somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলরঙ স্বপ্ন ও একটি ফড়িং

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"মা এর থেকে মামা কেন বেশি ভালো বল্ তো?" মামা জিজ্ঞেস করে ।

"কারণ মা এ একটা মা, মামায় দুইটা মা!" নাইশা বলে ওঠে ।


মামা বাসায় আসলেই নাইশার খুব ভালো লাগে। মামা শুধু ভালো ভালো গিফট দেয় সেই কারণে না, বেড়াতে নেয় সেই কারণে না, মামা অন্য বড়দের মত সারাক্ষণ বড়দের মত করে কথা বলে না! মামা তো ওর সাথে খেলেই তারপর মজার মজার কথা বলে । নাইশার ফ্রেণ্ডরা তো ওকে হিংসা করে ওর মামার জন্য। অবশ্য মামাকে ওদের ফ্রেণ্ডদের সামনে আনা যাবে না । মামা ওকে হয় আম্মু অথবা বুড়ি ডাকে। ফ্রেণ্ডরা যদি শোনে ওকে বুড়ি ডাকা হয় তাহলেই হয়েছে! দেখা যাবে স্কুলে ওর নামই হয়ে যাবে বুড়ি! ক্লাস ফাইভে উঠেছে সে এবার। এত বড় একটা ক্লাসের মেয়েকে কেউ বুড়ি ডাকে?!

"মামা আমাকে বুড়ি ডাকবে না কতবার বলেছি!"

"সরি বুড়ি!" বলেই মামা হাসে।

নাহ! মামাকে নিয়ে পারা যায় না! নাইশা ভাবতে থাকে । নিলয় ফাযিলটা নেই এখন। ঠিক হয়েছে । খালি ক্রিকেট খেলতে চায় মামা এলেই । ক্লাস থ্রিতে পড়ে তবুও মাথায় যদি একটু বুদ্ধি শুদ্ধি থাকত! এখনো ছোটই রয়ে গেল! নিলয় এর শুধু বুদ্ধিশুদ্ধি ই কম না , ও একটা আস্ত শয়তান! নাইশা ওর বড় তাও ওকে নাম ধরে ডাকে! কত্ত বড় ফাযিল!

আম্মু নিলয়কে স্কুল থেকে আনতে গেছে । নাইশার আজ স্কুল নেই ।মামার ও অফিস নেই । মামা অনেক দিন পর এলো ওদের বাসায় । মামার নাম সাব্বির । আম্মু ডাকে সাবু! (ভাগ্যিস ওকে আম্মু নাশু ডাকে না!) মামা অনেক কমিক্স নিয়ে আসে । চাচা চৌধুরী পড়া শেষ হয়ে গেছে ওর । ৩ টা টিনটিন ও পড়ে ফেলেছে । চাচা চৌধুরী পড়ে একটা কার্টুন ও এঁকেছে সে। ছোঁচা চৌধুরী আর সাবু!
ছোঁচাটা হচ্ছে নিলয়!(এত পেটুক! সারাক্ষণ খালি খাওয়ার কথা বলে!)
মামা ছবিটা দেখে খুব খুশি হয়েছে । যদিও বলেছে মামার নাকটা নাকি বোঁচা হয়ে গেছে! ছোঁচা চৌধুরী আর বোঁচা চৌধুরী! নাইশা ফিক করে হেসে দিল ।

নাইশার ছবি আঁকতে খুব ভালো লাগে , বিকেল গুলোতে ফাঁক পেলেই সে ছবি আঁকে । আগে শুধু গ্রামের দৃশ্য টাইপ ছবি আঁকত । এখন অনেক কিছু আঁকে । আটলান্টিক এর নীচের ছবি, মহাকাশের ছবি, মেঘের ছবি। মামা বলেছে যত বেশি আলাদা আঁকা যায়। ভুলেও অন্যদের মত আঁকা যাবে না । সে তাই ছবি আঁকার আগে অনেক ভাবে । ছবির জন্য ভাবতেও তার অনেক ভালো লাগে ।

