somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ কারাগার-অনিয়ম (পর্ব -দুই )

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব পড়তে somewhereinblog অথবা এটি নিউজ বিডি এর লিংকে ক্লিক করুন

কারা প্রশাসনের নিয়োগ,পদোন্নতি, ভাল জেলে বদলী শাস্তি মওকুফের ব্যাপারে দুর্নীতি এমন জঘন্য রুপ নিয়েছে যে,তার দু’একটি ঘটনা উল্লেখ্য না করলেই নয়ঃ

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক জেলার মাহবুব সদাই নিজেকে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে বলে দাবী করতেন। তার প্রমানও দিয়েছেন বেশ কয়েকবার। আইজি প্রিজন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়ে সুপারিশ করেও ব্যর্থ হন। তার বিরুদ্ধে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ডেপুটি জেলার থাকাকালিন তেল বিক্রি নানা অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগ দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হেয়েছিল। সবশেষে যদিও তিনি বদলী হয়েছেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। যদিও তাতে কিছুই হবেনা, হয়তো মন্ত্রনালয়ের কাউকে না কাউকে ম্যানেজ করে অপরাধের দায় হতে মুক্তি পেয়ে যাবেন। মাহবুব প্রায় ৫ বছর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার থাকাকালীন ধরাকে সরা জ্ঞান করেছেন। আইজি (প্রিজন) ডিআইজি (প্রিজন) সিনিয়র সুপারকে তোয়াক্কা করতেন না। সূত্র জানায়-২০০৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ঢকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার থাকাকালীন শতশত অনিয়ম ও দূনীতি করে নামে বেনামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। পত্র পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে অনকে প্রতিবেদন ছাপা হলেও কাজ কিছুই হয়নি। বদলি হয়েছে তাও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে।

জেলা প্রশাসনের সাথে প্রতিটি কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের নিয়োগ কাল হতে দূর্নীতির সাথে এমনভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন তাদের একটাই কথা তা হলো বন্দিদের উপর বিভিন্ন চাপ প্রয়োগ করে টাকা আদায় করো। টাকা দিলে বন্দি ভালো; না দিলে বন্দি খুবই খারাপ, তার ওপর নেমে আসে বিভিন্ন প্রকারের নিপিড়ন। যেমন অহেতুক দেহ তল্লাশী, ব্রেকিং ফাইলের অজুহাত , বিভিন্ন ফাঁদ পাতা হয় সেই বন্দিকে নাজেহাল করার জন্য; প্রয়োজন বিচারের নামে আমদানী করা সহ সকল প্রকার আয়োজন তারা করে ফেলে।

যেহেতু টাকার বিনিময়ে চাকুরী, পদন্নোতি, বদলী, মুক্তি সব কিছু; তাই তারা জেল কোডের ধার ধারেন না। মুখে মুখে জেল কোডের কথা বলা হলেও আসলে তারা প্রত্যেকে জেল কোড সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। বিশেষ করে ডেপুটি জেলার থেকে কারারক্ষীদের শতকরা ৯৫ জন জেল কোড সম্পর্কে সম্পূর্ন অজ্ঞ। যতটুকু তারা জেল কোড সম্পর্কে জানেন বা বলেন তা হলো জেল কোডে যেটি বন্দির জন্য নিপিড়ন মূলক সেই বিষয়ে। কেননা কোন বন্দির পক্ষেই জেল কোড পড়ে বা বুঝে জেলে প্রবশ করা সম্ভব নয়। যারা জাননে তাদের পক্ষে জেলের ভিতরে বসে অর্থাৎ বাঘের মুখে বসে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহশ রাখেন না; তাতে হীতে বিপরীত হওয়ার সম্ভবনা শতকরা শতভাগ।

