somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেখায় মানবতা: কাজুও ইশিগুরো । মানুষ আজিজ

২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মানব মনের গভীরতম তলদেশ অবলোকনের ক্ষমতা যার ভেতর আছে তিনি হলেন ২০১৭ নোবেল বিজয়ী কাজুও ইশিগুরো। শিল্প চরিত্রের ভেতর ডুব মেরে জীবনের গভীরতা প্রকাশ করে পৃথিবীতে আলো ছড়ান যিনি। কাজুও ইশিশুরোর হাতে আছে যাদুকরী শক্তি যা দিয়ে সৃষ্টি করেন ফ্যান্টাসি, সায়েন্স ফিকশন, পরাবাস্তবতা, জাদুবাস্তবতা মিশিয়ে পৃথিবীর এক ভিন্ন জগত। তার লেখার ভেতর পাওযা যায় প্রবল আবেগময় শক্তি ও জগতের সাথে সম্পর্ক নির্মাণে আমাদের যে ইন্দ্রিয়জ বিভ্রান্তি জন্মে তার সুগভীরতা।

ইশিগুরোর প্রথম বই প্রকাশ হয় 'আ পেল্‌ ভিউ অফ্‌ দ্য হিল্‌স্‌ (১৯৮২)' সালে।১৯৮২ থেকে ২০১৭ পযন্ত মোট ৭ উপন্যাস লিখেছেন। ইশিগুরোর তৃতীয় বই 'দ্য রিমেইন্স অফ্‌ দ্য ডে (১৯৮৯)’ বইটি তাকে খ্যাতি এনে দেয় এবং একই বছরে বইটির জন্য তিনি ম্যান বুকার পুরস্কার পান। 'দ্যা রিমেইন্স অফ্‌ দ্য ডে' বইটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী অবস্থাকে নিয়ে। বইটির কেন্দ্রিয় চরিত্র 'বাটলার মিস্টার স্টিভেন্স' তার যুদ্ধে অংশগ্রহন এবং ডার্লিংটন হল নামের বিশাল জমিদারবাড়ি তে কাজ করেছিলো দীর্ঘ দিন। বাটলার জীবনের সোনালী মুহূর্তগুলো কাটিয়েছিলো এই জমিদার বাড়িতে। শেষ সময় বাটলার আপন ঠিকানায় ফিরে যেতে যেতে কল্পনা করছিলো ফেলা আসা অতীত, যেখানে ছিল যুদ্ধ, রক্ত, প্রেম, আপোষহীনতা এবং একটি স্বাধীনতার গল্প।

দ্য রিমেইন্স অব দ্য ডে এবং নেভার লেট মি গো (২০০৫) এই দুটো উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে, যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।তাঁর সর্বশেষ উপন্যাস ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় 'দ্য ব্যুরিড জায়ান্ট, যা এক বৃদ্ধ দম্পতির যাপিত জীবন নিয়ে লেখা, যাঁরা এক বুক আশা নিয়ে হেঁটে চলেছেন তাঁদের যোগাযোগহীন এক সন্তানের দেখা পেতে।

এছাড়াও ইশিগুরো একজন চিত্র নাট্যকার, তিনি টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখেছেন,অ্যা প্রোফাইল অব আর্থার জে. ম্যাসন (১৯৮৪), দ্য গোরমেট (১৯৮৭), দ্য স্যাডেস্ট মিউজিক ইন দ্য ওয়ার্ল্ড (২০০৩) শিরোনামে।

লেখনীর মাধ্যমে শিল্প সূক্ষতাকে বাস্তবে রুপ দিয়ে যেন মানুষের গল্প বলছেন ইশিগুরো। মানুষের প্রেম ভালোবাসার মায়া কতটা স্পর্শ করে তোলে, তারই প্রতিছবি এক অন্যবদ্য চিত্র পাওয়া যায় তার লেখনীর মাধ্যমে। শিল্প চরিত্র যখন বাস্তব হয়ে পৃথিবীতে আলো ছড়ায় তখনই বুঝা যায় শিল্পের সৌন্দর্য। পাঠক তার লেখার মাধ্যমে নিজেকে খুঁজে পায়। নোবেল পুরস্কার ঘোষনার আগে সুইডিশ একাডমি ঘোষণা করেন, ‘জোরালো আবেগীয় শক্তির প্রকাশ ঘটে তাঁর উপন্যাসে, যেখানে দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের কাল্পনিক অনুভূতির প্রকাশ পায়।’ সুইডিশ একাডেমি আরও বলেছে, ‘ইশিগুরো মানবজাতিকে গভীর নৈতিক অবস্থানের দিকে প্রভাবিত করেন।’ সুতরাং তাঁর লেখায় স্মৃতি, সময়, বিভ্রম ও বিবিধ ধাঁধার অবতারণা পাওয়া যায়। তাঁর লেখার সব চরিত্র কাল্পনিক হলেও পাঠকের কাছে জীবন্ত হিসেবে ধরা দিয়েছে।

