অনেক আগে আমরা যে পাড়া গাঁয়ে থাকতুম , সেখানে একটি বাড়ি ডাকাত বাড়ি বলে পরিচিত ছিল । লোকমুখে শুনতুম আয়নাল ডাকাতের কথা , লোকটা নাকি অনেক ভয়ংকর তবে ওরা এলাকায় কোনদিন ডাকাতি করতো না । বহুদুর নাকি ডাকাতি করতে যেত , একসাথে কুড়িজন যেত কোন ধনীবাড়ি ডাকাতি করতে । এলাকার ইউপি চেয়্যারম্যানও ডাকাত পরিবারকে সমীহ করে চলতো । আমি যখন ফাইভ ক্লাস শেষ করে , হাইস্কুলে ভর্তি হলুম বাংলা ক্লাসে নিজের পরিচয় ,বাবার পরিচয় দিতে গিয়ে আয়নাল ডাকাতের মেয়েকে চিনলুম , ওর নাম সুশ্রী । ডাকাতের মেয়ের নাম এত সুন্দর হয় ! আর মেয়েটাও খুব সুশ্রী , অজপাড়াঁ গায়ে এমন সুন্দরী গোছানো মেয়ে নাই বললেই চলে । সুশ্রী যখন পরিচয় দিচ্ছিলো , ওর বাবার নাম বললো, আয়নাল সরদার অথাৎ যাকে আমরা ডাকাত হিসেবে জানি । ক্লাসের মধ্য একটা থম-থমে অবস্থা তৈরী হয়েছিল । পরবর্তিতে ও ডাকাতের মেয়ে বলে , আমরা অগোচরে নানা কথা বলতাম ! কোন মেয়েও ওর সাথে ভয়ে কথা বলতো না , স্যারাও ওকে টিউশনি বা পড়া না পাড়লে চাপ দিত না । বনের ভিতর দিয়ে সাইক্যাল চালিয়ে ও আসতো , লাইব্রেরীরুমে দেখতুম একা একা বই পড়ছে । সুশ্রী ইংলিশে খুব ভালো ছিল, একদিন সাহস করে ওর কাছে গিয়ে বললাম, সুশ্রী গ্যামারে আমি খুব কাচাঁ একটু দেখিয়ে দিবে ? সুশ্রী মাথা নেরে বললো, আচ্ছা । পরদিন সুশ্রী Raymond marphy এর basic grammer দিয়ে বললো, এটা দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে । আমি বললুম, এতো পাঠ্যবই না, এ পড়লে কি পাস করো ? পর সুশ্রী দেখালো , গ্যামার অনেকটা মেথের মত সুত্র জানলে তুমি সব পাড়বে , আর এ বইটা হলো গ্যামারের বাইবেল । একজন ডাকাতের মেয়ে এত চালু,সত্যিই অভাগ হলুম , ও যখন ক্লাসে গড় গড়িয়ে ইংলিশ বলতো স্যারও হাঁ করে তাকিয়ে থাকতো , রহিম স্যারের ইংলিশ বলতে যেয়ে উর্দূর টান এসে পড়তো শুনিচিলাম তার বাবা রাজাকার ছিল । দিন দিন সুশ্রীর সাথে আমার ভালো সম্পর্ক হয়ে যায় , কিন্তু ওর বাবা, মা পরিবারের কথা কখনো জিজ্ঞাস করতুম না , কি জানি ও যদি কষ্ট পায় । ও বাড়ি থেকে নানা মজার খাবার নিয়ে এসে আমায় খাইয়েতো , সত্যিই ওর খাবার পেয়েই অপুষ্টির শরীরটা পুষ্টিতে ভরে যাচ্ছিলো । একদিন সুশ্রীই বললো , আমাদের বাসায় যাবে ? আমি যেন এ শব্দটা শুনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম । একদিন সুশ্রী আমাকে ওদের বাড়িতে নিয়ে গেল , বনের ভিতর বিশাল এক ছাদওয়ালা প্রকান্ড বাড়ি ! শুনেচিলাম ওদের বাড়ির কথা , ডাকাতের ভয়েই কোনদিন আসিনি এ পাড়ায় । সত্যিই মুগ্ধ হওয়ার মত , মনে মনে ভাবলুম ডাকাত হলেও রুচি আছে ওর বাবার । এরপর সুশ্রী একে একে পরিচয় করিয়ে দিলে , বাড়ির সবার সাথে , কত কাজের মানুষ ওদের , মনে