somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা ভাষায় বর্ণ কমানোর বিষয়ে ভাবনা

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বর্তমানে বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত বর্ণ সংখা ৫০ টি ( ৎ ংঃঁ সহ ) । এর মধ্যে প্রায় সমার্থক ও সম উচ্চারণ সম্পন্ন শব্দ গুলি নিম্ম রূপ :
১) ই , ঈ = ২ টি
২) উ ঊ = ২ টি
৩) গ ঘ= ২ টি
৪) জ ঝ য = ৩ টি
৫) ড ঢ = ২ টি
৬) দ ধ = ২ টি
৭) ন ণ = ২ টি
৮) ব ভ = ২ টি
৯) শ ষ স = ৩ টি
১০) র ড় ঢ় = ৩ টি
মোট = ২৩ টি

প্রায় সমার্থক ও সম উচ্চাণ মূলক শব্দ সংখা দেখা যায় ২৩ টি, এই সমার্থক সম উচ্চাণ মূলক শব্দ গুলিকে কমিয়ে একটি বর্ণে রুপান্তর করে সহজেই ১৩ বর্ণ কমানো যায় । এর ফলে বাংলা ভাষায় বর্ণ সংখ্যা কমে ৩৭ টি হতে পারে । বাংলা ভাষার বর্ণ সংখা কমানো গেলে এর লিখন ও টাইপিং গতি ধারণাতীত ভাবে বৃদ্ধি পাবে । ছাত্র ছাত্রীগনসহ দেশের অগনিত জনতা মুক্তি পাবে বানান ভুলের অভিশাপ থেকে ।

বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত অপরাপর শব্দের বর্ণ থেকে শ্রোতা বা পাঠক ঠিকই বুজে নিতে পারবে বক্তব্যের বিষয় বস্তু কিংবা বক্তার মনের ভাব । এজন্য় শব্দে সমার্থক বর্ণ প্রয়োগই অধিক গুরুত্বপুর্ণ , যেমন পাখী কে পাখি লিখলে ঠিকই বুজা যায় যে এটা দিয়ে পাখীই বুঝানো হয়েছে । কবি গুরু রবিদ্রনাথ ঠাকুর তার খাচার পাখি কবিতায় পাখী কে পাখি লিখেছেন । ভাবার্থ বুজতে কারো কোন অসুবিধা হয়না ।
ইংরেজী ভাষায় but , put , last ,lust , push bush , এরকম অনেক শব্দেই একই বর্ণ ব্যবহার করে বিভিন্ন রকম উচ্চারণ বা অর্থ বুঝানো হয়ে থাকে । ফলে মাত্র ২৬ টি বর্ণমালা নিয়ে ইংরেজী এখন বিশ্বের অ্ন্যতম সেরা ভাষা । বাক্যের মধ্যে শব্দের প্রয়োগ অনুযায়ী বিভিন্ন অর্থ বুজানোর জন্য একই বর্ণ প্রয়োগ করা হয় সফল ভাবে ।

ভাষা একটি সতত পরিবর্তনশীল বিষয় । যে ভাষা যত গ্রহণ ও বর্জন করতে পারে সে ভাষা ততই সমৃদ্ধ ও উন্নত হয় । সংস্কৃত ভাষা একসময় খুবই উন্নত ও সমৃদ্ধ ছিল , কিন্ত রক্ষশীল এই ভাষাটি কিছু গ্রহণ করেনি এবং বর্জনও করেনি । ফলে কালের প্রবাহে এ ভাষাটি আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে । তবে আশার কথা আমাদের বাংলা সহজেই গ্রহণ ও বর্জন করতে পারে। যেমন ঌ ( লি ) বর্ণটির ব্যবহার একেবারেই উঠে গেছে বলা যায় । তাই বাংলা ভাষার আরো সমৃদ্ধির জন্য, আমাদের ভাষার বর্ণ উন্নয়নের বিষয়ে ভাষা বিজ্ঞানিদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করি । ভাষার নতুন নতুন বর্ণ এমনি এমনি মাটি ফোড়ে বেরিয়ে আসেনি, কালের প্রবাহে প্রয়োজনের তাগিদে যেমনি ভাবে বর্ণমালার উৎপত্তি হয়েছে তেমনিভাবে একটি বর্ণের সাথে আর একটি বর্ণ মিলে মিষে আর একটি সুন্দর ও বহুমাত্রিক উচ্চারণ ক্ষমতার অধিকারী বর্ণ হিসাবে আবির্ভুত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় ।