ছবি ভালো হলেই দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয় । নাইশা আর নিলয় যে রুমটায় থাকে তার ডানপাশের দেয়ালটা নাইশার আর বাম পাশের টা নিলয় এর। (ওর দেয়ালে খালি স্পাইডারম্যান এর ছবি। গাধার গাধা! বড় হয়ে স্পাইডারম্যান হতে চায়! এমন বোকা লোক আর একটাও আছে?! সুপারম্যান তো না সুপার গাধা! )

ওদের পাশের বাসায় একটা ফুলের বাগান আছে । নাইশারা দোতলায় থাকে ।ওদের বারান্দা দিয়ে ফুলগুলো দেখা যায় । এত সুন্দর! নাইশার খুব ইচ্ছে করে ফুল গুলো চুরি করে নিয়ে আসতে! মামাকে ওর প্ল্যান এর কথা বলল । মামা বলল "ফুল গাছে থাকাই ভালো । ফুল ছিড়লে গাছের কষ্ট হবে। " এর চেয়ে কাগজের ফুল নাকি ভালো!নষ্ট হবার ভয় নেই । কষ্ট হবার ও ভয় নেই! মামা একটা ফুল বানিয়ে দিয়ে বলল,রঙ করে ফেল । এই বাগানের ফুলগুলোতে অল্প ধরণের রঙ আছে , ওকে অনেক ধরণের রঙ লাগাতে বলল । নাইশা মোম রঙ ব্যবহার করে । মামা অবশ্য ওকে জল রঙ কিনে দিবে পরের সপ্তাহে । কী মজাটাই না হবে! এবার কল্পনার সব রঙ মিশিয়ে ছবি আঁকা যাবে! (কথাটা মামার ! মামা খালি কল্পনা করার বলে, বাবার ঠিক উলটো! বাবা ওর ছবি দেখে বলে "কী সব হাবিজাবি!" দেখা জিনিস আঁকতে বলে । মামাকে বাবার কথা বলল সে । মামা বললো কল্পনারটাও নাকি এক প্রকারেরদেখা! এত কঠিন কথা নাইশা বোঝে না ।সে শুধু বোঝে তার আঁকতে ভালো লাগে। জল রঙ পেলে অনেক ভালো ছবি আঁকা যাবে ।)

নিলয় আর আম্মু আজ বেশ লেট করে বাসায় আসলো ।

"নাইশা... নাইশা... তোমার নতুন টিচার এর বাসায় গিয়েছিলাম আজ । অনেক বড় বেত আছে সেই টিচার এর!টিচার এর ইয়া বড় পেট ! হিহি হাহা। অনেক রাগী । তার মোছটাও রাগী রাগী!! তুমি না পড়লে তোমাকে মাইর দিবে আর মোছ টানবে!" এই বলে বিশ্রি করে একটা হাসি দিল! নিলয়টা এত্ত ফাযিল! নাইশার ক্ষতি হলে এত আনন্দিত হয়!
আম্মু মামাকে দেখে খুশি হয়। একমাত্র ছোট ভাইকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

দুপুরে খাওয়ার সময় নাইশা আম্মুকে বলে
"আম্মু মামা আগামী সপ্তাহে জল রঙ এনে দিবে! কী মজা! "
"কী?! না না! জল রঙ কিনে দিস না সাবু ,ওতো এ বছর ছবি আঁকার সময় ই পাবে না । ছবি আঁকা নিয়েই থাকতে চাবে। বিকেল বেলা ঘুমানো দরকার । সমাপনী পরীক্ষা না সামনে ! ৩ টা টিচার... "

