somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাদের সহযোগিতায় ইংরেজ শাসনের গোড়াপত্তন ?হিন্দু জমিদার শ্রেণী প্রতিষ্ঠিতা এর ইতিহাস

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিরাজউদ্দৌলার পতনের পেছনে প্রধান কারণ ছিল কুসিদজীবী মহাজন শ্রেণীর হিন্দুদের ইংরেজের সঙ্গে সহযোগীতা। আর তখন তার সঙ্গে একইসময় যুক্ত হয় ইংরেজদের কুটকৌশল। সিরাজউদ্দৌলার পতনে বাঙ্গালী মুসলমানদের জন্য আশাভঙ্গের কারণ হয়। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বছর হচ্ছে ১৭৯৩ সাল। সে সময় ভারতের গভর্ণর জেনারেল লর্ড কর্ণওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করে ছিলেন। সেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমির খাজনা এবং রাজস্ব আদায়ের বিশেষ পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়।আর তখন সেই বিশেষ পদ্ধতির ফল হিসেবে মুসলমানদের ভূস্বামীগত অধিকার কৌশলে বিলুপ্ত করা হয় এবং মুসলমান জমিদারদের হিন্দু আমলা এবং গোমস্তারা ক্রমান্বয়ে সেসব জমিদারি আত্মসাত করেন আর প্রতাপশালী জমিদারে পরিনত হতে থাকেন বা হন।সবদিকদিয়ে মুসলমানরা স্বত্বহীন অসহায় মানবগোষ্টিতে পরিনত হন। আর এর পর সিপাহী বিদ্রোহের ব্যার্থতা মুসলমানদের জন্য আরো চরম সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।সেই তিনটি ঘটনাই ইংরেজ রাজত্বে মুসলমানদের অসহয়তা প্রমানিত করে। মুসলমানরা রাজশক্তি হারায়। আর একই সঙ্গে ইংরেজরা এদেশে তাদের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং ইংল্যান্ডের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করার জন্য রাজস্ব এবং জমিদারি ব্যবস্থার যেসব সংস্কার করল তার সবই গেল মুসলমানদের স্বার্থের প্রতিকূলে।চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তনের ফলে এবং সঙ্গে সঙ্গে নিস্কর বা লাখেরাজ ওয়াকফ জমির বাজেয়াপ্তির ফলে মুসলমানরা কপর্দকহীন নিঃস্ব হলো এবং মুসলমান জমিদারদের হিন্দু তহশিলদার নায়েব মুহরি এবং গোমস্তা ইংরেজদের কৃপা অনুগ্রহে ভূস্বামীর অধিকার লাভ করে। শিক্ষা ক্ষেত্রে এবং সংস্কৃতি ক্ষেত্রে মুসলমানদের উপর আরেকটি আঘাত এল যখন লর্ড বেন্টিংক ফার্সির পরিবর্তে এদেশে ইংরেজিকে রাজভাষা হিসাবে ঘোষনা করেন। দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক জীবনে তার ফলে যে পরিবর্তন এল তা সুদুরপ্রসারী ছিল। কিন্তু মারাত্মক সর্বনাশ হলো ভাষা এবং সংস্কৃতি ক্ষেত্রে মুসলমানদের জন্য। মুসলমানদের যখন এমন অবস্থা তখন কিন্তু বাঙ্গালী হিন্দুরা আপনা স্বার্থ চিন্তায় সুপরিকল্পিতভাবে ইংরেজদের সহযোগীতা করেন।

