somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ কারাগার-অনিয়ম (পর্ব -তিন )- কারা দূর্নীতির স্তর

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ কারাগার-অনিয়ম (পর্ব -দুই ) পড়তে এখানে অথবা এটি নিউজ বিডি এর এখানে ক্লিক করুন
কারা দূর্নীতির খাত বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা যায় প্রথমত হলো দু’টিস্তরের লোক কারা দূর্নীতিতে জড়িতঃ- (ক) কারা কর্তৃপক্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী। (খ) কয়েদী বন্দি ও হাজতী বন্দি।কারা কর্তৃপক্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা কর্মচারী কারা দূর্নীতির সাথে জড়িত। তাদের দূর্নীতির ক্ষেত্র কারাগারের চার দেয়ালের সর্বত্রই বিরাজমান। সকল কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবৈধ অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হলো বন্দিরা। বন্দিদের জন্য বরাদ্দকৃত সকল কিছু হতে আত্নসাৎ সহ বন্দিদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে তারা অবৈধ অর্থ আদায় করে থাকেন। যেমন খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসার জন্য যা কিছু বন্দিদের জন্য বরাদ্দ আছে তার ২৫% শতাংশই কারা দূর্নীতির গ্রাসের ছোবলে হারিয়ে যায়। এছাড়াও রয়েছে কাজ পাশ দেয়া না দেয়া, এমডিতে কাজ করা, কারা ওয়ার্ড পাশ দেয়া, কারা কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দূর্নীতিতে সম্পৃক্ত রয়েছে। এসবের বিশদ বিবরণ এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কারা দূর্নীতির দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে কয়েদী বন্দিগন; বিশেষ করে কনভিক্ট ওভার শিয়ার যাদের প্রত্যেকেই ইনচার্জ পাহারা, সেই সাথে রয়েছে পাহারা রাইটার সহ বিভিন্ন ধরনের ফালতু ও দালালরা। এই কয়েদীরা প্রশাসনের সাথে একটি গভীর সম্পর্ক তৈরি করে নিয়েছে বহুকাল যাবৎ। এই সমস্ত কয়েদী বন্দিরা কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভিন্ন অপকর্মের সহযোগী হয়ে কাজ করেন বিধায় সেই সুবাদে নিজেরাও হয়ে উঠেছে এক একটা হায়না। এদের অত্যাচারে জেলের চার দেয়ালে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে সাধারণ বন্দিগণ। এই সমস্ত কয়েদী বন্দিগণ কিভাবে কোন কোন খাত হতে অবৈধ ভাবে অর্থ উপার্জন করেন তার বিশদ বিবরণ তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে।
আমদানীঃ যাত্রা শুরু দূর্নীতিরকারা দূর্নীতির প্রথম ধাপ হলো আমদানী। আমদানী-হলো যেখানে নতুন বন্দিদের প্রথম রাতে এনে রাখা হয়। এছাড়া জেলের অভ্যন্তরে যে সমস্ত বন্দি অপরাধ করেন তাদের বিচারের জন্য এনে রাখা হয় সেই এলাকাকে আমদানী বলা হয়। আমদানীর শুরু হয় যারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থানা পুলিশের অসম্ভব রকমের নির্যাতন, নিপিড়ন, মানসিক যন্ত্রনা, টাকা পয়সা লেনদেন, উকিল সাহেবদের যাতনা সহ বহু রকমের নিষ্পেষনের শিকার হওয়া এমন কিছু বন্দি নামক মানুষকে নিয়ে।কোর্ট গারদের পুরাতন বন্দি যারা জেল হতে কোর্টে আসেন তাদের দ্বারা অরিয়েন্টেশন লাভ করেন নতুন বন্দিরা। তারা এই প্রথম জানতে পারেন বন্দি অবস্থায় তাদেরকে বহন করতে হবে থাকা-খাওয়া খরচ। জেলে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার গ্যারান্টি হলো হয় টাকা নয় বড় মাপের লোকের টেলিফোন। সেই মুহুর্তে যার কাছে যা আছে তা নিয়েই তৈরী হতে হয় জেলখানার জন্য। বিশেষ বিশেষ স্থানে লুকিয়ে বিশেষ করে প্যান্টের ফোল্ডিং, জাঙ্গীয়ার ভিতর এবং মুখের ভিতরে করে টাকা নেয়া হয়। যদি টাকা না আনা যায় তবে নিদেন পক্ষে কয়েক প্যাকেট সিগারেট সঙ্গে নিতে হয়। বেনসন বা গোল্ড লীফ সিগারেট সাথে নিতেই হবে। নতুবা রাত কাটানো দুঃসহ হয়ে উঠবে; আমদানী নামক গহীন অরন্যের ভীতরে লুকিয়ে থাকা রাইটার ও পাহারা নামক দানবদের যাতনার কারণে।