প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
-- কিন্তু সুলতানা, এটা কি তোমার কাছে অবিবেচকের মতো মনে হয় না যে নিরাপদ নারীদের আটকে রেখে পুরুষদের ছেড়ে রাখা?
-- কেন? যেহেতু আমরা নারীরা দুর্বল, তাই তো আমাদের অন্তঃপুরের বাইরে আসা নিরাপদ না।
-- হ্যাঁ, এটা ততোক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ নয় যতক্ষণ পর্যন্ত পুরুষরা রাস্তায় থাকবে।অথবা এরকমভাবে ভাবা যেতে পারে একটি বন্য পশু বাজারে ঢুকে পড়লে কি অবস্থা হয়?
-- অবশ্যই না।
-- ধর, কিছু মানসিক রোগী পাগলা গারদ থেকে ছাড়া পেয়ে মানুষ, ঘোড়াসহ অন্যান্য সব পশু-পাখির যত রকমের ক্ষতি আছে সব করছে, তখন তোমাদের দেশের লোকেরা কি করবে?
-- তারা সেই মানসিক রোগীদের পাকড়াও করে আবার গারদে ঢুকাবে।
-- ধন্যবাদ! তার মানে সুস্থদেরকে আটকে রাখা আর মানসিক রোগীদের ছেড়ে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়?
আমি অল্প হেসে বললাম, অবশ্যই নয়।
-- কিন্তু বাস্তবতা হলো, তোমাদের দেশে তাই-ই হচ্ছে। পুরুষ, যারা বিভিন্ন রকমের অন্যায় করছে বা করতে সক্ষম, তারা মুক্ত থাকছে, আর নির্দোষ যত নারীরা সবাই অন্তঃপুরে বন্দী!! তোমরা কি করে এই ধরণের অদক্ষ পুরুষদের বাইরে রাখতে ভরসা পাও?
-- সামাজিক বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের কোন কিছু করার নেই। ভারতে পুরুষরাই সবকিছুর মালিক, প্রভু। তারা নিজেরাই সব ক্ষমতা দখল করেছে আর নারীদের অন্দরমহলে আটকে রেখেছে।
-- তোমরা কেন নিজেদের এই বন্দীত্ব মেনে নিচ্ছ?
-- কারণ, তারা যে আমাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।
-- সিংহের শক্তি তো মানুষের চেয়ে বেশী। তাই বলে কি তারা মানুষের চেয়ে এগিয়ে? তোমরা তোমাদের দায় এড়িয়ে যেতে পারো না। তোমরা নিজেরাই নিজেদের চাহিদার ব্যাপারে অন্ধ, তাই তোমরা তোমাদের স্বাভাবিক অধিকার হারিয়েছ।
-- তাদের কোন কিছুই করা উচিত না। দুঃখিত, পুরুষেরা কোন কাজের যোগ্য না। তাদের বন্দী কর আর ঘরে আটকে রাখো।
-- কিন্তু এটা কি এতো সোজা যে তাদেরকে ধরবো আর চার দেয়ালের মাঝে বন্দী করবো? এছাড়া তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি এগুলোও কি তাদের সাথে সাথে অন্তঃপুরে ঢুকে যাবে?
সা’রা কোন জবাব দিলো না, শুধু মিষ্টি করে হাসলো। হয়তো সে ভাবছে কুয়োর ব্যঙের সাথে তর্ক করে লাভ নেই।
এর মধ্যেই আমরা সা’রার বাড়িতে এসে পৌঁছালাম।সুন্দর হৃদয় আকৃতির বাগানের মাঝখানে তার বাড়িটা। বাংলো টাইপ বাড়ির উপরে ঢেউ খেলানো ছাদ। আমাদের যেকোন বড়লোকের বাড়ীর চেয়েও ঠান্ডা এবং মনোরম। বাড়িটা যে কি পরিমাণ পরিচ্ছন্ন আর কতো সুন্দরভাবে সাজানো সেটা ভাষায় বর্ণনা করা আমার জন্য বেশ কঠিন!!