হবে ছোটখাট এক রাজপ্রসাদ । সুশ্রী ওর মার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল , ওর মাকে দেখে আমি থ , ডাকাতের বউ এত সুন্দরী হয় ! ঠিক যেন সেকেলের বিটিভির নায়িকা ববিতার মত , এতটাই সুন্দরী ! এত গুছিয়ে কথা বলা তার , কেমন এক অদ্ভূত ঘ্রার্ণ তার শরীরে মিশে ছিল ,পর সুশ্রী একে একে ওদের বাসা ঘুরিয়ে দেখালো বিশাল এক লাইব্রেরীরুম ওদের , আমি ডাকাতকে মিলাতে পারছিলাম না এই পরিবেশে । ডাকাতেও পড়াশুনা করে ? যদিও সুশ্রী বলছিস ওর মা অনেক বই পড়ে ,রবীন্দ্র সঙ্গীত গায় । কিন্তু সুশ্রী ওর বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল না, তার কথা জিজ্ঞাসা করতেই ও বললো, বাবা তো জেলা শহরে বিজনেস করে , সকালে যায় রাত্রিরে বাসায় ফিরে । ঐদিনের মত দুপুরে খেয়ে একটু ছাদে বসে থেকে চলে এলাম । অন্য একদিন সুশ্রী সাইক্যাল চড়িয়ে বহুদুর এক ব্রিজের পাশে নিয়ে আসলো , একদম নির্জন জায়গা । কিছুক্ষণ বসার পর সুশ্রী ওর ব্যাগ থেকে ছুরা বের করলো । আমি কিছুটা হচচকিয়ে গেলাম , ছুরা কেন সুশ্রী ?
সুশ্রীঃ তোমাকে আজকে মেরে ঘুম করে রাখবো , জানো না আমি ডাকাতের মেয়ে ?
আমিঃ মানে কি, সত্যিই মেরে জলে ফেলে দিবে ?
সুশ্রীঃ হুম, মেরে দিব ! ডাকাতের মেয়ের সাথে প্রেম করতে চাও কেন ?
আমিঃ কেন বলেছে ? আমি বলেছি কোনদিন তুমি ডাকাতের মেয়ে ?
সুশ্রীঃ জানি তুমি,মনে মনে তাই বলছো, শুন আমি লিপরিডিং জানি , আমার আম্মু শিখিয়েছে , যার কাছে আমি সব শিক্ষা পাই ।
-আমিও বেকুবের মত ভাবলাম ,পড়াশুনা অনেক করলে হুদয়ের খবরও বুঝি জানা যায় । তাই ওকে সব বলেদিলাম, ক্লাসের কে কি ভাবে , ওর বাবা সম্পর্কে কি ধারণা ছিল ,শেষমেষ বললাম, তোমাকে দেখার পর ওগুলো আর বিশ্বাস করিনি । এরপর কথা বলতে বলতে জঙ্গলা জায়গায় গেলাম, বার বার সুশ্রীকে বুঝাছিলাম তুমি আমার ভালোন্ধু । সুশ্রী ছুরা ব্যাগে ঢুকিয়ে বললো, শুধু বন্ধু আর কিছু না ? ভালোবাস না আমায় ? সুশ্রী ওর কাধঁ ব্যাগটা মাটিতে রেখে জরিয়ে ধর বললো , তোমাকে ভালোবাসি মানুষ । আমি ভয়ে কাপছিলাম , আমার কাপুনি দেখে সুশ্রীর কি হাসি ! পুরুষ মানুষের এত ভয় ? সুশ্রীই জোর করে ওর মুখ আমার মুখে লাগিয়ে অনেকক্ষন ধরে চুমুচ্ছিলো ,আর টানছিল আমার শরীরের জামা-কাপড় খুলে ফেলতে । নিজেকে আর রাখতে পারিনি , পর অনেকক্ষণ ধরে সুশ্রীর দুই পায়ের বাজেঁ নিজেকে অনেকক্ষন নিষ্পেষিত করলাম । সমস্ত ইচ্ছে শক্তির অবসানের পর , দু জনই মাটিতে শুইয়ে থাকলাম । দশ মিনিট পর নিজেদের গুছিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম , সুশ্রীর একহাতে সাইক্যাল কাধেঁ ব্যাগ আর আমি ওর পাশাপাশি হাটঁছিলাম । অনেকক্ষন কেউ কারো দিকে তাকালাম না , যেন তাকালেই লর্জ্বা পেয়ে যাব , চুপচাপ হাটঁছিলাম