somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুলতানার স্বপ্ন......:-* (৩)

২৯ শে জুন, ২০০৯ রাত ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব


-- কিন্তু সুলতানা, এটা কি তোমার কাছে অবিবেচকের মতো মনে হয় না যে নিরাপদ নারীদের আটকে রেখে পুরুষদের ছেড়ে রাখা?
-- কেন? যেহেতু আমরা নারীরা দুর্বল, তাই তো আমাদের অন্তঃপুরের বাইরে আসা নিরাপদ না।
-- হ্যাঁ, এটা ততোক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ নয় যতক্ষণ পর্যন্ত পুরুষরা রাস্তায় থাকবে।অথবা এরকমভাবে ভাবা যেতে পারে একটি বন্য পশু বাজারে ঢুকে পড়লে কি অবস্থা হয়?
-- অবশ্যই না।

-- ধর, কিছু মানসিক রোগী পাগলা গারদ থেকে ছাড়া পেয়ে মানুষ, ঘোড়াসহ অন্যান্য সব পশু-পাখির যত রকমের ক্ষতি আছে সব করছে, তখন তোমাদের দেশের লোকেরা কি করবে?
-- তারা সেই মানসিক রোগীদের পাকড়াও করে আবার গারদে ঢুকাবে।
-- ধন্যবাদ! তার মানে সুস্থদেরকে আটকে রাখা আর মানসিক রোগীদের ছেড়ে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়?
আমি অল্প হেসে বললাম, অবশ্যই নয়।

-- কিন্তু বাস্তবতা হলো, তোমাদের দেশে তাই-ই হচ্ছে। পুরুষ, যারা বিভিন্ন রকমের অন্যায় করছে বা করতে সক্ষম, তারা মুক্ত থাকছে, আর নির্দোষ যত নারীরা সবাই অন্তঃপুরে বন্দী!! তোমরা কি করে এই ধরণের অদক্ষ পুরুষদের বাইরে রাখতে ভরসা পাও? X(

-- সামাজিক বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের কোন কিছু করার নেই। ভারতে পুরুষরাই সবকিছুর মালিক, প্রভু। তারা নিজেরাই সব ক্ষমতা দখল করেছে আর নারীদের অন্দরমহলে আটকে রেখেছে। :(

-- তোমরা কেন নিজেদের এই বন্দীত্ব মেনে নিচ্ছ?
-- কারণ, তারা যে আমাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।

-- সিংহের শক্তি তো মানুষের চেয়ে বেশী। তাই বলে কি তারা মানুষের চেয়ে এগিয়ে? তোমরা তোমাদের দায় এড়িয়ে যেতে পারো না। তোমরা নিজেরাই নিজেদের চাহিদার ব্যাপারে অন্ধ, তাই তোমরা তোমাদের স্বাভাবিক অধিকার হারিয়েছ।
-- তাদের কোন কিছুই করা উচিত না। দুঃখিত, পুরুষেরা কোন কাজের যোগ্য না। তাদের বন্দী কর আর ঘরে আটকে রাখো।

-- কিন্তু এটা কি এতো সোজা যে তাদেরকে ধরবো আর চার দেয়ালের মাঝে বন্দী করবো? এছাড়া তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি এগুলোও কি তাদের সাথে সাথে অন্তঃপুরে ঢুকে যাবে?:|

সা’রা কোন জবাব দিলো না, শুধু মিষ্টি করে হাসলো। হয়তো সে ভাবছে কুয়োর ব্যঙের সাথে তর্ক করে লাভ নেই।



এর মধ্যেই আমরা সা’রার বাড়িতে এসে পৌঁছালাম।সুন্দর হৃদয় আকৃতির বাগানের মাঝখানে তার বাড়িটা। বাংলো টাইপ বাড়ির উপরে ঢেউ খেলানো ছাদ। আমাদের যেকোন বড়লোকের বাড়ীর চেয়েও ঠান্ডা এবং মনোরম। বাড়িটা যে কি পরিমাণ পরিচ্ছন্ন আর কতো সুন্দরভাবে সাজানো সেটা ভাষায় বর্ণনা করা আমার জন্য বেশ কঠিন!!

