somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাজার অথবা পাত্র পাত্রী বিষয়ক কথোপকথন [*গল্প*]

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিসেস রহমান পটোলের দাম শুনেই ভুরু কুচকালেন । এত দাম পটোলের?!! মানুষ তো না খেয়েই পটোল তুলবে! তিনি নাক কুঁচকে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন তখনই কে যেন বলে উঠল
"আরে ভাবি যে!"
"আরে ইকবাল ভাই?! কেমন আছেন?"
"আল্লাহ রাখছে এক রকম । তা ভাবি বাজার করছেন বুঝি ?"
"হা ! শাফি দেশে এসেছে । তাই ওর প্রিয় কিছু কিনতে নিজেই এলাম ।"
"তাই নাকি? তা কবে আসল?"
"গত সপ্তাহে । ওকে নিয়ে অনেক ছোটা ছুটির মধ্যে আছি । ওকে এইবার বিয়ে দেব ভাবছি ।"
"শাফির বিয়ে?! ও তো এখনো ছোট ! বয়স কত ?২৪/২৫ হবে না"
"আরে ওটা তো সানি । আমি আমার বড় ছেলের কথা বলছি। "
"ও আচ্ছা । শাফি এখনো বিয়ে করে নি?!!"
এই কথা শুনে মিসেস রহমান এর ভুরু,নাক দুটোই কুচকে গেল । "ছেলে মানুষ । ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করে করে একটু বয়স বাড়িয়েছে । ছেলেদের আবার বয়স কি?!!"
"তা কিন্তু ঠিক বলেছেন! তা মেয়ে ঠিক করেছেন?"
"না ভাই । ভাল মেয়ে পাওয়া এত কঠিন! অনেক দিন ধরেই তো খুঁজছি । প্রায় প্রতিদিন ই মেয়ে দেখতে যাচ্ছি এখন । "
"আমি একদম একমত! আজকালকার দিনে ভাল মেয়ে পাওয়া আসলেই কঠিন । "ইকবাল সাহেবের গলায় একটু আগ্রহ ফুটে উঠল যেন ।
মিসেস রহমান একটা পেঁপে নিয়ে দোকানদারকে বললেন "পেঁপে হলুদ হবে তো ?"
"কি কন আপা ?!হইব না মানে কাইট্টা দেখায়া দিতাছি । "
"আর মেয়ে দেখেও উপায় নেই । বাইরে থেকে নানা খোজখবর নিতে হয় । স্বভাব চরিত্র কেমন!বুঝেনই তো । যে জমানা পড়েছে! "
"একমত! একমত! উপর দিয়া ফিটফাট ভিতর দিয়া সদরঘাট!" ইকবাল সাহেব মাথা নাড়েন।
"এইটাও আমার কথা!(পেঁপের ভেতরটা দেখে) হুমম পেঁপে তো দেখি ভালই, এখন মিষ্টি হলেই হয়!"
"তা মেয়ের বয়স কেমন চান?" ইকবাল সাহেবের উৎসাহী প্রশ্ন ।
"একটু কম বয়সী মেয়েই আমার পছন্দ । আমার ছেলেকে তো দেখেছেন ই । এখনো দেখলে মনে হয় ২৪ বছরের যুবক!"
কথাটা শুনে ইকবাল সাহেব একটু কাশলেন বলে মনে হল মিসেস রহমান যদিও খেয়াল করেন নি ।
"(দোকানদার কে)এই কিছু কাঁচা লেবু দিও তো! পাকা দিও না তাইলে কিন্তু তোমার দোকান থেকে আর কিছু নিব না "
"তা তো বটেই। আর কি কি চান? দেখি একটা ঘটকালি কইরা দিতে পারি কিনা! একটা বিয়ে করিয়ে দেই। সামনে আমার মেয়ের বিয়ে দিব । আপনি তখন আমার জন্য করবেন ! "
"তা তো অবশ্যই এই না হলে প্রতিবেশী ?মেয়েকে তো লম্বা হতেই হবে ,আমার ছেলে আবার একটু খাটো ।
নাহলে বাচ্চাকাচ্চাও খাটো হবে ।
এই বেগুন দাও তো লম্বা লম্বা গুলা দিও । গোল গুলা,আর বাট্টু গুলা দিবা না । আমার ছেলে ঐ গুলা খায় না । "
এবার ইকবাল সাহেবের কথায় একটু ব্যঙ্গ ঝরে পড়ে যেন "মেয়ের গায়ের রঙ তো ফর্সা হতেই হবে তাই না?"
"তা তো বটেই! নাহলে আমার নাতি নাতনীর মুখ তো অন্ধকারে দেখা যাবেই না! পরির মত একটা বউ চাই । আর কিছু না!
সুন্দর দেখে আলু দিও তো । আলু দিয়ে খুব ভাল একটা আইটেম বানাবো । মোটা মোটা আলু দিও না ।"
"শিক্ষাগত যোগ্যতা?"
"মেয়ের যদি কিছু ডিগ্রি না থাকে তাহলে চলবে কিভাবে?প্রেস্টিজ এর ব্যাপার ! "
"কিন্তু আপনার ছেলে তো পড়া বন্ধ রেখেই বাইরে গিয়েছিল । ও তো মোটে ইন্টার পাস ।"
মিসেস রহমান আবারো ভুরু কুচকালেন । "সেই জন্য ই তো একটু শিক্ষিত মেয়ে চাচ্ছি ! দুজনের এক জন যেন একটু শিক্ষিত হয়!এই একটা ভাল দেখে মিষ্টি কুমড়া দাও তো । মিষ্টি যেন হয় । "