১৮০১সালে যখন সিভিলিয়ানদের বাংলা শিক্ষা দেয়ার জন্য ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং হিন্দুদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৮১৭ সালে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে শিক্ষকতা করতে গিয়ে এবং বাংলা গদ্যসৃষ্টিকে উপলক্ষ করে কোলকাতার মান্যগণ্য প্রতাপশালী হিন্দুদের সঙ্গে ইংরেজদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ঘটে।হিন্দু কলেজে বাঙ্গালী হিন্দুরা লেখাপড়া করতে থাকেন এবং ইংরেজি শিক্ষায় মনোনিবেশ করে। সে সমস্ত ঘটনা পরম্পরায় প্রমানিত হয় যে উনিশ শতকের সূচনা থেকেই হিন্দুরা ইংরেজদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগীতা করেছিলেন। রাজস্ব সংস্কারের ফলে ইংরেজদের আশাতীত লাভ হয়েছিল এবং বাংলাদেশের টাকা এবং কাঁচামালের সাহায্যে ইংল্যান্ডের ডান্ডী, বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার প্রভৃতি বাণিজ্য প্রধান শহরগুলোর দ্রুত শ্রীবৃদ্ধি ঘটতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্গালী হিন্দুদের ভাগ্যেরও দ্রুত পরিবর্তন হয় এবং এদেশে প্রতাপশালী নতুন হিন্দু জমিদার শ্রেণী প্রতিষ্ঠিত হয়।উনিশ শতকে কিছু মুসলমান তাদের উপর যে অন্যায় আচরণ হচ্ছে সেজন্য বিক্ষুব্ধ হয়েছিলেন এবং সেজন্য প্রত্যক্ষ সংগ্রামে জড়িয়ে পড়তেও দ্বিধা করেননি। সেক্ষেত্রে তীতুমীরের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মূলত তীতু মিয়ার আন্দোলনের সূত্রপাত ছিল মুসলমান সমাজের জন্য একটি সংস্কার আন্দোলন। সেই সংস্কার আন্দোলনকে ফরায়জী আন্দোলন বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা এবং নদীয়া জেলাকে কেন্দ্র করে তীতুমীর তার আন্দোলন চালাচ্ছিলেন। সেই সংস্কার আন্দোলনে হাত দিতে গিয়ে তীতুমীরকে হিন্দু জমিদারদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হয়। এবং সংঘর্ষ ক্রমশ ব্যাপক আকার ধারন করে হিন্দুরা তীতুমীরের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হয়ে ইংরেজদের সহায়তা কামনা করে। তখন তীতুমীরকে বাধ্য হয়ে স্থানীয় সরকারের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে নারকেলবাড়িয়ায় একটি স্বাধীন সরকারের প্রতিষ্ঠা করতে হয়।

ইংরেজ সরকার তখন বিচলিত বোধ করেন। বারাসাতের সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডার তীতুকে দমন করতে গিয়ে বিপর্যস্ত হন। শেষ পর্যন্ত তীতুকে দমন করবার জন্য মেজর স্কট নামক একজন ইংরেজ কোলকাতা থেকে একটি পদাতিক বাহিনী নিয়ে তীতুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। তীতুমীর বাঁশের কেল্লা তৈরি করে দুর্ধর্ষ ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেন এবং ১৮৩১ সালের ২২ শে নভেম্বর শহীদ হন।ফরাজী আন্দোলন শুরুতে কিন্তু রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না। সে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলমান সমাজে ধর্মীয় আচরনের ক্ষেত্রে যেসব ভ্রান্তি অনুপ্রবেশ করেছে সেগুলোর সংশোধন করা কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে হিন্দু জমিদারগণ সে আন্দোলনকে তাদের ক্ষমতা থেকে উতখাত করার আন্দোলন হিসাবে বিবেচনা করেন। যার ফলে শেষ পর্যন্ত ফারাজী আন্দোলনটা একটি রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিনত হয়ে যায়।

সূত্র ইন্টারনেট।

অতঃ আমার লেখাগুলো বা পোস্টগুলো ইতিহাস বিষয়গুলো বোঝা,জানা,এবং আলোচনার প্রেক্ষাপত । অন্তত কোন
ব্লগার ভাই বোন এবং রাজনীতির নেতা কর্মীদের ব্যক্তি আঘার্ত করার জন্য নয়।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:০১
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×