আমার লেখা খুন গল্পটি ইতিমধ্যেই অনেকে হয়ত পড়েছেন। গল্পটি নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেকের অনেক ধরনের প্রতিক্রিয়া পড়লাম। এবার আসুন কিছু পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে ধারণা নেয়া যাক।
দৈনিক অস্তগামী সূর্যঃ
রাজধানীতে খুনের হার বেড়েই চলেছে
আবারও রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র পল্টনে সন্ত্রাসীদের হাতে খুনের ঘটনা ঘটেছে। মোজাম্মেল চৌধুরী (৫৬) নামক একজন বীমা কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যা ৬.৩০ এর সময় এক চায়ের দোকানের সামনে নির্মম ভাবে খুন হয়। সন্ত্রাসীরা রিভলভার দিয়ে চারটি গুলী করে বাইকে করে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় পুরো এলাকা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। খুনের কারন জানা যায়নি। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করার আশ্বাস জানিয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে মোজাম্মেল চৌধুরী নেহায়েত ভদ্র লোক ছিলেন। তিনি চাঁদাবাজির স্বীকার হয়ে খুন হয়েছেন।
দৈনিক বেতার বার্তাঃ
এবার আততায়ীর হাতে বীমা কর্মকর্তা খুন
গতকাল সন্ধ্যা ৬.৪৫ এর সময় আততায়ীর হাতে মোজাম্মেল চৌধুরী (৫৬) নামে একজন বীমা কর্মকর্তা খুন হয়েছেন। যে দোকানের সামনে খুন হয়েছেন সেই দোকানের কর্মচারী রাজু জানিয়েছে দুইজন লোক তার দোকানে বসে চা খাচ্ছিল। হঠাত কি হলো সে বুঝে উঠার আগেই চোখের পলকে ঘটনাটা ঘটে গেছে। খুন করে দুইজন লোক হুন্ডা করে পালিয়ে যায়। মোজাম্মেল চৌধুরীর পরিবারে এখন শোকের মাতম। তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে কান্নায় ভেঙে পরেছে। সংসারের একমাত্র উপার্জন কারী তাদের বাবা আজ আর নেই। তারা এর উপযুক্ত বিচার চায়। বড় মেয়ে সাফিয়া বাবার মৃত্যুতে শোকে পাথর। সে ক্লাস নাইনে পড়ে। ছোট মেয়ে জিনিয়া পড়ে ক্লাস সিক্সে। কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে যাচ্ছিল। মোজাম্মেল চৌধুরীর স্ত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেল তিনি বেশ নিরীহ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। কোন শত্রু ছিলনা তার কখনও। তবু এমন ভাল একটি মানুষকে খুন হতে হলো। দেশের শান্তি শৃঙ্খলার চরম অধপতন হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য এখন জীবন যাত্রা হুমকির মুখে পড়েছে। প্রশাসন নিষ্ক্রিয়। আর কত ৪৮ ঘন্টা পেরুলে আমরা একটি শান্তির দেশ পাবো ?
দৈনিক ঊষার আলোঃ
চাঁদাবাজীর নিষ্ঠুর স্বীকার
থেমে নেই খুনের ঘটনা। এবার চাঁদাবাজীর স্বীকার হয়ে খুন হলেন একজন বীমা কর্মকর্তা। মোজাম্মেল চৌধুরী নামের ৫৪ বছর বয়সী একজন উচ্চ পদস্থ বীমা অফিসার খুন হলেন। তাকে রিভলবার দিয়ে চারটি গুলী করা হয়। একটি গুলী চোখ ভেদ করে চলে যায়। তার বড় মেয়ের সাথে কথা বলে জানা গেছে বেশ কিছুদিন ধরেই স্থানীয় চাঁদাবাজরা তাকে নানা ভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। চাঁদা দেয়াতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে অবশেষে খুন হতে হলো। তবে তদন্তের খাতিরে পুলিশ কোন তথ্য এখনই জানাতে পারছেনা বলে জানিয়েছে। যে চায়ের দোকানের সামনে ঘটনা ঘটেছে সেই দোকানী রাজু জানিয়েছে মোজাম্মেল সাহেব রোজ অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তার দোকান থেকে কেক, কলা ইত্যাদি কিনে বাড়ি ফেরেন। গতকালও তিনি কেক কেনার জন্য এসেছিলেন। সেই সময় রাজুর দোকানে বসেই দুইজন চা আর সিগারেট খাচ্ছিল। হঠাত কিছু বুঝে উঠার আগেই গুলীর শব্দে রাজু ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। তবে একজনকে কিছু নিয়ে একটা কাগজে লেখালিখি করতে দেখেছে সে। ধারনা করা হচ্ছে খুনের পরিকল্পনা করছিল কাগজ কলমে। কিন্তু এই ব্যাপারে পুলিশের কাছ থেকে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
দৈনিক ট্যাবলেটঃ
পরকীয়ার নিষ্ঠুর বলী বীমা কর্মকর্তা