" হুমম । ফ্যামিলি তো ভাল হতেই হবে, তাই না?"
"তা তো বটেই । আমাদের স্ট্যাটাসের সাথে খাপ খায় এমন ফ্যামিলি না হলে চলবে কেমনে?(শুটকি শুঁকে) শুটকি গুলার গন্ধ তো সুবিধার না । থাক আজ নিব না । (দোকানদার কে)এই তোমার কত হল?"
"ভাবি আমি তাহলে একটু আসি ।আমাকে মাছ কিনতে হবে ।আপনি তাহলে বাজার করতে থাকুন । ভাল মেয়ে পেলে আপনাকে জানাব ।"
"আচ্ছা ভাই । ভাল থাকবেন । বাসায় যাবেন কিন্তু ভাবিকে নিয়ে । "
ইকবাল সাহেব অন্য এক দোকানের সামনে চলে এলেন ।
মনে মনে বললেন "কি সিক পিপল ! মেয়ে তো দেখছে না যেন বাজারে পটল,পেঁপে কিনছে!!"
"আরে ইকবাল ভাই যে?!" শরীফ চৌধুরী ডেকে উঠলেন ।
"কেমন আছেন শরীফ ভাই? অনেক দিন পর দেখলাম । অথচ আমরা একই পাড়ার বাসিন্দা!"
"আমি আছি ভালই । দেখা না হলে কি হবে? খবরাখবর ঠিকই রাখি । শুনলাম মম'র জন্য পাত্র খুজছেন?!"
" হা ভাই ।" একটু লাজুক হেসে ইকবাল সাহেন উত্তর দেন ।
"আমাকে বলেন কেমন পাত্র চান?আমি তো আল্লায় দিলে অনেকের জন্যই পাত্র/পাত্রী খুঁজে দিলাম ।"
"অন্য সব মেয়ের বাপের মতই চাই মেয়েটা যেন সুখে থাকে । এই ধরেন শিক্ষিত,স্বচ্ছল,ভাল বংশের মার্জিত ভদ্র পাত্র হলেই হবে ।
(মাছওয়ালাকে)এই ডিম ছাড়া মাছ দাও । টাটকা আর বড় দেইখা । ছোট গুলা দিও না । ঐ মাছটা এমন কেন? হ হ ঐটা সরাও। পচা গলা মাছ দিও না ।"
"জামান কে চেনেন? ওকে পাত্র হিসেবে কি মনে হয়?"
"হা চিনি তো । আপনাদের নিচ তলায় থাকে । আরে ওর তো হাইটে প্রবলেম আছে ! এত খাটো ছেলের সাথে
মেয়ে দিব নাকি? নাতি পুতি তো সব লিলিপুট হবে! "
"হুমম। জামান বাদ । হানিফ কে চেনেন? "
"সিলেটি পাড়ার হানিফ? উকিল যে? "
" হ্যা হ্যা । ঐ হানিফই । মেয়ে দেখতেছে শুনলাম । "
"আরে না । ওরা ৭ ভাই বোন । এই রকম গ্যাঞ্জাইমা ফ্যামিলি তে মেয়ে বিয়ে দিয়ে বিপদে পড়ে যাব তো! আমাদের কাছে ওরা প্রস্তাব পাঠাইছিল কয়েক মাস আগে । "
ইকবাল সাহেব মাছের ব্যাগটা নিয়ে টাকা দিয়ে বললেন
"চলেন ভাই একটা মুরগি কিনব ।(তারা দুজন মুরগির দোকানের সামনে গেলেন । )
এই একটা ভাল দেইখা মোরগ দাও তো ।"
" রহমান সাহেবের ছেলে শাফিও নাকি মেয়ে দেখতেছে শুনলাম!"

