ছোটবেলা আমরা যে এলাকায় থাকতাম ,সে এলাকায় বহু বংশের বিস্তার ছিল যেমন:-লস্কর বাড়ি,সরকার বাড়ি,মন্ডল বাড়ি,সাহেব বাড়ি,খানপাড়া,পুবপাড়া,পশ্চিমপাড়া,সেপাই বাড়ি । সেপাই বাড়িতে আমাদের যাতায়াত ছিল, সেপাই বাড়ির নিতাই সেপাই আমার বাবার বন্ধু ছিল তো , নিতাই সেপাইয়ের সাথে বাবা রোজ বিকেলে জলের ওপর মাচার মধ্য বসে গল্প করতো খুব , তবে সেপাই বাড়ির ছেলে-মেয়েরা আমাকে তেমন পাত্তাই দিত না কি জানিক কেন? হয়তো বড়দের বারণ ছিল । ওরাতো খুব ভালো স্কুলে পড়তো , ঈদ-পুজোঁতে কত কত নুতন কাপড় ওদের ! সব শহর থেকে কিনে আনতো আর আমাদের কাপড় বলতে বাজারের সিপলুকাকার কাকার দর্জি-ট্রেইলার্স ।সিপলুকাকে কেউ কেউ খলিফা বলতো তো, যারা কাপড় বানায় তারা নাকি খলিফা হয় শুনেচিলাম বড়দের মুখে প্রাচীণকালের ধনী কাপড়ের ব্যাবসায়ীরা খলিফা ছিল ।
লস্করবাড়ি:
লস্করবাড়ির বউ,ঝিদের সে সময় খুব দুর্নামছিল । ওদের বাড়ার মেয়েরা স্বামীর সাংসার করতে পারতো না , ওদের অনেকেরই বহুবিয়ে হয়েছিল কিন্তু স্বামীর সাংসার করতে পারেনি তাই ওদের নামে নানা বাজেঁ কথা রটতো । শুনেচিলাম এলাকার কিছু প্রভাবশালীরা কাকাদের সাথে ডির্বোসীদের নাকি সম্পর্ক ছিল ।
সরকার বাড়ি:
সরকার বাড়ির অনেকেই সেকেলে শিক্ষিত ছিল , ওদের বাড়ির পুরুষরা শহুরে কাজ করতো কেউ কেউ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শহুরেই থাকতো , ঈদ-পার্বণে ওরা বেড়াতে আসতো ।
সাহেব বাড়ি:
সাহেব বাড়ির অনেক নাম-ঢাকছিল সেকেলে । ওদের বাসা ছিল রাজপ্রাসাদের মত, ওদের ধন-সম্পর্দ নিয়ে পাড়ার মধ্য মানুষের মিথ ছিল । শুনেছিলাম বিষঞ্চু সাহেব যখন বেচেঁ ছিল তখন নাকি ওদের আরো বেশি প্রভাবছিল । ডাকাতের ভয়ে ওরা কেউ রাতে বাড়ি থাকতো না নাকি , শুনতাম কিছুদিন পর পর সাহেব বাড়িতে ডাকাতরা হানা দিত কিন্তু কোনবারই সফল হতে পারেনি একবার এক ডাকাত রক্ষীরা ধরে ছিল ,তখন দল ধরে আমরা ডাকাত দেখতে গিয়েছিলুম । সাহেব বাড়ির এক বিশাল পুকুর ছিল , আমরা সবাই দল বেধেঁ ঐ পুকুরে স্নান করতে যেতুম , ছোটবেলাই সাহেব বাড়ির মানুষরা বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় চলে গিয়েছিল সব জমি -জমা বিক্রি করে ।
খানপাড়া:
খানপাড়ার মানুষরা খুব ঝগড়াটে ছিল । সামান্য কিছু নিয়েই ওরা ঝগড়া বাধঁতো আর ঝগড়া বেধেই ওরা দল ধরে মারামারি করতে আসতো তাই সাধারণ যারা ওদের এড়িয়ে চলতো । ছোটবেলায় একবার এমন হয়েছিল , এখনো মনে আছে-স্কুল ছুটির পর খোলা জমির উপর দিয়ে যাচ্ছিলুম , খানপাড়ার একলোক আমাকে ধরে নিয়ে বেধেঁ রাখলো আমার অপরাধ ওদের খোলা জমির উপর দিয়ে কেন আমি হেটেঁ যাচ্ছিলাম ! ওরা এতটাই বদছিল ! পর শুনেচি বাবার সাথে ওদের কারো হয়তো কথা-কাটি হয়েছিল তাই ওরা আমার উপর শোধ নিল ।
মন্ডল বাড়ি:
মন্ডলবাড়িকে কেউ কেউ মুন্সীবাড়ি বলতো , কারণ ওদের সব সন্তানদেরকে মাদ্রাসায় পড়াতো । মন্ডলবাড়ির মানুষরা মসজিদের ইমামতি করতো । ওদের বউ-ঝি-সন্তানরা তেমন কারো সাথে মিশতো না । নিজেদের মত থাকতো । ওদের স্ত্রী-মেয়েরা বোরকা পড়তো , ছেলেরা পাঞ্চাবী-পাজাবা পড়তো ।
পুবপাড়াঃ
পুবপাড়া খুব জঙ্গলা টাইপের ছিল । সহজে মানুষ ওখানে যেত না । ওদের এক একজনকে অনেকদিন পর পর দেখতাম এলাকায় । ওদের প্রায় মাটির বাড়ি আলকাতরা দেয়া থাকতো , সব-সময় ওরা মাচাঁ দিয়ে বর্ষায় মাছ ধরতো , ওদের ছেলে মেয়েরা ঘুলা জলাশয়ে প্রচুর সাতঁরাতে পাড়তো ।
পশ্চিমপাড়া:
পশ্চিমপাড়ার মানুষরা খুব গরীব ছিল । ওরা ধানের সময় গেরস্থবাড়িতে কামলা নিত, ওদের বউ -ঝিরাও ওকাজ করতো । কাজ করে ধানপেত ঔধান বেচেঁ সাংসার চালাতো । অন্য মৌসুমে ওদের দেখতাম কোদাঁল-মাজাঁ নিয়ে ওরা দল ধরে কোথাও যেন ছুটছে , ওদের কে সন্ধের আগেই আবার আগের মত দল ধরেই ফিরে আসতে দেখতাম । ওরা খালি জমির উপর দিয়ে পায়েঁ হেটেঁ যেত ,প্রতিদিন এক জায়গা দিয়ে যাওয়ার ফলে বহু জায়গা ঝুরে একটা শাদা রাস্তার মত তৈরী হয়ে গিয়েছিল ! আমরা অনেকেই ওই শাদা অংশদিয়ে রিঙ দিয়ে খেলতাম ।
(জীবনের,ছোট্ট এককাংশের গল্প, মানুষ আজিজ )
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১০