দেশের স্বনামধন্য বীমা প্রতিষ্ঠান জীবনের আর্থিক বীমা কোম্পানির এম ডি মোজাম্মেল চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যা ৭.৩০ এর সময় নিষ্ঠুর ভাবে খুন হন। স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদনকারী জানিয়েছেন, মোজাম্মেল সাহেবের স্ত্রী স্বামীর ব্যাস্ততার কারণে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে যান। স্ত্রীর পরকীয়ার ঘটনা জানতে পেরে ভদ্র লোক নিরুপায় হয়ে যান। জানা যায় তার স্ত্রী সুইটীর সাথে অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রায়ই যাতায়াত ছিল একজন যুবক বয়সী ছেলের। এই নিয়ে তাদের সংসারে বেশ কিছুদিন ধরেই অশান্তি বিরাজ করছিল। ডিভোর্স চেয়েও না পেয়ে তার স্ত্রী তার প্রেমিককে দিয়ে বেশ কয়েকবার হত্যার হুমকীও প্রদান করে। অবশেষে গতকাল মোজাম্মেল চৌধুরীকে তার স্ত্রীর প্রেমিক হুন্ডায় করে এসে খুন করে পালিয়ে যায়। ঘটনা স্থল থেকে পুলিশ একটা বই উদ্ধার করে। কিন্তু সেই বইয়ের ব্যাপারে পুলিশ মুখ খুলেনি এখনও তদন্তের স্বার্থে। তবে এই বইয়ের সাথে খুনের অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। আশা করা হচ্ছে এই বই থেকে পুরো খুনের রহস্যের জট খুলে যাবে।
দৈনিক মানুষের কন্ঠঃ
খুন
গতকাল উত্তরায় আশিক (৩২), মিরপুরে মাসুম শিকদার (৪২), মোহাম্মদপুরে বাবুল (২২), পল্টনে মোজাম্মেল চৌধুরী (৫২), সহ অজ্ঞাত নামা আরও দুইজন ব্যাক্তি খুন হয়েছে।
দৈনিক প্রতিদিনঃ
রাজধানীতে চাঞ্চল্যকর খুন
গতকাল সন্ধ্যায় মোজাম্মেল চৌধুরী নামক একজন বীমা কর্মকর্তা খুন হয়েছেন। আমাদের নিজস্ব সংবাদ দাতা জানিয়েছেন, রাজু নামের এক ১২/১৩ বছর বয়সের চায়ের দোকানীর সামনে ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা রাজুর দোকানে বসেই তামাক সেবন করছিল। কিন্তু রাজুর ভাষ্য অনুযায়ী সে খুনীদের এর আগে কখনও দেখেনি। কিন্তু পুলিশের সন্দেহ রাজুকে নিয়ে। সেও এই খুনের সাথে জড়িত থাকতে পারে। তাই রাজুকে থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসা বাদ করেছে পুলিশ। কিন্তু রাজু কোন প্রকার তথ্য দিয়ে পুলিশকে সাহায্য করতে পারেনি। ঘটনা স্থল থেকে একটি সুডোকোর বই উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু এই বইয়ের সাথে খুনের কোন সম্পর্ক নেই বলেই তাদের ধারণা। তবে তদন্তের খাতিরে এখনই মুখ খুলতে নারাজ পুলিশ।
দৈনিক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদঃ
নেশার মরণ ছোবল প্রাণ কেড়ে নিল কয়েকটি জীবনের
মোজাম্মেল চৌধুরী নামক একজন বীমা কর্মকর্তা খুন হয়েছেন। গতকাল রাত পৌনে আটটার দিকে পল্টনে নিজ বাসভবনের একটা চায়ের দোকানে চা খেতে এসে দুইজন সন্ত্রাসীর সাথে বাকবিতন্ডতায় জড়িয়ে পড়লে খুন হতে হয় তাকে। বাবুল নামের একজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই সময় সে দোকানের কাছেই ছিল। দুইজন লোক রাজুর দোকানে বসে চা খাচ্ছিল। এরমধ্যে একজন দোকানের টুলের উপর বসেই কাগজে করে গাঁজা বানাচ্ছিল। ওইসময় মোজাম্মেল সাহেব অফিস থেকে প্রতিদিনের মতো চা খেতে এলে ওই দুইজনকে গাঁজা সেবনে বাঁধা প্রদান করলে এক পর্যায় ঝগড়া সৃষ্টি হয়। তারপরেই এই খুনের ঘটনা। এদিকে মোজাম্মেল চৌধুরীর পরিবারে নেমে এসেছে শোকের মাতম। তার স্ত্রী ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছেন। বাক রুদ্ধ হয়ে তার স্ত্রী সুইটি অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে আইসিউতে রাখা হয়। ছোট ছোট দুই মেয়ের দিকে তাকাতেই কান্না চেপে রাখা অসম্ভব। দুইদিন পর ছোট মেয়ের জন্মদিন। জিনিয়ার বাবা তার মেয়েকে কথা দিয়েছিলেন শিশুপার্কে ঘুরতে নিয়ে যাবেন তার এবারের জন্মদিন উপলক্ষ্যে। কিন্তু হয়ত এখন আর কখনও শিশুপার্ক দেখা তার জীবনে আর হয়ে উঠবেনা। বড় মেয়ে সাফিয়া এবার এস এস সি পরীক্ষার্থী। তার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল সাফিয়া গোল্ডেন এ প্লাস পাবে। কিন্তু সব স্বপ্ন যেন মুহূর্তের মধ্যে দুঃস্বপ্নের কালো রাতে পরিনত হলো। এক অনিশ্চিত জীবনের পথে এখন তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে। তারা যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা তাদের বাবা আর কখনও ফিরে আসবেনা।
পুরোটাই নিতান্তই আমার কল্পনাকে কেন্দ্র করে লেখা। সকলের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ থাকবে কাকতালীয়ভাবে কোন ঘটনার সাথে মিলে গেলে কোনভাবেই আমাকে দায়ী করা যাবেনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৩৪