বন্দিদের নিয়ে গাড়ী এসে উপস্থিত হয় জেল গেটে। বিশাল গেটের নিচের দিকে ছোট একটা গেট। সেই গেট খুলে হাক দেয়া হয় এক, দুই করে। চার চার জন করে বসানো হয় জেলারের কক্ষের পাশেই কড়া নিরাপত্তার আবেষ্টনিতে ঘেরা জায়গায়। শুরু হয় তল্লাশী; তল্লাশীতো নয় যেন এক প্রহসন। যে সমস্ত বন্দিরা চতুর বা পূর্বে এসেছে তারা ১০/২০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে পার পেয়ে যায়। এক অমানবিক আচরনের শিকার হতে হয় যাদের কিছু থাকে না; তাদেরকে এমনভাবে নাজেহাল করা হয় তখন মনে হয় এর চেয়ে ভাল ছিল থানার গারদখানা। গেট সার্জেন্ট যিনি থাকেন তার দায়িত্ব ভ‚লে গিয়ে তিনি অনেকটা টোল আদায়ের মতো বখড়া আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। যারা নতুন বন্দি তাদের বেলায় নিয়ম হচ্ছে যে টাকা আনবে সেই টাকা পিসিতে জমা দিয়ে দেয়া। তবে এই নিয়ম থাকলে কি হবে এই সংক্রান্ত একটি কথাও বলা হয় না জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নতুন বন্দিদের। তাই তল্লাশীতে ধরা পড়ে অনেক বন্দি তাদের লুকানো টাকা সহ। সেই নিয়ে শুরু হয় নতুন দেন দরবার হয়; কিছু টাকা রক্ষী ও জমাদার রেখে দিয়ে বাকী টাকা পিসি নামক হেফাজত খানায় জমা হয়। যে সমস্ত বন্দিরা সিগারেট নিয়ে আসেন তারা সিগারেট দিয়ে ম্যানেজ করেন তল্লাশী।তল্লাশীর পর পাঠানো হয় কোর্ট রুমে। নাম ডাকার পর ওয়ারেন্ট মিলানো হয়। সেখানে কোর্ট সহকারী তারাও কারারক্ষী; তবে কিছুটা শিক্ষিত। কথা হলো কিছু দাও; তবে ভাল আচরণ পাবে। চতুর বন্দিরা তাও বুঝে যায় ক্ষনিকের মধ্যে ১/২টা বেনসন সিগারেট এগিয়ে দেয়। ভাল ব্যবহার পেয়ে যায় মূহুর্তের মধ্যে; নাম ঠিকানা মিলিয়ে পাঠানো হয় জেলের ভিতরে। চার দেয়ালে ঘেরা কারাগার ভিতরে ঢোকার সাথে সাথে হৃদয়ের ভিতরে এক অজানা সংকোচে প্রতিটি বন্দির মন কোথায় যেন হারিয়ে যায়। ফিরে যেতে চায়; অনুভবে আসে পরিবারের প্রতিটি আপনজনের কথা। মনের গহীনে তখন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পরে বহুকালের স্মৃতিকথা; ঠিক তখনি আঘাত হানে আমদানীর কড়াঘাত।আমদানীর সম্মুখে উপস্থিত করে পুনরায় চার জন করে লাইনে বসিয়ে গণনা শেষে আমদানীর লোহার শিকের দরজা খুলে জমাদার সাহেব এক এক করে নবাগত বন্দিদের ঢুকিয়ে দেন আমদানীতে। নবাগত বন্দিরে অভ্যর্থনা জানায় আমদানী রাইটার। আমদানীর ভিতরে ঢুকিয়েই দিয়ে অভিষেক হয় এই ভাবে-চার চার করে লাইনে “বস”। তুই শব্দের অবতারনা তল্লাশীর নামে শুরু হয় অমানবিক আচরণ; সেই আচরণ এড়ানোর জন্য ম্যানেজ করা হয় সিগারেট দিয়ে। এরই মধ্যে ফালতুর মাধ্যমে বা পাহারার মাধ্যমে কোথায় রাত যাপন করবে সেই সিসটেম করতে হয় ২/১ প্যাকেট বেনসন বা গোল্ড লীফ সিগারেট দিয়ে। রাতে ভালভাবে ঘুমানোর জন্য সিট পেতে কোন কষ্ট হয় না যদি ২/১ প্যাকেট সিগারেট ধরিয়ে দেয়া হয়। আমদানীতে রাতে খাবারে ব্যবস্থা যা থাকে তাকে নেই বলেলেই ভাল হয়। খিচুরী এত নিম্মমানের যে মুখে দেওয়া সম্ভব নয়। যাক প্রথম রাত পার হয় এজন্য যে, প্রতি নবাগত সাথে করে কম বেশী শুকনো খাবার নিয়ে আসে; তাদিয়ে খাবার হয়ে যায়। পানি খাবে যে গ্লাসে তার চেয়ে না খাওয়া অনেক ভাল। যারা সিগারেট বা টাকা পয়সা দিতে পারেনা তাদেরকে শুয়ে না; বসেই রাত কাটাতে হয়। রাতে রাইটার ও ইনচার্জ পাহারা ছোটখাট একটা লেকচার দেন নবাগতদের উদ্দেশ্যে। সেই বক্তব্যের মোদ্দা কথা হলো “ফাইল ডাইল ও গাইল” হলো জেলের মূলনীতি। ফাইল হলো গণনা মিলানো ভোর-দুপর রাতের; ডাইল হলো জেলের বেসিক খানা, গাইল হলো জেল কর্তৃপক্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের অশ্লীল ভাষা। প্রয়োগের ক্ষেত্রে হলো সকল বন্দি।..............................(চলবে)
লেখাটি পড়ে ভাল লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×