আমরা পাশাপাশি বসলাম। সে এক টুকরো কাপড়ে এমব্রয়ডারী করা শুরু করলো।
-- তুমি কি সুঁই-সুতার কাজ জানো? সা’রা জিজ্ঞ্যেস করলো আমাকে।
-- হ্যাঁ। আমাদের তো ঘরে বসে থেকে আর কোন কিছু করার নেই।
সা’রা হাসতে হাসতে বললো, অথচ দেখো আমরা ভাবতেই পারি না আমাদের অন্তঃপুরবাসী এমব্রয়ডরী করবে!! ছেলেদের এমনকি সুঁইয়ের ভিতরে সুতা ঢোকানোর মতো ধৈর্যটুকুও নেই!!
আমি তার বিভিন্ন কারুকাজ করা টি-পয়গুলো দেখে জিজ্ঞ্যেস করলাম, এগুলো সব কি তুমি নিজের হাতে করেছ? (অবাক হবার ইমো)
-- হ্যাঁ।
-- এতো কিছু করার সময় পাও কি করে? তোমার নিশ্চয়ই অফিস করতে হয়? তাই না?
-- হ্যাঁ, কিন্তু আমাকে ল্যাবরেটরীতে সারাদিন থাকতে হয় না। মাত্র দুই ঘন্টায় আমার কাজ শেষ করি।
-- মাত্র দুই ঘন্টা!! কি করে সম্ভব?? আমাদের অফিসাররা, ম্যাজিস্ট্র্যাটরা দৈনিক সাত ঘন্টা অফিস করে।
-- হুম। সেরকমটা আমিও দেখেছি। আচ্ছা, তোমার কি মনে হয়, তারা পুরো সাত ঘন্টাই কাজ করে?
-- নিশ্চয়ই করে!!
-- না, সুলতানা। তারা তা করে না। তারা তাদের সময় নষ্ট করে ধূমপান করে। কেউ কেউ অফিস টাইমে ২/৩টা চুরুট খায়। তারা কাজ করার চেয়ে ফিরিস্তি শোনায় বেশী। ধর, একটা চুরুট শেষ হতে আধ ঘন্টা সময় লাগে আর একজন পুরুষ যদি দৈনিক ১২টা চুরুট খায়, তাহলে তুমি দেখবে প্রতিদিন অন্ততঃ ছয় ঘন্টা করে সময় নষ্ট করছে এই চুরুট খাওয়ার পেছনে।
আমরা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বললাম। জানলাম যে তারা কোন ধরণের মহামারী রোগ আক্রান্ত হয়নি, এমনকি আমাদের মতো মশার কামড়ের অত্যাচারও তাদের সহ্য করতে হয় না। আমি খুবই অবাক হলাম এই 'নারীদের দেশ' -এ খুব ব্যতিক্রমধর্মী দুর্ঘটনা ছাড়া যুবক বয়সে কেউ মারাও যায় না।
সে আমাকে জিজ্ঞ্যেস করলো, তুমি কি আমাদের রান্নাঘর দেখবে?
-- হ্যাঁ, অবশ্যই। তার সাথে উঠে গেলাম। আমি যাবার আগেই বাড়ির পুরুষরা রান্নাঘর পরিষ্কার করে রেখেছে। রান্নাঘরটি একটি চমৎকার সবজি বাগানের মাঝে। প্রত্যেকটি লতানো গাছ, প্রত্যেকটি টমেটো যেন একেকটি অলংকার। আমি কোন ধোঁয়া দেখলাম না, কোন চিমনীও দেখলাম না।সবকিছু খুব পরিষ্কার এবং ঝকঝকে। জানালাগুলো ফুলগাছ দিয়ে সাজানো। কোন কালি বা পোড়া দাগও দেখলাম না।
-- তোমরা কিভাবে রান্না-বান্না কর?
-- সূর্যের তাপের সাহায্যে। সে আমাকে একইসাথে পাইপও দেখালো যেটা দিয়ে ঘনীভূত সূর্যের আলো আর তাপ আসে।এরপর পুরো ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য সে আমাকে কিছু রান্না করেও দেখালো।
আমি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম, কিভাবে তোমরা সূর্যের তাপ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ কর?
-- তাহলে তো তোমাকে আমাদের কিছু পিছনের ইতিহাস শোনাতে হয়।তিরিশ বছর আগে যখন আমাদের রাণীর মাত্র ১৩ বছর বয়স, তখন সিংহাসনে আরোহণ করলো। তিনি ছিলেন নামে মাত্র রাণী, মূলতঃ প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশ শাসন করতো।..........
ক্রমশ......
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