সুবেদার ও কারারক্ষীদের আচার আচরণ এত অভদ্রজনিত যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তার কারণ তাদের শিক্ষা দিক্ষা ও চিন্তা চেতনার পরিধি এত কম যে তারা ভদ্রতা-অভদ্রতার তফাতটুকু বুঝেন না। একজন রিক্সা চালক, তরকারী ফেরিওয়ালা টাকার বিনিময়ে হয়েছে কারারক্ষী, সেই কারারক্ষী টাকা দিয়ে হয়েছে জমাদার আবার টাকা প্রদান করেই হয়েছে সুবেদার। তাহলে তাদের কাছ থেকে ভদ্রতা নামক শব্দটি অচেনা হবে এটাই স্বাভাবিক। দ্বিতীয়ত কারা কর্তৃপক্ষও এটাই চান; তাদের ধারণা বন্দিদের দাবিয়ে রাখলেই তবে বন্দিরা তাদের প্রভু মনে করবে। তাহলে তাদের প্রতি দিনকার শত প্রকারের অনিয়ম ও অবৈধ অর্থ উপার্জনের পক্ষে বাধা হয়ে দাড়াবেনা এবং কোন রুপ অসন্তোস সৃষ্টি হবেনা।
কারা কর্তৃপক্ষ বৃটিশ আমলের বন্দি নীতিতেই বর্তমান স্বাধীন দেশের কারাগার পরিচালনা করতে ইচ্ছুক। যদিও আজকের সভ্য সমাজে তা হবার নয়। তার প্রমান পাওয়া যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো মহা ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও পৃথিবী ব্যাপি সমালোচনার ঝড় উঠেছে গুয়েন্তনামো বে কারাগার ও ইরাকে আবু গারীব কারাগারে বন্দি নির্যাতনের কারনে। ঝড় উঠেছে আফগানিস্তানে বন্দিদের পরিবহন ব্যবস্থায় অমানবিকতার কারণে। এমনতর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো একটি দেশ কিভাবে সম্ভব বন্দিদের গোলাম বানিয়ে রাখার মতো আচরন দেখানো; যা আদৌ অসম্ভব।

বাংলাদেশে প্রথমবার ২০০৬ সালের ১০ই জুন নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছিলেন তৎকালীন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান। কারারক্ষীদের সর্ব নিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা এস.এস.সি পাশ চাওয়া হয়েছিল। তখনই কেবল টাকার বিনিময়ে রক্ষী নিয়োগ করা হয়নি। তবে এই ব্যবস্থা অত্যন্ত সাময়িক তার কারণ কারা অধিদপ্তরের অধীনে চাকুরী নিয়োগ পদ্ধতি ও নিতীমালার আমূল পরিবর্তন না করা হলে; সেই অনিয়ম চালু হবে পুনরায়।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) জিল্লুর রহমান সাবেক আইজি প্রিজন কারা অধিদপ্তরের একটি চাকুরী বিধীমালা তৈরী করে স্ব-রাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে পাঠান। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারদের কারাগারের সুপার পদে নিয়োগ প্রদানের সুপারিশ করেন। তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সিনিয়র সুপার/সুপারগন। তবে খুশী হয়েছেন বর্তমান দায়িত্বরত কারা ডাক্তারগন। তাদের খুশী হওয়ার কারণ সুপার পদে থেকে যত অবৈধ আয় করা যায় ডাক্তার হিসেবে সেই পরিমাণে অবৈধ আয় করা যায় না; সেই প্রভু ভাবটাও আসেনা।

সিনিয়র ডিআইজি পদে সেনাবাহিনী হতে ডেপুটেশনে নিয়োগ প্রদানটি ভাল ভাবে নেয়নি সিনঃ সুপার ও সুপারগন। কেননা সেনাবাহিনী হতে আগত ঢাকা বিভাগীয় সাবেক ডিআইজি মেজর (অবঃ) সামছুল হায়দার সিদ্দীকির দায়িত্ব গ্রহনের পর হতে তার নিয়ন্ত্রনাধীন ১৯টি জেলের বিশেষ করে ৩টা সেন্ট্রাল জেল হতে দূর্নীতির শিকড় যে ভাবে উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন তাতে মহা অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল সিনিয়র সুপার/সুপারগনের মাঝে।

সমগ্র কারা ব্যবস্থাপনার ঘুনে ধরেছে। কারা দূর্নীতি ক্যান্সার নামক ব্যাধীতে আক্রান্ত হয়েছে, যার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। চার-দেয়ালের ভিতর ও বাহিরে এর বিশাল ব্যাপ্তি রয়েছে। কারা দূর্নীতি কতটি খাত, তা হিসাব করে বলা যাবে না। যতটুকু সম্ভব কারা দূর্নীতি খাত সম্পর্কে একটি বিবরণ তুরে ধরা হলো পাঠকের জ্ঞাতার্থে।

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×