somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার নির্বাসনঃ সেন্ট্রাল এয়ার ফোর্স মিউজিয়াম পর্ব - ২

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাসুদ রানা, বি সি আই এর প্রবাদ পুরুষ!! চিরযুবা এক দুর্ধর্ষ মহানায়ক। সোভিয়েত প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করে উড়িয়ে নিয়ে চলেছেন ওদেরই তৈরি এক অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান! মিগ-৩১।(চারিদিকে শত্রু দ্রষ্টব্য) শব্দের তিন গুন বেগে উড়তে সক্ষম। থট গাইডেড উইপন সিস্টেম দিয়ে ঘায়েল করছেন শত্রুকে। বুকে অদম্য সাহস!
রীতিমত শিহরণ জাগাত একসময় কাজীদার তৈরি এই মহাপুরুষ। কাজীদার বর্ণনায় এত নিখুত মন ছবি তৈরি হত যে, অনেকটাই বাস্তব হয়ে উঠত সব চরিত্রগুলো। সেন্ট্রাল এয়ার ফোর্স মিউজিয়ামে এসে তাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম কখন দেখা মিলবে আমার কৈশোরে স্বপ্নে দেখা সেই মিগ-৩১।


মিগের সারিতে অবশ্য সব শেষে ছিল সেটি।
Mikoyan-and-Gurevich Design Bureau রাশিয়ার যুদ্ধবিমানের নকশার জন্যে বিখ্যাত।এদেরি সংক্ষিপ্ত নাম হচ্ছে মিগ। মিগ সিরিজ আর রাশিয়ান বিমান বাহিনী এক সময় সমার্থক ছিল। বর্তমানে অন্যান্য নকশাকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে এক করে এর নাম হয়েছে United Aircraft Corporation।
১৯৪১ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠান যুদ্ধবিমান নকশা করে আসছে। এদের সফল কয়েকটি নকশা যেগুলো বেশ সুনাম কুড়িয়েছে বিশ্বব্যাপি সেগুলো হচ্ছে মিগ -১৫, মিগ-১৯, মিগ – ২১, মিগ -২৩, মিগ-২৯, আর মিগ -৩১। এরপর অবশ্য মিগ -৩৫ নিয়ে গবেষণা চলছে এখনও।
সব গুলো মিগ সারি করে রাখা পাশাপাশি। কত ইতিহাসের সাক্ষী। শুরু করা যাক মিগ – ১৫ দিয়ে।
মিগ-১৫


দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হয়েছে! রাশিয়ায় স্তালিনের যুগ চলছে। স্তালিন কিছুতেই পশ্চিমাদের চেয়ে রাশানদের পেছনে দেখতে পছন্দ করতেন না। জার্মান নকশা নকল করে তৈরি হল মিগ ৯। কিন্তু রাশান নকশাবিদরা এতে থেমে থাকলেন না। একের পর এক উন্নতি আসতে লাগল বিমানের খোলোসে। কিন্তু ইঞ্জিন তার সাথে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছিল না। স্তালিনের Aviation মন্ত্রী স্তালিন কে প্রস্তাব দিল, ব্রিটিশদের কাছ থেকে উন্নত মানের রোলস রয়েস ইঞ্জিন কেনার। স্তালিন রসিকতা করে বললেন; “কোন সে গর্ধভ নিজের গোপন জিনিস বিক্রি করবে?( "What fool will sell us his secrets?"। তবে সত্যি সত্যি ইঞ্জিনের ব্যপারে জানতে একটি দল পাঠালেন ব্রিটেনে।
তা গর্ধভ ব্রিটিশটি ছিলেন তৎকালীন বানিজ্য মন্ত্রী স্ট্যানফোর্ড ক্রিপ! বেচারার খুব বিলিয়ার্ড খেলার নেশা ছিল এবং ব্রিটিশদের স্বভাবজাত নাক উঁচু ভাব।কোন এক দুর্বল মুহুর্তে তিনি বাজি ধরলেন; তিনি যদি হেরে যান তবে Rolls-Royce Nene ইঞ্জিনটি তুলে দেবেন রাশানদের কাছে। বিলিয়ার্ড এর বাজিতে হেরে গেলেন তিনি। স্তালিনের হাতে তুলে দিলেন এমন এক প্রযুক্তি যেটি আগামী চার বছরের মাথায় তাদের মাথার উপরে ছড়ি ঘোড়াবে উত্তর কোরিয়ার আকাশে।
১৯৫০ সালে যখন তুঙ্গে উঠেছে দুই কোরিয়ার যুদ্ধ; আমেরিকানরা মনের আনন্দে বোম ফেলে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়ার উপর। তাদের ঠেকাবার মত কেউ নেই তখন। হটাত করেই রাশানরা তাদের মিগ -১৫ দিয়ে দিল চাইনিজদের হাতে আর সাথে অভিজ্ঞ পাইলট ছদ্মবেশে মিগ -১৫ এর ককপিটে। রাশানদের এই নতুন বিমানের হাতে বিশাল মার খেল আমেরিকানরা।
১২ এপ্রিল ১৯৫১ ইতিহাসে পরিচিত হল “ব্ল্যাক থার্সডে” নামে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেদিনের আক্রমণের দুর্লভ ছবি।



