আছে, যারা মৃত্যুকে এমন ভালবাসে, যেমন তোমরা জীবন-কে ভালবাস”। ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী খালেদ রাঃ অসহায় শিশু-নারী-পুরুষ ও কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করতেন না।

দিনে দিনে শত্রু-বাহিনীর মধ্যে খালিদ-আতঙ্ক ও মুসলিম বাহিনীর মধ্যে খালিদ-নির্ভরতা বাড়তে লাগল। কিন্তু, নির্ভরতা থাকবে শুধু আল্লাহর উপরে। এজন্য হযরত ওমর রাঃ তাকে প্রধান সেনাপতি থেকে বরখাস্ত করলেন। খালিদ রাঃ তা সহাস্যবদনে মেনে নিলেন। দেখা গেল, তারপরেও ইসলামের জয়যাত্রা থেমে থাকল না।

আজ-ও মুসলিম জাতি একজন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ-কে খুজে ফিরছে।

“খালেদ, খালেদ, কীর্তি তোমার ভুলি নাই মোরা কিছু,
তুমি নাই তাই ইসলাম আজ হটিতেছে শুধু পিছু” (নজরুল)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×