'নেভার লেট মি গো' উপন্যাসটি বিষন্নতার গল্প নির্ভর। মানুষ যখন জন্মায় অন্যজনের পূর্ণ্যতার জন্য। এই উপন্যাসের মাধ্যমে পৃথিবীর বিবেকবোধ কে নড়িয়ে দিয়েছে। এই সিনেমাটি একটি বোর্ডিং স্কুলের গল্প নিয়ে। যে বোর্ডিং স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীদের বাবা-মা নেই তারা জন্ম নেয় অন্যকারো ক্লোন থেকে। তাদেরও শিক্ষা, সুন্দর জীবন যাপনের সুবিধে দেয়া হয় এক সময় পর্যন্ত। পূর্ণ বয়স্ক হয়ে উঠবার পর তাদের সকল অঙ্গ দান করে করে দিতে হবে। বোর্ডিং স্কুলে অবস্থানরত ব্যক্তিরা অন্যদেরকে নিজ অঙ্গ দিয়ে সুস্থ করে তুলবে আর নিজে পঙ্গু হয়ে যাবে। যে সব শিশুগুলো বোর্ডিং-এ বড় হয় তাদের জীবনের মালিক বোর্ডিং স্কুল। এই হৃদয় বিধায়ক ঘটনা পৃথিবীতে অহরহ ঘটছে,যেখানে জীবনের জন্ম হয় পণ্য হবার জন্য।

ইশিগুরোর সবগুলো উপন্যাসই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে এবং বিশ্বের প্রায় ৪০ টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে তার বই। ইশিগুরো ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার পর আরো যত্নশীল হন তার লেখার প্রতি। চাকুরী ছেড়ে দিয়ে লেখাকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। তার উপন্যাসিক হয়ে উঠার পিছনে স্ত্রী লর্না'র অবদান স্বীকার করেন। ইশিগুরো স্ত্রীর সাথে পরিকল্পনা করে লেখার সময় ঠিক করেন, প্রতিদিন অল্প বিস্তর লেখা-লেখি দিয়ে শুরু করেন। এক সময় মনে হয় তার লেখাগুলো খুব মন্থর হয়ে যাচ্ছে। 'দি রিমেইন্স অব দি ডে’ উপন্যাসটি লিখেছিলেন মাত্র চার সপ্তাহে, পৃথিবীর সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে। সকাল ৯টা থেকে রাত্রির ১০ পযন্ত অনবরত লিখে গেছেন তিনি। দুপুর ও রাত্রির খাবারের জন্য মাত্র ৩ ঘন্টা সময় নিতেন ইশিগুরো।

জাপানে জন্ম নেয়া ব্রিটিশ নাগরিক কাজুও ইশিগুরোকে 'দ্য টাইমস ম্যাগাজিন' ১৯৪৫ সালের পরের শ্রেষ্ঠ ৫০ জন ব্রিটিশ লেখকদের তালিকায় ৩২তম বলে সম্মান জানিয়েছিল। নিজ জন্মভূমি জাপানে নোবেল জয়ের আগে পর্যন্ত কেউ তার সম্পর্কে জানতো না। জাপানি পাঠকরা এতদিন ধরে নিয়েছিল, জাপানি উপন্যাসিক 'হারুকি মুরাকামি 'একমাত্র বিশ্বমানের উপন্যাসিক যিনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য। ইশিগুরো মাত্র ৫ বছর বয়সে পরিবারের সাথে ইংল্যান্ড চলে আসেন এবং স্কুলে ভর্তি হোন। বাবা ছিলেন সমুদ্র বিজ্ঞানী, বাবার কাজ দ্রুত শেষ না হওয়ায় ইশিগুরোর দেশে ফেরা হয়নি।

ইশিগুরোর উপন্যাসের একটা বৈশিষ্ট্য হল তা কোনো সমাধানে পৌঁছায় না। তার সৃষ্ট চরিত্ররা অতীতে যে সমস্যা-সংঘাতে পড়ে, তা অমীমাংসিতই থেকে যায়। বিষন্নতায় শেষ হয় তার কাহিনী।

নোবেল ঘোষণার আগ মুহুর্তে বিশ্ব গণমাধ্যমগুলো ৮০জন সম্ভাব্য ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করেছিল, এদের মধ্য ইশিগুরোর নাম ছিল না। ২০১৭ সালে তার নাম ঘোষণার পর তিনি আলোচনায় চলে আসেন। ইশিগুরোর শৈল্পীক লেখনীর মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায় তার সৃষ্টিশীলতা। মানব চরিত্র অঙ্কনের দৃঢ় প্রত্যয় দেখা যায় তার লেখনীতে। ৬২ বছর বয়সী ইশিগুরো এখন আর লুকায়িত কোন উপন্যাসিক নন, তাকে জানতে পারছে মানুষ এবং বিশ্বের পাঠক। পাঠকরা তার আগামী উপন্যাসের জন্য মুখিয়ে থাকবেন। তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বাঁচার জন্য জানালা খুঁজবে, ততদিন মানুষ আরো মানবিক হয়ে উঠবে তার লেখাগুলো পড়ে।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×