somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিবির: কাছ থেকে দেখা-২

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব

তৃতীয় পর্ব

সদস্য সম্মেলনের নামে শিবিরের চাঁদাবাজি নিয়ে অনেকে অনেক কথা লিখেছে। এই ব্লগেও এসেছে কিছু কথা। চাঁদাবাজির ধরণটা অদ্ভুদ। আপনার কাছে কিছু চাঁদার বই নিয়ে আসবে। সবগুলো বই আপনাকে দিবে না। তারা আপনার চাঁদা দেয়ার ক্ষমতা এবং মানসিকতা জানে। সেই অনুসারে ১০০০, ৫০০, ১০০ বা ৫০ টাকার বই আপনার সামনে মেলে দিয়ে বলবে যেকোন একটা বেছে নিতে। আপনি না করতে পারবেন না। যারা আপনার সামনে চাঁদার রসিদ মেলে ধরবে তাদের ফেরানোর ক্ষমতা আপনার থাকবে না। কারণ আপনাকে কটেজে বা হলে থাকতে হবে। আর থাকতে হলে তাদের কথা শুনতে হবে।

আমি এই লেখা লিখছি নিজের বীরত্ব দেখানোর জন্য নয়। শিবিরের কাছে পরাজিত এক ছাত্রের কথা এগুলো।

সমস্য সম্মেলনের জন্য আমাকেও চাঁদা দিতে হয়েছিল। তবে তা পুরো শিক্ষাজীবনে একবারই। কটেজে সিট পেতে আমাকে যে পরিমাণ ঘুরতে হয়েছিল তাদের পেছনে আমিও ঠিক তার কাছাকাছি পরিমাণ ঘুরিয়েছি তাদেরকে আমার পেছনে। তারপর চল্লিশ টাকা দিয়েছি পঞ্চাশ টাকার রসিদে। ( দশ টাকা লাভ !!)

দ্বিতীয় বর্ষের শুরুতেই সিট পেয়ে যাই হলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব আর হলে থাকবো না সেটা কিছুতেই হতে পারে না্ তাই কণ্ঠে আবারো বিনয় নিয়ে এসে আবারো সালাম পর্ব শুরু করতে হলো। অনেক্ই তখন বলছিল, কটেজেই ভালো, হলে উঠার কী দরকার,,,। কিন্তু হলে উঠতেই হবে এই পণ করে থাকলাম। হলে সিট বরাদ্দ টা বলা যায় মেধার ভিত্তিতেই হতো। সে হিসাবে মেধা তালিকায় উপরের দিকে (সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে) থাকা একজনের ভালো রুম বরাদ্দ হবার কথা। কিন্তু শিবির তো মানুষ না। তাদের কথামতো হলের প্রভোস্ট চলেন। আমাদের সময়ে যে কয়জন নন-মুসলিম ছেলে হলে সিট পেয়েছে তাদের কারোরই বরাদ্দকৃত রুম ভালো ছিল না। আমি প্রতিটা সিট পর্যালোচনা করে দেখেছি, হলের সবচেয়ে এবং সবচেয়ে খারাপ সিটগুলো বরাদ্দ হতো নন-মুসলিমদের জন্য। বরাদ্দ যদি খারাপ সিট হয় তবে শিবির ভালো সিট দেবে কোথা হতে। খেয়াল করে দেখুন, সবচেয়ে খারাপ সিটে থাকবেন, নাকি কটেজে থাকবেন, নাকি শহরে মেসে থাকবেন? শুরুতেই নিরুৎসাহিত করা হলো সবচেয়ে খারাপ সিটগুলো দিয়ে। এই সিটগুলো দেয়া হয় এইজন্য যে, তাতে করে অনেকে হলে উঠবে না এবং সেই সুযোগে তারা তাদের নিজেদের লোক হলে রাখতে পারবে। আমিতো পণ করেই রেখেছি, যত কিছুই হোক হলেই থাকবো। তারপর আবার শুরু করলাম হল সভাপতির দরবারে যাতায়াত। টানা ৩১ দিন ঘুরে তার মন কিছুটা গলাতে পারলাম। তিনি একটা সিট দিয়ে করুণা করতে রাজি হয়েছেন। আর এতেই আমি খুশিতে আত্মহারা। সঙ্গে সঙ্গেই বিছানাপত্র নিয়ে হলে হাজির। সেই সভাপতি আমার নিজের বরাদ্দকৃত রুম দিলেন না। এটা নাকি শিবিরের নিয়মে নাই!! দিলেন এমন একটা সিট যেখানে অন্য একজন থাকেন, যিনি আপাদত নেই। আমি অবশ্য তাতেই খুশি। খুশি না হয়ে কি পারি, 'হল' বলে কথা!!!