আম্মু আরও অনেক কিছু বলতে থাকে । নাইশার কানে ঢোকে না । ও জানে সব । ইদানিং সারা দিন ই ওকে পড়ার উপর থাকতে হয় । এখন আরেকটা নতুন টিচার !
আম্মুর মামাকে বলে "তুই এর চেয়ে বড় দেখে একটা ব্যাগ গিফট কর। ওর নতুন কেনা ব্যাগ টাও ছোট হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে । এত বই ওর! "

নাইশার এত্ত মন খারাপ হল । জল রঙ এর বদলে ব্যাগ! এটা কোন কথা হল ?
মামা আম্মুকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে এতটুকু বাচ্চার উপর এত প্রেশার দেয়া ঠিক না , আম্মু শোনে না । মামা আর আম্মু তর্ক করতে থাকে।


নাইশা খাওয়া শেষ করে ওর রুমে চলে যায় । ওর মনটা খারাপ হয়ে গেছে। সমাপনী পরীক্ষাটার উপর সব রাগ চাপে ওর। জল রঙ তো পাবেই না, উলটো ওর ছবি আঁকা বন্ধ হবে। নতুন টিচার এর কাছে পড়তে গেলে ও তো আর সময় ই পাবে না ছবি আঁকার ।
সদ্য রঙ করা কাগজের ফুলটা নিয়ে ওর বিছানায় শুয়ে পড়ল । নিলয় বারান্দায় গিয়ে ফড়িং ধরতে লাগল । পাশের বাগান থেকে মাঝে মাঝেই ফড়িং চলে আসে ওদের বারান্দায়। আর ফাযিল নিলয় সেই ফড়িং গুলো ধরে, মাঝে মাঝে তো সুতো দিয়ে বাঁধে ! আচ্ছা ও এত পাজি কেন ?

আম্মু এসে বলল "আম্মু একটু চাপো তো।" ওর বিছানায় উঠে আগের টাঙানো একটা ছবি খুলে ফেলল।

স্কচটেপ দিয়ে নতুন একটা ছবি টাঙাতে শুরু করল ।

"এটা কি আম্মু?"

"তোমার বিজ্ঞান বই এর একটা ছবি। অঙ্কুরোদগমের ছবি । তুমি সামনে পড়বে এটা। চোখের কাছে ছবি থাকলে তাড়াতাড়ি পড়া হয়ে যাবে। পরে দেখে নিও। এখন ঘুম দাও তো। বিকেলে টিচার এর কাছে যেতে হবে। "

আম্মুর ছবি টাঙানো শেষ হলে নিলয়কে "নিলয় ঘুমুতে যাও"বলে চলে গেল।

অঙ্কুরোদগম। কী কঠিন শব্দরে বাবা! ওর মেঘের ছবিটা খুলে এত পচা একটা ছবি টাঙানো হয়েছে! ছবিটায় কী বিশ্রি রঙ! ছবি আকাও বন্ধ ,সাথে টাঙানো ও বন্ধ! মেঘের ছবিটা ভাঁজ করে বালিশের পাশে রেখে দেয়।

"নাইশা! নাইশা!দেখো না । আরেকটা ফড়িং ধরেছি !" নিলয় চেঁচাতে থাকে। নিলয়টা না খুব খারাপ!সে সুন্দর ফড়িংগুলো ধরে আর পাখা কেটে দেয়।
নিলয় বলতে থাকে "নাইশা ,এই নাইশা দ্যাখো না। ফড়িংটা তবুও বেঁচে আছে!"
নাইশা চুপ করে শুয়ে থাকে , জবাব দেয় না ।
গন্ধহীন,কাগজের ফুলটা হাতে নিয়ে ডানা কাটা ফড়িংটার জন্য কষ্ট পায় সে,অনেক কষ্ট ।

ছবি কৃতজ্ঞতা

আমার অন্যান্য গল্প :
জ্যোতির্ময় বচন, এক রূপবতীর সাথে কথোপকথন

বাজার অথবা পাত্র পাত্রী বিষয়ক কথোপকথন

আলো ও অন্ধকারের গল্প**

মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন !!!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:৪৩
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×