আমার প্রস্তাবনাটি শুধুমাত্র একটি ধারণা পত্র । তবে কাজটি খুব সহজ নয় । প্রথমত রক্ষনশীলতা, সর্বোপরি উচ্চারণ ও ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে জটিলতা ।
তবে এটা ইচ্ছা করলেই কাটিয়ে উঠা যায় ।
যেমন কিছুদিন পুর্বে ঢাকা থেকে বাসে করে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় বাসের ভিতর দেয়ালে নিম্মে বর্ণিত বাক্য ভুল বর্ণ ব্যবহার লক্ষ করেছিলাম :
বদ্র ব্যবহারে ভংশের পরিচয় , যা আসলে হবে ‘ভদ্র ব্যবহারে বংশের পরিচয়’ ।
ভুল বর্ণ ব্যবহার কিংবা বর্ণ পরিবর্তনের পরেও কিন্তু এর মর্মার্থ বুজতে কারো কোন অসুবিধা হয়নি । যদিও এটা বর্তমান প্রচলিত বর্ণ প্রয়োগ প্রেক্ষিতে কটু ও সুশ্রবনীয় ছিলনা । তথাপি শব্দের মধ্যে বর্ণের এরূপ ভুল প্রয়োগে আমার কিংবা অপরাপর যাত্রীদের ব্যবহারে কোন পরিবর্তন হয়নি । বাস চালক অথবা হেলপারের সাথেও কেও অভদ্র আচরণ করেন নি । একটি কথাই বার বার মনে হয়েছে শব্দের মধ্যে বর্ণটিই বড় কথা নয় ভাবটিই বড় কথা । তাই মনে হলো বাংলা ভাষা থেকে কিছু সমার্থক ও সম উচ্চারণ সম্পন্ন শব্দাবলী কমিয়ে বর্ণ সংখ্যা সহজেই কমানো যায় । বাংলা সাহিত্যের লিখন , পঠন ও সাধারণ প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এখন থেকেই এর পরীক্ষামূলক একট প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে ।

এখানে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো বর্ণ যাই থাকুক না কেন , উচ্চারণ যেমনই হোক না কেন বাক্যটির মর্মবাণি শ্রুতা ঠিকই বুজে নিবেন দীঘ্র দিনের শুনার, বলার ও দেখার অভ্যাস সহ বাক্যটির মধ্যে ব্যবহৃত সহ- শব্দের অন্তরনিহীত সহজাত অর্থ থেকে ।
ভাষা হলো একের মনের ভাব অপরের কাছে প্রকাশ করার মাধ্যম । মোট কথা মনের ভাব অপরের নিকট প্রকাশ করতে পারাটাই আসল লক্ষ্য । পাখি কিচির মিচির করে নীজের মনের ভাব সগোত্রিওদের জনান দেয় , এবং সেমত আচরণ করে , তাদের কোন ব্যকরনের ধার ধারতে হয়না , তবে হয়তা তাদের ভাষার একটি ব্যকরণ আছে যা আমাদের ভাষার ব্যকরণ থেকেও হয়তবা অনেক বেশী উন্নত এবং আমরা তা জানিনা । যাহোক মায়ের পেটের ভাষা কিংবা যুগের পর যুগ, শতাব্দির পর শতাব্দি থেকে শুনে আসা সমার্থক ও সগোত্রিয় উচ্চারিত শব্দের সঠিক অর্থ বুজতে খুব বেশী একটি বেগ পেতে হয়না । জানা শব্দের মোটামুটি কাছাকাছি উচ্চারণ শুনা গেলে এবং উচ্চারিত বাক্যটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি ধারনা জম্মে গেলে শব্দে বাবহৃত বর্ণ খুব বেশী একটি প্রভাব ফেলেনা । কুমিল্লা থেকে ‘ঢাকায় বাসে এসেছেন’ না লিখে কেও যদি ‘ঢাকায় ভাষে এছেছেন’ লিখে তাহলে এটা সহজেই মনে হবেনা যে তিনি কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পানিতে ভাষতে ভাষতে এসেছেন । প্রাথমিক ভাবে একটু বিভ্রান্ত হলেও তার সাথে পুর্বের কথোপকথন এবং বক্তার পরবর্তী কোন বাক্য় থেকেই ভ্রান্তি দুর হয়ে যাবে । এমনি ভাবে বাক্যে ব্যবহৃত শব্দে অন্তর্ভুক্ত বর্ণ থেকেও সঠিক উচ্চারণ ও অর্থ বুঝা যাবে । যেমন ইংরেজী শব্দ but put থেকে বুঝা যায় । b p দুটিই consonant , নিয়ম অনুযায়ী উচ্চারণ হওয়া উচিত বাট পাট কিন্তু তা হচ্ছেনা, বাক্যে শব্দ প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এবং conventional উচ্চারণ বিধি থাকার কারণে । তাই চলার পথে বাসে বসে এটাকে বাস , বাছ, বাশ, বাষ ভাস, ভাষ, ভাশ, ভাছ যা কিছুই বলিনা কেন এটাকে সকলই বাস বলেই ধরে নিবে । লিখার বেলাতেও তাই হবে । তবে বর্ণ কমানো এবং একে সকলের কাছে বোধগম্য ও গ্রহণযোগ্য় করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হবে ।

যাহোক, এ বিষয়ে পাঠককুলের সুচিন্তিত গঠনমূলক মতামত বাংলা ভাষার বর্ণমালা উন্নয়নে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখবে বলে আশা করা যায় ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩৭
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×