শুধু । সেদিনের মত যে যার বাসায় ফিরে আসলাম, বাসায় ফিরেই বিছানায় শুয়ে জীবনের প্রথম সুন্দর পবিত্র অনুভূতিকে বার বার স্মৃতি চারণ করলাম । দু দিন সুশ্রী ক্লাসে আসেনি, আমিও ওকে খুজঁতে যাইনি । দু দিন পর বিকেলে ও আমাদের বাসায় এসে হাজির , আমার মা যেন আকাশ থেকে পড়লো , কোন মেয়ে কেন খুজঁতে এলো আমাদের বাসায় । বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ রাঙাছিল , তার মনে বার বার বলছিল যেন , বাসায় ফির সন্ধেয় তোকে আচ্ছা দিব ( মেয়ে বন্ধু দের নিয়ে কিছু বাবা-মার এলারজি থাকে তেমনি ছিল আমার পরিবারের) । সশ্রীর সাথে সাইক্যালে চড়ে পশ্চিমপাড়ার পুকুর পাড়ের নাড়িক্যাল বাগানে গেলাম । সুশ্রীই বললো, সত্যই ওর বাবা এক সময় ডাকাত ছিল , একবার গাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে ওর মাকে ছিনিয়ে আনে ওর বাবা , ওর মা আগে অন্যজনের বধু ছিল , অনেক সভ্রান্ত পরিবারের ছিল । সুশ্রীর মাকে ছিনিয়ে এনে বিয়ে করে ফেলে , এরপর অনেকদিন ওর মার মন বসছিল না এই জীবনে , পর ধীরে ধীরে সয়ে যায় , মেনে নেয় আগের জীবনে তাকে কেউ মেনে নেবে না তাই সংকল্প করলো এই ডাকাকতের সাথেই থাকবে আর ডাকাতকে ভালো করে তুলবে । সত্যিই তাই করলো ওর মা , ওর বাবা ডাকাতী ছেড়ে সাধারণ জীবনে ফিরে এসেছে কিন্তু এলাকায় দুর্নামটা রয়ে গেছে । সুশ্রী বললো , আমার মা শিক্ষিতা নারী, এ জন্যই বাবাও মুগ্ধ সহজেই সব কিছু ছেড়ে দিয়েছে , জানো মানুষ অতীত অনেক জিনিসিই ভয়ংকর হয় , ভয়ংকরের ভেতর থেকে বের করে নিয়ে আসাই আসল মানুষের কাজ , যা আমার মা পাড়ে । এই যে এত পড়ি, জানি, ইংলিশ শিখি সব কিছু মার কাছ থেকেই পাওয়া । এখন আমরা ভালোই আছি , নিজেদের ভেতর কোন অভিযোগ নেই ,জানি এলাকার মানুষ আমাদের ভয়ের দৃষ্টিতে এখনো দেখে ,তাই চাচ্ছি এখানে থেকে সবার সাথে মিশেই সাধারণ হতে । বাবা প্রায়ই বলে , চলো এখান থেকে চলি যাই শহরে , শুধু মার ইচ্ছেতেই আছি । সুশ্রীর কথাগুলো শুনছিলাম , সত্যিই ওর মা অসাধারণ , ডাকাতের জীবনে আলো ফুটিয়েছে । সেদিন সুশ্রীকে চুমু খেয়ে চলে আসলাম বাসায় । বাসায় বাবা, মাও আমাকে কিছু বললো না । স্কুল, পাড়া সবজায়গা্য় রটে গেল আমার আর সুশ্রীর প্রেম । কিন্তু কেউ বাধাঁ দেবার কিছু নেই কারণ সাথে সুশ্রী যুক্ত আছে । ওর বাবা কত ভয় পায় মানুষ !প্রায় মাসখানেক পর সাধারণ কেটে গেল, একদিন সুশ্রী বললো , ওর মা আমাকে তাদের বাসায় যেতে বলেছে । আমি সেজেঁ টেজে গেলাম , সুশ্রীর সাথে যাওয়ার পর সুশ্রীর মা আমাকে টেনে নিয়ে এক রুমেবন্ধি করে রেখেছে , আমি আরো ভয় পেলাম ! শত হোক ডাকাতের রক্ত ! যদি মেরে কেটেঁ ফেলে দেয় , প্রায় ঘন্টা দেড়েকপর সুশ্রীর মা -এসে কড়া গলায় বললো, ওসব কেন করলে মানুষ ?
