১০ মার্চ মুক্তি পেলো জাজ মাল্টিমিডিয়ার ছবি ‘মেয়েটি এখন কোথায় যাবে’। ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি পরিচালনা করেছেন নাদের চৌধুরী।
জলি, শাহরিয়াজ, মামুনুর রশিদ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, ফজলুর রহমান বাবু এবং সুব্রত অভিনীত ছবিটির কাহিনী আবর্তিত হয় কৃষ্ণকলিকে (জলি) ঘিরে। হিন্দু পরিবারের মেয়ে কৃষ্ণকলি। তাকে ভালোবাসে অন্য এক গ্রামের বখাটে ছেলে রাজা (শাহরিয়াজ)। বিয়ের প্রস্তাবও দেয় কৃষ্ণকলিকে। কিন্তু রাজা মুসলমান হওয়ায় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কৃষ্ণকলি। পরিনামে কৃষ্ণকলিকে বাড়ি থেকে রাতের আঁধারে উঠিয়ে নিয়ে যায় রাজা। কাহিনী মোড় নেয় অন্য দিকে।
ছবির কাহিনী ভালোই ছিল। উপন্যাসের খুব কাছাকাছি ছিল ছবির গল্পটাও। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছবির কাহিনী বেশ ধীর গতির মনে হয়েছে। যেমন মাঝির সাথে নৌকায় কৃষ্ণকলির কথোপকথনের দৃশ্যটা বেশ দীর্ঘ ছিল। মেয়েকে হারানোর পর দিশেহারা বাবার চালের আড়তের শ্রমিকের সাথে যে কথোপকথনগুলো ছিল সেগুলোও ছিল বেশ দীর্ঘায়ীত যা দর্শকের মাঝে বিরক্তির উদ্রেক সৃষ্টি করেছে। এই দৃশ্যগুলো অন্য ভাবে উপস্থাপন করা যেত কিংবা এই দৃশ্যগুলো ভেঙে ভেঙে দেখিয়ে তার মাঝে মাঝে অন্য দৃশ্যগুলো সমন্বয় করে দেখানো যেত। ছবির শেষের ফিনিশিংটা ভালো লাগেনি। বুঝলাম না হয় উপন্যাসের সাথে মিল রেখে ছবির কাহিনী এগিয়েছে কিন্তু ফিল্মে যদি একটু ফিল্মি টাইপের ব্যাপার না থাকলো তাহলে আর হল কি ! গল্পের পরিণতি ঠিক রেখে একটু নাটকীয়তা আনা যেতই।
অভিনয়ের কথা বললে বলবো কেন্দ্রীয় চরিত্রে জলি মন প্রাণ ঢেলে অভিনয় করেছেন। কৃষ্ণকলি চরিত্রে একদম মিশে গিয়েছেন তিনি। চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে বেশ পরিশ্রম করেছেন বোঝা যায়। রাজা চরিত্রে অভিনয় করা শাহরিয়াজের অভিনয় ছিল মোটামুটি। তবে আরেকটু ভালো করা যেত। ডায়লগ ডেলিভারির সময় ডায়লগগুলো গ্রাম্য ভাষায় ছিল কিন্তু বাচন ভঙ্গিতে শহুরে ভাব লক্ষ্য করা গেছে। অন্যান্য পার্শ্ব চরিত্রগুলোর মধ্যে কৃষ্ণকলির বাবার চরিত্রে অভিনয় করা মামুনুর রশিদ, তার আড়তের শ্রমিক, রাজার চাচার চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ এবং মাঝির চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবুর অভিনয়ও ভালো ছিল। কিন্তু রাজার বাবার চরিত্রে অভিনয় করা সুব্রতর অভিনয় ছিল যাচ্ছে তাই অবস্থা। অভিনয়ের মাঝে অতি অভিনয় লক্ষ্য করা গেছে। তার মত প্রবীণ অভিনেতার কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না।
ছবিতে সর্বমোট তিনটি গান রয়েছে। তিনটি গানই বেশ শ্রুতি মধুর। ইমন সাহার সঙ্গীতায়জনে গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন ডলি সান্তয়নী, সাবিনা ইয়াসমিন, নকিব এবং ফজলুর রহমান বাবু।
ছবির দৃশ্যায়ন এবং পোশাক পরিকল্পনাও ছিল বেশ ভালো। তবে জাত মেরেছে মেকআপ। কৃষ্ণকলিকে ধরে নিয়ে যাবার আগে তাকে মাত্রাতিরিক্ত মেকআপ দেওয়া হয়েছে যেটার কোন দরকার ছিল না। গ্রামের মেয়ে নিশ্চয়ই চোখে নীল লেন্স লাগিয়ে ঘুরে বেরাবে না। কৃষ্ণকলির বোনকে একটা দৃশ্যে সেই নব্বই দশকের নায়িকাদের মত ঘাগরা পরতে দেখা গিয়েছে যেটার কোন দরকার ছিল না। এর চেয়ে সাধারণ সেলোয়ার কামিজই ভালো ছিল। কৃষ্ণকলির মাকেও ভারী মেকআপ দেওয়া হয়েছে যেটা দৃষ্টিকটু লেগেছে। চোখে পড়লো পায়ে উঁচু হিলের স্যান্ডেল পরে সে মন্দিরের প্রসাদ নিয়ে এলো। মন্দিরে কেউ জুতো স্যান্ডেল পরে প্রবেশ করে? রাজা ওরফে শাহরিয়াজকে মুসলিম বোঝাতে গিয়ে গলায় তাবিজ ঝুলাতে দেখা গিয়েছে। ইয়ো ইয়ো টাইপ গ্রামের বখাটে কি এইভাবে তাবিজ ঝুলাবে?
যাই হোক, পরিশেষে এইটাই বলবো সব মিলিয়ে ‘মেয়েটি এখন কোথায় যাবে’ ছবিটি হলে বসে উপভোগ করার মত একটি ছবি। ছবিটি দেখার পর মনে হবে পয়সা উসুল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৪৬