হলে উঠার ষষ্ঠতম রাতে রুমে ফিরে দেখি আমার রুমে শিবিরের অনেক রথী-মহারথী। তিনজন থাকতাম আমরা। একজন আবার বহিরাগত। রুমে এসে ডান হাতখানা কপালে তুলে পাওনা সালাম টা দিলাম। তাদের কাছেই শুনলাম, ইসলামী দাওয়াতী পক্ষ' চলছে। তো, আমি বললাম, ''তাহলে আমি যাই, আপনারা দাওয়াতী কার্যক্রম শেষ করুন।'' আমাকে যেতে দেয়া হয়নি। বলা যায় একপ্রকার জোড় করেই আমাকে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন কথার মাঝে, এক পর্যায়ে যিনি দাওয়াতী বয়ান দিচ্ছিলেন, তিনি সবাইকে প্রশ্ন করলেন, ''তাহলে আপনারা স্বীকার করে নিচ্ছেন, রাসুলই হচ্ছে একমাত্র.......'' এবং সবার কাছ থেকে আলাদা আলাদা ভাবে স্বীকারোক্তি আদায়ের এক পর্যায়ে আমাকে প্রশ্ন করাতে আমি উত্তর দিলাম, "না, আমি স্বীকার করি না"। আমাকে যারা চিনতেন এবং যারা চিনতেন না তাদের সবাই আমার "না" শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লেন। আমি বললাম, "আমি যেহেতে মুসলিম নই, তাই আমি কখনোই স্বীকার করবো না।" তিনি আমাকে নানা ভাবে বুঝাচ্ছেন কিন্তু আমিতো বুঝি না। শেষে তিনি বললেন তিনি আমার সাথে আলাদাভাবে কথা বলবেন। আমি রাজি হলাম। কিন্তু আমার রুমমেট রাজি হচ্ছেনা। আমি আমার রুমমেটকে বললাম, "সমস্যা হলে আমার হবে, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।" আমার রুমমেট ঐ শিবির নেতাকে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন, আমার হয়ে স্যরি বলেছেন। কিন্তু যেখানে আমি নিজেই তার সাথে আলাদা রুমে আলাদা ভাবে কথা বলতে চেয়েছি সেখানে তার আমার হয়ে স্যরি বলাটা আমার নিজেরই পছন্দ হয়নি।

আমার রুমমেট দুইজনকে, এবং অন্যান্য শিবির নেতাদের বাইরে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় রেখে আমরা দুইজন, আমি আর সেই শিবির নেতা, যে কি না পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি পর্যন্ত হয়েছিল, এক রুমে গেলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম না আসলে মাইর খাবো কি না। দরজার সিটকিনি আটকারো দেখে কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। আমিতো আর পালাতেও পারছিনা। অনেক বিনয়ের সাথে তিনি আমাকে বসতে বললেন বিছানায়। আমার দুইজন মুখোমুখি বসা। প্রথম কথাটা আমিই বললাম। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আলোচনা কতক্ষণ চলবে। তিনি জানালের বেশিক্ষণ না, মাত্র ১০ মিনিট। আমি তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম তাহলে সেই ১০ মিনিট থেকে ৫ মিনিট আমার, ৫ মিনিট তার। আমার কথা বলার ধরণ দেখে তিনি তা মেনে নিলেন এবং তার কথা শুরু করলেন। কথা আর কিছু না, ইসলাম সম্বন্ধে কিছু কথা। আমি শুধু শুনে গেলাম। কথার এক পর্যায়ে আবারা সেই তীক্ষ্ণ প্রশ্ন...."আপনি স্বীকার করেন কি-না?" আমি কিছুই বলিনি তার ৫ মিনিটের সময়। ৫ মিনিট শেষ হলে তাকে জানালাম এবং আমি তাকে বললাম যে আপনার কথা আমি মেনে নিচ্ছি, কিন্তু আপনি আল্লাহর কথা বলছেন, আমি ভগবানের কথা বলছি। আমি ভগবান বিশ্বাস করি, আল্লাহ নয়। আমি কেন ভগবান বিশ্বাস করি সে সম্বন্ধে তাকে জানালাম। তারপর প্রশ্ন করলাম, "আপনি কি স্বীকার করেন, ভগবানই..." তিনি সহজ বাংলাতে বললেন, "তা কেন করবো?"

আমি তাকে জানালাম, "তাহলে আমাকে কেন করতে বলছেন। যেটা মেনে নেবার মানসিকতা আপনার নেই সেটা আপনি আমাকে কেন মেনে নিতে বলছেন? আপনি কি হিন্দু ধর্ম সম্বন্ধে কিছু জানেন, যদি না জেনে থাকেন, তবে জানুন, বেদ-গীতা পড়ুন, তারপর তুলনা করুন। যদি আপনার ভালো না লাগে তবে আপনি আপনার যা খুশি করতে পারেন। তবে আপনি কোনভাবেই আমাকে যা বলেছেন, তা বলতে পারেন না।"

তারপর আর কথা হয়নি। তারপর যা হয়েছে সেটা আরো ভয়ংকর। না, মাইর খাইনি, রগও কাটেনি। কিন্তু ঐ শিবির নেতা আমাকে ভুলতে পারেনি।

তার পরদিন থেকে শুরু হলো হল জীবনের বিভীষিকাময় দিনগুলো।

চলবে........
প্রথম পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:১৫
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×