somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিবির: কাছ থেকে দেখা

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। নামটা শুনলেই অনেকে আঁতকে উঠে। আমার বাবা মা আত্মীয় পরিজনদের অবস্থাও তার ভিন্ন ছিল না। শিবির নামক কিছু একটা থেকে কীভাবে ভাল থাকা যায়। কীভাবে তাদের সাথে সখ্য রেখে চলা যায় সে উপদেশনামা সাথে করে ক্লাস শুরু করলাম। প্রথম ক্লাস, আসলে ঠিক ক্লাস না, এক স্যার এসে ওরিয়েন্টেশন টাইপ কিছু একটা করাচ্ছিলেন। উনি নাকি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান। ডিপার্টমেন্টেরও চেয়ারম্যান থাকে ঐ দিনই জানলাম। হুট করে একদল ছেলে, যাদের বেশ কয়েকজনের গালে চমৎকার ঢংয়ে দাড়ি, এসে স্যারকে এক পর্যায়ে জোড় করেই ক্লাস থেকে বের করে দিয়ে শুরু করলেন নিজস্ব লেকচার। সেখান থেকেই আমার আমার প্রথম শিবির দর্শন। তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হলো, তাদের চেয়ে ভালো লোকও কি পৃথিবীতে আছেন!! পুলকিত, শিহরিত আমি ভাবছি, বাসা থেকে আমাকে শিবির সম্বন্ধে তবে ভুল ধারনাই দেয়ো হয়েছে।

হ্যাঁ, শিবির সম্বন্ধে আমাকে ভুল ধারণাই দেয়া হয়েছে। আমার ধারণা ছিল শিবির রগ কাটে, ছাত্রলীগের সাথে মারামারি করে আর কারণে অকারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখে। যার কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েল এত দুর্নাম। এত সেশন জট। কিন্তু দিন যায়...ধারণা পাল্টায়। ধারণা আর ধারণ করে রাখতে পারি না। প্রকাশ পেয়ে যায়। মনের ভিতর কেবলি আঁকিবুকি করে ধারণাগুলো। শিবির শুধু রগ কেটেই নয়, রগের যায়গাই রগ রেখেও ওরা যা করে সে কথাতো আমার বাসার কেউ বলেনি আমাকে।

প্রথম বর্ষে হলে সিট পেলাম না, যদিও হলে বৈধ সিটের অধিকারী অনেকেই হলে থাকতে পারে না। আর আমিতো কেউ না, এমনকি শিবির করার যোগ্যতাও রাখি না। যাই হোক, যারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সম্বন্ধে কিছু জানেন, তারা নিশ্চয় জানেন, কটেজ বলে কিছু ছাত্রাবাস সেখানে আছে। পরিচিত এক বড় ভাইকে বললাম, কটেজে সিট চাই। তার পরিচিত, তারই ডিপার্টমেন্টের এক বড় ভাই, যিনি আবার শিবির এর সভাপতি (কটেজ শাখা !) তার পেছনে কত দিন ঘুরেছি, আজ এত বছর পরে আর মনে করতে পারছি না। তবে এতটুকু মনে আছে যে তার সাথে দেখা করার সময়গুলো হতো, 'মাগরিবের পর, আসরের পর, জু্ম্মার পর' টাইপের। ফজরের পর দেখা করাটা ছিল এক ধরণের শাস্তির মতো। প্রতিবারই দেখা করার সময় হাত দুইটা ঠিক কীভাবে রাখলে ঐ ভাই খুশি হবেন তা ভেবে কুল কিনারা পেতাম না। কণ্ঠে বিনয় ঢেলে দিয়ে তাকে বোঝাতাম যে সিট টা আমার কত প্রয়োজন। এইভাবে বহু দিবস-রজনী পার করে একটা সিট পেলাম। সিটতো নয়...আহারে...বৃষ্টি হলে সে বৃষ্টির ছোয়া ঘরের ভিতর থেকেই পাই আমি।

সিট পাওয়াই তো শেষ নয়। প্রতি সপ্তাহেই সাংগঠনিক মিটিং এ ডাকতো, বায়তুল মাল নিতে আসতো। ততদিনে আমি ভালোভাবেই বুঝে গেছি শিবির কি পদার্থ। আমি কটেজে সিট পাবার পরেই ঠিক করলাম, আর নয়, নমঃ নমঃ। এক টাকাও বায়তুল মাল নয়। বায়তুল মাল নিতে আসলে খারাপ ব্যবহার করতাম। আস্তে আস্তে সালাম দেয়াটাও কমালাম। তারাও বুঝতে পারলো আমাকে সিট দেয়াটা ভুল হয়েছে। এখন দিয়েই যেহেতু ফেলেছে আর তো বের করতে পারবে না। এরপর থেকে আমি নিজেই আমর রুমের কর্মকর্তা বনে গেলাম। আমার রুমে রুমমেট কে থাকবে, সেটা আমিই ঠিক করতাম। যেটা আবার শিবিরীয় আইনের পরিপন্হি।

এভাবেই শুরু আমার শিবির বিরোধিতা, আর শিবিরের 'আমি' বিরোধিতা।

চলবে..........
দ্বিতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:৪৬
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×