এই দিন ১৫ টি মিগ-১৫ আমেরিকানদের ফাইটার প্রোটেকশন ব্যর্থ করে ঘায়েল করল ১০ টি B-29 Superfortress bomber বিমান। ফাইটার প্রোটেকশনে ছিল ১০০ এর উপর বিমান!চায়না আর উত্তর কোরিয়া সীমান্তের নাম হল “মিগ এল্যী”!


আমেরিকানদের মাথায় বাজ পড়ল। তিন সপ্তাহ বন্ধ থাকল আমেরিকানদের সব আক্রমণ। মিগ-১৫ সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। এর কাছাকাছি ছিল আমেরিকান স্যবর-৮৬। আমেরিকানরা সেটি নিয়ে আসল যুদ্ধের ময়দানে। শুরু হল সেয়ানে সেয়ানে লড়াই।


সবাই বুঝল এই যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়। তাই শান্তি চুক্তি হল। দুই পক্ষই দাবী করল তাদের বিমান সেরা ছিল। আমেরিকানদের দাবি ছিল তারা ৭৯২ টি মিগ-১৫ ধ্বংস করেছে আর রাশিয়ানরা দাবী করল তারা ৬৫০ টি স্যবর ধ্বংস করেছে।
তালগাছ ওদের কাছেই থাক! আমি খুশি সেই বিখ্যাত মিগ-১৫ চর্ম চক্ষু দিয়ে দেখতে পেরে।



মিগ ১৫ দিয়ে রাশানদের সোজা ডানার বিমান থেকে পেছনে বাঁকান ডানার বিমান বানান শুরু। এতে ছিল তিনটি মেশিনগান। যার একটির ক্যলিবার ছিল ৩৭ মিমি! বাকি দুটি ২৩ মি মি। ৫০০০০ ফিট উঁচুতে উড়তে পারত এটি! যেটা সেই সময়ে অবিশ্বাস্য ব্যপার ছিল।

রাশানরা আদর করে এর নাম দিয়েছিল “ফ্লাইং সোলজার”। কথিত আছে, মিগ-১৫ তার পাইলটকে নিজের শেষ সামর্থ দিয়ে ঘাঁটিতে পৌঁছে দিত।

কোরিয়ান যুদ্ধের পর তোড়জোড়ে শুরু হল মিগ কে আরও উন্নত করার কাজ।
আগামী পর্বে সেগুলো নিয়ে আরও লিখব আশা করছি.।.।.।।

মিগ -১৫ নিয়ে আরও জানতে আগ্রহী হলে নিচের ভিডিওটি দেখুন




চলবে

আগের পর্ব এইখানে

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:১৭
১৫টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×