somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিবির: কাছ থেকে দেখা-৩

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিতীয় পর্ব

প্রথম পর্ব

সেই ১০ মিনিটের কথোপকথনের পরের দিনই আমাকে বলা হলো রুম চেন্জ করতে। বলে রাখা ভালো এর পরেও আরো কয়েকবার আমাকে রুম চেন্জ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এর কয়েকবার আবার পরীক্ষার সময়। শিবির যাদেরকে পছন্দ করে না তাদেরকে শাস্তিমূলক ভাবে রুম চেন্জ করিয়ে দেয়া হয়। আর রুম চেন্জটা হবে শাস্তিমূলক বদলীর মত। হলের সবচেয়ে খারাপ সিটগুলোর একটাতে তাকে থাকতে বাধ্য করা হয়। অথবা এমন একজনের সাথে থাকতে দেয়া হবে যার সাথে থাকাটা সত্যিই কঠিন। সেই কঠিনটাকে আরো কঠিন করার জন্যই আমাকে দেয়া হলো এমন এক রুমে যেটি হলের খারাপতম রুমের একটি। আর রুমমেট হিসাবে যাকে পেলাম সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়। এস.এস.সি. পাশ করার ১৪ বছর পর সে ইন্টারমিডিয়েট পড়ছে। তারচেয়েও বড় পরিচয় সে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর পাতিনেতা গোছের কেউ একজন। আমার কাছে তার এসব পরিচয় ছাপিয়েও যেটি বড় হয়ে উঠেছিল তা হল সে ছিল স্রেফ একজন মানসিক রোগী। তাকে সরাসরি মানসিক প্রতিবন্ধী বলাও যায়। এমন একজনের সাথে মানিয়ে নিতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। সারাদিন বিড়বিড় করে কী যেন বলতো আর সারারাত ২০০ ওয়াটের এক বাল্ব জ্বালিয়ে বাংলা কবিতা পড়তো। তাকে কে বোঝাবে যে ইন্টারমিডিয়েটে বাংলা কবিতা আসে না। পড়ে বুঝলাম যে সে আসলে আমাকে সর্বপ্রকারে ডিস্টার্ব করার পণ করেই নেমেছে। আরো কিছুদিন পর জানতে পারলাম এই রুমে আগে আরেকজন ছাত্রকেও শাস্তিমূলক বদলী করার কিছুদিন পর সেই ছাত্র তল্পিতল্পা নিয়ে হল থেকেই বদলী হয়ে গিয়েছিল। তার কাছে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর কিছু লোক এসে গল্প করতো। তারা তখনি আসতো যখন আমি ঘুমাতাম অথবা পড়তে বসতাম।

সেই রুমে উঠার একমাসের মধ্যেই আমার একটি দামী ওয়াকম্যান সহ আরো অনেক কিছূই চরি করেছিল সে। চুরি যে সেই করেছিল তা আমি নিশ্চিত। তার প্রমাণও সে রেখে গিয়েছিল। এর কিছুদিন পর আবার টাকা চুরি। এভাবেই চলছিল তার সাথে আমার বসবাস।

আমি ঠিক করেছিলাম শিবির আমার সাথে যাই করুক আমি হল ছাড়ছি না। কারণ আমার ধারণা হয়েছিল যে শিবির আর যাই করুক আমার গায়ে হাত তুলবে না। কারণ শিবিরকে যতদূর চিনি তারা উগ্র সাম্প্রদায়িক হলেও সরাসরি হিন্দুদেরকে কিছু করে না বা বলেও না। তবে তাদের কার্যকলাপ এমনভাবে চালায় যেন কোন হিন্দু ছেলে হলে থাকতে না পারে। আমি যতদিন হলে ছিলাম ততদিন আমি দেখিনি আমাদের হলে কোন হিন্দু ছেলে ভাল কোন রুমে থাকতে পেরেছে। সিঙ্গেল রুমে কোন হিন্দু ছেলে থেকেছে বলেও মনে করতে পারছি না।

শিবিরের আরেকটি মারাত্মক স্ট্র্যাটেজি হলো নন-মুসলিমদের দিয়ে শিবিরের বিভিন্ন মিটিং বা কোন অনুষ্ঠানে শিবিরের গুণকীর্ত্তন করানো। বিনিময়ে সেই গুণকীর্ত্তণকারী পাবে হলে বা কটেজে থাকার একটু জায়গা। আমার এক সহপাঠীকে দেখেছি এমনভাবে কটেজে সিট করে নিতে। তার আর কোন বিকল্প উপায় ছিল না।