আমি নিরহ হয়ে বললাম, কি করেছি আংটি ?
সুশ্রীর মা কিছু কড়া গলায়ই বললোঃ চুমু খেয়েছো সুশ্রীকে ?
আমিঃ চুপ করে রইলাম ।
সুশ্রীর মাঃ মন চাচ্ছে, তোমাদের দু জনকেই ইচ্ছেমত পেটাই ! বাচ্ছাপোলাপান পাকামো শিখে গেছে , জানো সুশ্রী গ্যাগনেন্ট হয়েছে ?
আমি গ্যাগনেন্ট শব্দটা ভুলে গেছিলাম তখন আমি তাকে বললামঃ প্যাগন্যান্ট কি ?
সুশ্রীর মার মা এবার বিরক্ত নিয়ে বললো, উফ ! তুমি যে ওকে চুমু খেয়েছো এ জন্য ওর বেটে সন্তান এসে গেছে , তুমি ওর বাবা হবা । আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম, তখনো জানতাম না ওসব করলে সন্তান হয় । আমি আংটিকে বললাম ভুল হয়ে গেছে আংটি আর চুমু খাব বা ! মনে মনে বললাম , কি সাংঘাতিক ব্যাপার । আংটি বললো , ওকে কালকে সকাল নয়টায় এখানে আসবে তোমাদের নিয়ে মেডিক্যাল নিয়ে যাব , ওকে এবোশন করাবো ।
আমিঃ আংটি এবোশন কি ?
আংটিঃ এবোশন হল , তোমরা যা করেছো তার ফলকে ইগনোর করতে হবে , ঠিক আছে আর কোন কথা নয় । কাল আসবে নয়টায় আর শুন এ কথা কউকে বলবে না , বললে তোমারই বিপদ হবে । যাও এখন । আংটি ,সুশ্রী কোথায় ? ও আজ আর তোমার সাথে দেখা করবে না তুমি আজ চলে যাও কাল সকালে এসো । পর আমি বের হয়ে আসলাম ।
পরদিন সকালে , আসলাম । গাড়িতে করে সুশ্রীর মা আমাদের দু জনকে দু পাশে রেখে জেলা শহরের ম্যারিষ্ট্রপে নিয়ে গেল । চলার পর সুশ্রী একবারও আমার সাথে কথা বললো না । শুধু কয়েকটা ফ্রমে আমাকে-আর ওকে সাইন করতে হলো । সুশ্রীকে ম্যাডিকালে ৩ ঘন্টা রাখার পর ছাড়লো , পর বাসায় ফিরলাম আমরা । পর থেকে সুশ্রী আর ক্লাসে আর আসলো না , ওদের বাড়িতে গেলে আমাকে আর ঢুকতে দিল না । একদিন ওদের দাড়ওয়ান বললো, ওরা শহরে চলে গেছে । এরপর আমি একা হয়ে গেলাম আবার , ইংলিশে বার বার ফেল করতে ছিলাম । বন্ধুরা মশকরা করতো ডাকাতের মেয়ের জামাই বলে , পরের বছর আমিও শহরে চলে আসলাম । আর কোনদিন দেখা হয়নি কারো সাথে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:১৬