যখনই কোন অপারেশন থাকে, একটা সুডোকোর বই কিনে আতিক গভীর মনোযোগের সাথে খেলতে শুরু করে, এই ব্যাপারটা কিছুতেই বুঝতে পারিনা; অক্ষর মিলিয়ে কি মজা সে পায়!
আতিকের আর একটি গুন হলো মানুষের নাম জেনে নিয়ে তার সাথে কথা শুরু করা, এই যেমন তিন রাস্তার মোড়ের এই চা এর দোকানে আসতেই সে জানতে চাইল দোকানির নাম?
১৪/১৫ বছরে ছেলেটি জানাল তার নাম রাজু।
তো রাজু ভাইয়া আমাকে চিনি ও লিকার কম দিয়ে দুধ বেশি দিয়ে কি একটা চা খাওয়ানো যায়? আতিকের গলার স্বরটা চমৎকার। এই পরিস্কার কণ্ঠস্বর দিয়ে সাবলীল উচ্চারণ যে কোন মানুষকেই মুগ্ধ করতে পারে।
চা এর কাপ বেঞ্চি তে রাখা, বা হাতে সিগারেট, ডান হাতে কলম, খেলায় মগ্ন। ঠান্ডা, উত্তেজনাহীন একজন মানুষ আতিক।
মোজাম্মেল সাহেব অফিস থেকে ফেরেন ৭ থেকে ৭. ১০ এর ভেতর। জ্যাম থাকলে অন্য কথা। তাকে দেখা গেল, সময় তখন ৭.৭ মিনিট ২৬ সেকেন্ড, রাজুর দোকান পৌছাতে লাগবে তার ৩৪ থেকে ৪০ সেকেন্ড, ৫ সেকেন্ড সময় লাগবে তার কাছে ঘেষতে তারপর ৮ থেকে ১০ সেকেন্ড। সারাদিন অফিস করার কারনে তাকে ভীষণ টায়ার্ড দেখাচ্ছিল। বুকের কাছে শার্টের একটা বোতাম খোলা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। হাতের রুমাল দিয়ে তিনি কপালের ঘাম মুছতে মুছতে হাটছেন।
রাজু মিয়া কেক কি আজকের? মোজাম্মেল সাহেবের প্রশ্ন শেষ হতেই পাশে পৌছে গেলাম, আমার দিকে তাকালেন, মনে হল চমকে উঠলেন, আমার ১ সেকেন্ড সময় নষ্ট হল। নাইন এমএম গর্জে উঠল তিনবার।
মোজাম্মেল সাহেব চমকে উঠেছিলেন, আমার ১ সেকেন্ড সময় নষ্ট হয়েছিল। তাই তিনটা গুলী করার পর কিছুটা শঙ্কার মধ্যে ছিলাম তার মৃত্যু নিয়ে। কিন্তু এরই মাঝে পেছন থেকে আরেকটা গুলী এসে মোজাম্মেল সাহেবের মাথা বরাবর ভেদ করল। আতিকের এই একটা জিনিস আমার খুব ভাল লাগে। একদম নির্ভুল নিশানা। কোন কাজ অসম্পূর্ণ রাখাতে আতিকের ভীষণ খুত খুত রয়েছে।
বাইক স্টার্টের আওয়াজ, যথানিয়মে পেছনে উঠে বসলাম। ৭ সেকেন্ড মিশন শেষ। বাইক চলা শুরু করল। ''ব্যাংকে একটু দাঁড়াতে হবে, কাজ আছে'' ঠান্ডা উত্তেজনাহীন কন্ঠস্বর আমাকে মুগ্ধ করল।
উৎসর্গ ও কৃতজ্ঞতায় সুপ্রিয় ব্লগার লিরিকস আপুকে যিনি অত্যন্ত কষ্ট করে নিরলস ভাবে বাংলা গানের গীতিকবিতা দিয়ে সামহোয়্যার ইন ব্লগকে সমৃদ্ধ করার কাজটি করে যাচ্ছেন। আপুর জন্য অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা চিরদিনের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৩৪