এবার আসি সেই মানসিক রোগীর প্রলাপে। তার কার্যকলাপ একপর্যায়ে এমন অবস্থায় পৌঁছেছিল যে আমি আমার রুমে আসতে স্বচ্ছন্দবোধ করতাম না। সারাদিন বাইরে বাইরে থাকতাম আর রাতে এস শুধু ঘুমাতাম। সেটিও তার ২০০ ওয়াটের বাল্বের যন্ত্রণা সহ্য করে। এভাবেই দাঁত কিড়মিড় করে চলছিল দিন। অবস্থা যখন চরমে তখনকার কোন একদিন সন্ধায় রুমে ফিরে দেখি ছলাৎ ছলাৎ আওযাজ। সে সময় হলে পানির সমস্যা ছিল বলে বালতিতে পানি জমা করে রাখতাম। সেই বালকিত থেকেই শব্দ আসছিল। কিছুটা ভয় পেয়ে লাইট জ্বালালাম। দূর থেক দেখার চেষ্টা করলাম আসলে বালতির ভিতরে কী আছে। বালতির ভিতরে একটা বড়সড় সাইজের গেছো ইঁদুর দেখে রোমাঞ্চকর কিছু মিস করার হতাশা নিয়ে বালতি টা বারান্দায় এনে চারতলা থেকে পানি সহ ইঁদুরটাকে ফেলে দিলাম। গত কয়েকদিনের জমানো ক্ষোভ যেন নিমিষেই উধাও। মনে হলো ইঁদুর নয় যেন একটা শিবিরকেই চারতলা থেকে ফেলে দিলাম। কী যে আনন্দ হয়েছিল সেই সন্ধায় !!!!

আমি আমার রুমে কোন বন্ধুকে আসতে বলতাম না্ খুব আনঈজি ফিল করততাম। এমন এক রুমে থাকতাম, কীভাবে থাকতাম, এখন ভাবি। প্রায় চার মাস এই দুর্বিসহ জীবন যাপনের পর শিবিরের বোধহয় দয়া হলো আমার প্রতি। আবার আদেশ জারি হলো রুম চেন্জের। এবারের রুমটাও একই ধাঁচের। পার্থক্য সেখানে পেয়েছিলাম আমর রুমমেটদের দীর্ঘ তালিকার মধ্যে সবচেয়ে ভালো একজনকে। এবং সাথে পেলাম এমন আরো একজনকে যে কি না ক্যাম্পাসের সকল মারামারিতে হাত লাগাতো। তবে তার সম্বন্ধে যত খারাপ কথা শুনেছি আসলে তাকে তত খারাপ আমার কখনো মনে হয়নি। সে শিবির করতো না কিন্তু শিবির তাকে ঘাটাতোও না। তাকে আমি কখনো শিবিরের কারো সাথে মিশতেও দেখিনি সে ভাবে।

আমার পাশের রুমেই হল সভাপতির রুম। এক বিশাল রুম একা দখল করে তার বসবাস। আপাদমস্তক ভদ্রলোক। নিজে কোন কিছু করেন না। পোলাপাইন দিয়ে করান। এটা শুধু যে হল সভাপতির রুম ছিল তাই নয়, এটা হলের টর্চারিং সেলও ছিল। মুখে কাপড় গুজে, গায়ে কম্বল বা লেপ মুড়ি দিয়ে, মোজার ভেতর বালি ঢুকিয়ে কিছু মাইরের সিস্টেম আছে। তা এখানে প্রয়োগ করা হতো। ভেতরে হাড় ভেঙ্গে যাবে কিন্তু গায়ে একটা দাগও পড়বে না। বাইরে থেকে ধপাস ধপাস আওয়াজও শুনেছি কয়েকদিন। কিন্তু কোন গোঙ্গানির শব্দ পাইনি। পরে শুনতাম হাসপাতালে তারাই নাকি সিএনজি করে পাঠাতো।

একবার এক চোর ধরা পড়ার পর তাকে যে নৃসংস ভাবে মারা হয়েছে তাতে করে সেই চোর ১৩ দিন পর হাসপাতালে মারা গেছে। কোন মামলা হয়েছে বলে শুনিনি। মরে যাবার খবরটাও লোকমুখে শোনা। কারণ এসব খবর উচ্চারণ করতে মানা। ক্যাম্পাসের ফাঁকা ময়দানেও কেউ শিবিরের বিরুদ্ধে কোন কথা উচ্চারণ করতে সাহস পেত না। আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেলেও ফিসফিস করেই কথা বলতো।

চলবে....

দ্বিতীয় পর্ব

প্রথম পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:০৬
১৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×