somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সালাত (নামায) জাহান্নামেরও চাবি – ৫ম পর্ব

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

”সালাত কায়েম করো সূর্য হেলে পড়া, রাতের আঁধারে আচ্ছাদিত হওয়ার কারণে এবং ফযরের কোরআন-এর জন্য। নিশ্চয়ই ফযরের কোরআন হলো প্রমাণিত” (সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৭৮)।
উপরোক্ত আয়াতটির চমকপ্রদ যেসব অনুবাদ ও ব্যাখ্যা আমাদের মস্ত মস্ত পন্ডিত তাফসীরকারকরা দিয়েছেন সেসব পড়লে আপনাকে ভিরমি খেতে হবে এবং ছিটকে পড়তে হবে আসল বিষয় থেকে। কয়েকটি উদারহরণ না দিলে আপনারা বুঝবেন না। একজন লিখেছেন (সঙ্গত কারণে নামগুলো বলছি না কারণ ব্যক্তিকে আক্রমণ আমার উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য জ্ঞানের দৈন্যটি দেখিয়ে দেয়া এবং মানুষদের সত্য ও সঠিক বিষয়টি জানিয়ে দেয়া),
”সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম কর এবং কায়েম কর ফজরের সালাত। ফজরের সালাত পরিলক্ষিত হয় বিশেষভাবে।” (কোথায় ’ফজরের সালাত’ আর কোথায় ’ফজরের কোরান’!)
আরেকজন লিখেছেন, ”সালাত কায়েম করো সূর্যের হেলে পড়া থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত, আর ফজরের কোরান পাঠ। নিঃসন্দেহ ফজরের কোরান পাঠ পরিলক্ষিত হয়”। (’কোরান পাঠ’-এর কোন কথা আয়াতটিতে নেই)
অন্য আরেকজন লিখেছেন, “Perform As-Salat (Iqamat-as-Salat) from mid-day till the darkness of the night (i.e. the Zuhr, ‘Asr, Maghrib, and ‘Isha’ prayers), and recite the Quran in the early dawn (i.e. the morning prayer). Verily, the recitation of the Quran in the early dawn is ever witnessed (attended by the angels in charge of mankind of the day and the night)” (অনুবাদক এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আবিষ্কার করে ফেলেছেন!)।
এবার আসুন আমরা জানতে চেষ্টা করি কেন মহান আল্লাহ সালাত তথা নামায কায়েম করতে বললেন সূর্যের হেলে পড়ার কারণে, রাতের আঁধারে আচ্ছাদিত হওয়ার কারণে এবং ফযর তথা ভোরের কোরআন এর জন্য। আমি আমার আগের অনেক লেখাতে বলেছি কোরআনে যেখানেই মহান আল্লাহ কোন রহস্যের কথা উল্লেখ করেছেন সেখানেই রূপকের আশ্রয় নিয়েছেন আর এ রহস্যের ভেদ তাঁদের পক্ষেই উদঘাটন করা সম্ভব যাঁরা নিজেদের পবিত্র করতে পেরেছে। সেজন্যই মহান আল্লাহ কোরআনে বলছেন,
”পবিত্রগণ ব্যতীত ইহা (কোরআন) কেউই স্পর্শ করে না” (সূরা ওয়াকেয়া, আয়াত: ৭৯)।
যারা নিজেদের ভেতরকে পবিত্র করতে পারেনি তাদের পক্ষে কোরআন বুঝা অথবা স্পর্শ করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। মার্কা মারা তাফসীর আর অনুবাদের করুন দশা এ কারণেই। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন কেন আল্লাহ রহস্যের মধ্যে রূপকের আশ্রয় নিলেন। আমিও প্রশ্ন করব রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কিংবা শেক্সপিয়র এঁদের কবিতা কি সবাই বুঝতে পারে? তাঁরাও তো তাঁদের পদ্যে রূপকের আশ্রয় নিয়েছেন। কেন? বিখ্যাতদের লেখা বুঝতে হলে আপনাকে বোধগম্যতার একটা পর্যায়ে অবশ্যই পৌঁছতে হবে যা অধ্যবসায় আর সাধনা ব্যতীত অসম্ভব। ঠিক কোরআন অনুধাবন করতে হলেও আধ্যাত্মিকতার একটা অবস্থানে অবশ্যই আপনাকে যেতে হবে যা একজন কামেল মুর্শিদ তথা আল্লাহওয়ালা ব্যতীত সম্ভব নয়। অধ্যাত্ম জ্ঞান ছাড়া কোরআন নিয়ে কিছু বলতে যাওয়ার অর্থ হল সাঁতার না জেনে সাগরে অবগাহনের চেষ্টা করা।
আয়াতটিতে সূর্যটি হল আমাদের জীবন তথা আয়ু। জীবন কিন্তু থেমে নেই। সূর্য যেমন উদয় হয়ে ধীরে ধীরে পূর্ণতায় এসে আবার ঢলে যেতে থাকে ঠিক মানবজীবনটারও ঐ একই দশা। শিশুকাল শেষে যৌবনে এসে আবার বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হওয়া এবং এক সময় মৃত্যুর অন্ধকূপে পতিত হয় যাকে কোরআন উপমায় বলছে রাতের আঁধার। কোরআনে মানব ব্যতীত অন্য কোন সৃষ্টিকে সালাত কায়েম করতে বলা হয়নি যদিও বা তাদেরও বাল্য, যৌবন ও পরিণতি আছে। অন্য কোন সৃষ্টিকে কেন সালাত কায়েম করতে বলা হয়নি? কারণ তাদের কাউকেও কোরআন দেয়া হয়নি।
”নিশ্চয় আমরা তোমার উপর কোরআন নাযেল করেছি” (সূরা ইনসান, আয়াত: ২৩)।
একমাত্র মানবকেই কোরআন দেয়া হয়েছে। আর তাই সেই মানবকেই বলা হচ্ছে সালাত কায়েম করতে ফযর তথা ভোরের কোরআনের পরিচিতি লাভ করার জন্য। সালাত কায়েম হয়ে গেলেই নিজের প্রথম পরিচয় তথা কোরআনের রহস্যই প্রথমে লাভ হয়। এবং এ রহস্য যার অবগত হয়েছে সেটা তার কাছে স্পষ্টরূপে প্রমাণিত কারণ তখন সে বুঝতে পারে কোরআন আসলে কী। আর তাই বলা হয়েছে ’ফযরের কোরআন হলো প্রমাণিত’। নিজের ভেতর যখন যৌবন প্রকাশিত হয় সেটা বাইরের কেউ না বুঝলেও নিজে কিন্তু ঠিকই বুঝি এবং নিজের যৌবন নিজের কাছে স্পষ্টরূপে প্রমাণিত (উদাহরণ দিলাম না, দয়া করে বুঝে নেবেন)। ঠিক কোরআন যার ভেতর উদ্ভাসিত হয়েছে একমাত্র সে-ই বুঝে যে কোরআন একটি নূর এবং এর ওজনও আছে। আরো অনেক রহস্য আছে কিন্তু বলা যাবে না। তাই জীবনসূর্য রাতের আঁধারে ঢেকে যাবার আগে সালাত কায়েম করুন এবং পরিচয় লাভ করুন কোরআনের আর মুক্তি লাভ করুন জাহান্নাম থেকে।

৪র্থ পর্বঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×