somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষের গল্প

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা আমরা যে এলাকায় থাকতাম ,সে এলাকায় বহু বংশের বিস্তার ছিল যেমন:-লস্কর বাড়ি,সরকার বাড়ি,মন্ডল বাড়ি,সাহেব বাড়ি,খানপাড়া,পুবপাড়া,পশ্চিমপাড়া,সেপাই বাড়ি । সেপাই বাড়িতে আমাদের যাতায়াত ছিল, সেপাই বাড়ির নিতাই সেপাই আমার বাবার বন্ধু ছিল তো , নিতাই সেপাইয়ের সাথে বাবা রোজ বিকেলে জলের ওপর মাচার মধ্য বসে গল্প করতো খুব , তবে সেপাই বাড়ির ছেলে-মেয়েরা আমাকে তেমন পাত্তাই দিত না কি জানিক কেন? হয়তো বড়দের বারণ ছিল । ওরাতো খুব ভালো স্কুলে পড়তো , ঈদ-পুজোঁতে কত কত নুতন কাপড় ওদের ! সব শহর থেকে কিনে আনতো আর আমাদের কাপড় বলতে বাজারের সিপলুকাকার কাকার দর্জি-ট্রেইলার্স ।সিপলুকাকে কেউ কেউ খলিফা বলতো তো, যারা কাপড় বানায় তারা নাকি খলিফা হয় শুনেচিলাম বড়দের মুখে প্রাচীণকালের ধনী কাপড়ের ব্যাবসায়ীরা খলিফা ছিল ।

লস্করবাড়ি:
লস্করবাড়ির বউ,ঝিদের সে সময় খুব দুর্নামছিল । ওদের বাড়ার মেয়েরা স্বামীর সাংসার করতে পারতো না , ওদের অনেকেরই বহুবিয়ে হয়েছিল কিন্তু স্বামীর সাংসার করতে পারেনি তাই ওদের নামে নানা বাজেঁ কথা রটতো । শুনেচিলাম এলাকার কিছু প্রভাবশালীরা কাকাদের সাথে ডির্বোসীদের নাকি সম্পর্ক ছিল ।

সরকার বাড়ি:
সরকার বাড়ির অনেকেই সেকেলে শিক্ষিত ছিল , ওদের বাড়ির পুরুষরা শহুরে কাজ করতো কেউ কেউ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শহুরেই থাকতো , ঈদ-পার্বণে ওরা বেড়াতে আসতো ।

সাহেব বাড়ি:
সাহেব বাড়ির অনেক নাম-ঢাকছিল সেকেলে । ওদের বাসা ছিল রাজপ্রাসাদের মত, ওদের ধন-সম্পর্দ নিয়ে পাড়ার মধ্য মানুষের মিথ ছিল । শুনেছিলাম বিষঞ্চু সাহেব যখন বেচেঁ ছিল তখন নাকি ওদের আরো বেশি প্রভাবছিল । ডাকাতের ভয়ে ওরা কেউ রাতে বাড়ি থাকতো না নাকি , শুনতাম কিছুদিন পর পর সাহেব বাড়িতে ডাকাতরা হানা দিত কিন্তু কোনবারই সফল হতে পারেনি একবার এক ডাকাত রক্ষীরা ধরে ছিল ,তখন দল ধরে আমরা ডাকাত দেখতে গিয়েছিলুম । সাহেব বাড়ির এক বিশাল পুকুর ছিল , আমরা সবাই দল বেধেঁ ঐ পুকুরে স্নান করতে যেতুম , ছোটবেলাই সাহেব বাড়ির মানুষরা বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় চলে গিয়েছিল সব জমি -জমা বিক্রি করে ।

খানপাড়া:
খানপাড়ার মানুষরা খুব ঝগড়াটে ছিল । সামান্য কিছু নিয়েই ওরা ঝগড়া বাধঁতো আর ঝগড়া বেধেই ওরা দল ধরে মারামারি করতে আসতো তাই সাধারণ যারা ওদের এড়িয়ে চলতো । ছোটবেলায় একবার এমন হয়েছিল , এখনো মনে আছে-স্কুল ছুটির পর খোলা জমির উপর দিয়ে যাচ্ছিলুম , খানপাড়ার একলোক আমাকে ধরে নিয়ে বেধেঁ রাখলো আমার অপরাধ ওদের খোলা জমির উপর দিয়ে কেন আমি হেটেঁ যাচ্ছিলাম ! ওরা এতটাই বদছিল ! পর শুনেচি বাবার সাথে ওদের কারো হয়তো কথা-কাটি হয়েছিল তাই ওরা আমার উপর শোধ নিল ।

মন্ডল বাড়ি:
মন্ডলবাড়িকে কেউ কেউ মুন্সীবাড়ি বলতো , কারণ ওদের সব সন্তানদেরকে মাদ্রাসায় পড়াতো । মন্ডলবাড়ির মানুষরা মসজিদের ইমামতি করতো । ওদের বউ-ঝি-সন্তানরা তেমন কারো সাথে মিশতো না । নিজেদের মত থাকতো । ওদের স্ত্রী-মেয়েরা বোরকা পড়তো , ছেলেরা পাঞ্চাবী-পাজাবা পড়তো ।

পুবপাড়াঃ
পুবপাড়া খুব জঙ্গলা টাইপের ছিল । সহজে মানুষ ওখানে যেত না । ওদের এক একজনকে অনেকদিন পর পর দেখতাম এলাকায় । ওদের প্রায় মাটির বাড়ি আলকাতরা দেয়া থাকতো , সব-সময় ওরা মাচাঁ দিয়ে বর্ষায় মাছ ধরতো , ওদের ছেলে মেয়েরা ঘুলা জলাশয়ে প্রচুর সাতঁরাতে পাড়তো ।

পশ্চিমপাড়া:
পশ্চিমপাড়ার মানুষরা খুব গরীব ছিল । ওরা ধানের সময় গেরস্থবাড়িতে কামলা নিত, ওদের বউ -ঝিরাও ওকাজ করতো । কাজ করে ধানপেত ঔধান বেচেঁ সাংসার চালাতো । অন্য মৌসুমে ওদের দেখতাম কোদাঁল-মাজাঁ নিয়ে ওরা দল ধরে কোথাও যেন ছুটছে , ওদের কে সন্ধের আগেই আবার আগের মত দল ধরেই ফিরে আসতে দেখতাম । ওরা খালি জমির উপর দিয়ে পায়েঁ হেটেঁ যেত ,প্রতিদিন এক জায়গা দিয়ে যাওয়ার ফলে বহু জায়গা ঝুরে একটা শাদা রাস্তার মত তৈরী হয়ে গিয়েছিল ! আমরা অনেকেই ওই শাদা অংশদিয়ে রিঙ দিয়ে খেলতাম ।


(জীবনের,ছোট্ট এককাংশের গল্প, মানুষ আজিজ )
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×