"আমিও শুনছি । ঐ ছেলের বয়স অনেক!এই এই তুমি এইটা কি দিতাছ ?
আমি কি বুইড়া মুরগি নিব নাকি?কম বয়স দেইখা দাও । আমরা আসলে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার পাত্র খুজতেছি । কিন্তু সমস্যা হল আজকালকার দিনে ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার রা ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ারই বিয়া করতাছে!"
"আপনার মেয়ে ইডেন থেকে পাস করছে না?"
"হা । এরপর চাকরি পাইছিল কিছু । কিন্তু করতে দেই নাই । "
"হুমম। দিলে ভাল হইত । আজকালকার দিনে মেয়েদের চাকরী থাকলে বিয়ে দিতে সহজ হয় ।"
ইকবাল হুসেন একটু ভুরু কোঁচকালেন "তা হয়ত হয় । কিন্তু আমার মেয়ে সোনার টুকরা মেয়ে । ওকে আমি বাইরে কাজ করতে দিব না । সোনার চামচ নিয়া জন্মাইছে । যতটুকু পারি বুকে আগলাইয়া রাখতে চাই । "
"তা তো বটেই । ফার্মের মুরগি খান না? দেশি মুরগি নিতেছেন যে? "
"না ভাই ফার্মের মুরগিতে অরুচি আছে । পাত্র অবশ্য একটা পাইছিলাম । কিন্তু আমেরিকায় ছিল পাঁচ বছর। স্বভাব চরিত্র কেমন হইতে পারে এই ভয়ে ...বুঝেন ই তো ! তাই না করে দিছি"
"হুমম । " শরীফ সাহেব গম্ভীর ভাবে বলে উঠেন ।
"মুরগিটা ছিলা দিও । কাটার দরকার নাই । বাসায় কাটবে ।
আজকালকার দিনে বাজার করা অনেক কষ্টের । দোকানদাররা যা তা জিনিস গছাইয়া দিতে চায়!"
শরীফ সাহেব মাথা নাড়েন "হুমম ! বাজার!!"

উৎসর্গ সাজিপু, অপর্ণাদি, রাগ আপু, ফারহান ভাই
এঁদের এই ধরণের নোংরামির বিরুদ্ধে সরব উপস্থিতির উদ্দেশ্যে।

***আলো ও অন্ধকারের গল্প ***
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৯:৫৬
৮১টি মন্তব্য ৭১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×