আমরা পাশাপাশি বসলাম। সে এক টুকরো কাপড়ে এমব্রয়ডারী করা শুরু করলো।

-- তুমি কি সুঁই-সুতার কাজ জানো? সা’রা জিজ্ঞ্যেস করলো আমাকে।
-- হ্যাঁ। আমাদের তো ঘরে বসে থেকে আর কোন কিছু করার নেই।

সা’রা হাসতে হাসতে বললো, অথচ দেখো আমরা ভাবতেই পারি না আমাদের অন্তঃপুরবাসী এমব্রয়ডরী করবে!! ছেলেদের এমনকি সুঁইয়ের ভিতরে সুতা ঢোকানোর মতো ধৈর্যটুকুও নেই!!

আমি তার বিভিন্ন কারুকাজ করা টি-পয়গুলো দেখে জিজ্ঞ্যেস করলাম, এগুলো সব কি তুমি নিজের হাতে করেছ? (অবাক হবার ইমো)
-- হ্যাঁ।
-- এতো কিছু করার সময় পাও কি করে? তোমার নিশ্চয়ই অফিস করতে হয়? তাই না?
-- হ্যাঁ, কিন্তু আমাকে ল্যাবরেটরীতে সারাদিন থাকতে হয় না। মাত্র দুই ঘন্টায় আমার কাজ শেষ করি।
-- মাত্র দুই ঘন্টা!! কি করে সম্ভব?? আমাদের অফিসাররা, ম্যাজিস্ট্র্যাটরা দৈনিক সাত ঘন্টা অফিস করে।
-- হুম। সেরকমটা আমিও দেখেছি। আচ্ছা, তোমার কি মনে হয়, তারা পুরো সাত ঘন্টাই কাজ করে?
-- নিশ্চয়ই করে!!

-- না, সুলতানা। তারা তা করে না। তারা তাদের সময় নষ্ট করে ধূমপান করে। কেউ কেউ অফিস টাইমে ২/৩টা চুরুট খায়। তারা কাজ করার চেয়ে ফিরিস্তি শোনায় বেশী। ধর, একটা চুরুট শেষ হতে আধ ঘন্টা সময় লাগে আর একজন পুরুষ যদি দৈনিক ১২টা চুরুট খায়, তাহলে তুমি দেখবে প্রতিদিন অন্ততঃ ছয় ঘন্টা করে সময় নষ্ট করছে এই চুরুট খাওয়ার পেছনে।


আমরা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বললাম। জানলাম যে তারা কোন ধরণের মহামারী রোগ আক্রান্ত হয়নি, এমনকি আমাদের মতো মশার কামড়ের অত্যাচারও তাদের সহ্য করতে হয় না। আমি খুবই অবাক হলাম এই 'নারীদের দেশ' -এ খুব ব্যতিক্রমধর্মী দুর্ঘটনা ছাড়া যুবক বয়সে কেউ মারাও যায় না।

সে আমাকে জিজ্ঞ্যেস করলো, তুমি কি আমাদের রান্নাঘর দেখবে?
-- হ্যাঁ, অবশ্যই। তার সাথে উঠে গেলাম। আমি যাবার আগেই বাড়ির পুরুষরা রান্নাঘর পরিষ্কার করে রেখেছে। রান্নাঘরটি একটি চমৎকার সবজি বাগানের মাঝে। প্রত্যেকটি লতানো গাছ, প্রত্যেকটি টমেটো যেন একেকটি অলংকার। আমি কোন ধোঁয়া দেখলাম না, কোন চিমনীও দেখলাম না।সবকিছু খুব পরিষ্কার এবং ঝকঝকে। জানালাগুলো ফুলগাছ দিয়ে সাজানো। কোন কালি বা পোড়া দাগও দেখলাম না।

-- তোমরা কিভাবে রান্না-বান্না কর?
-- সূর্যের তাপের সাহায্যে। সে আমাকে একইসাথে পাইপও দেখালো যেটা দিয়ে ঘনীভূত সূর্যের আলো আর তাপ আসে।এরপর পুরো ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য সে আমাকে কিছু রান্না করেও দেখালো।

আমি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম, কিভাবে তোমরা সূর্যের তাপ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ কর?

-- তাহলে তো তোমাকে আমাদের কিছু পিছনের ইতিহাস শোনাতে হয়।তিরিশ বছর আগে যখন আমাদের রাণীর মাত্র ১৩ বছর বয়স, তখন সিংহাসনে আরোহণ করলো। তিনি ছিলেন নামে মাত্র রাণী, মূলতঃ প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশ শাসন করতো।..........




ক্রমশ......
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:১৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×