somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের ইতিকথা: পর্ব- ৫

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুম্বাই। ভারতের প্রাণস্বরূপ এই নগরী বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এবং বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মহানগরী। যুগের পর যুগ ধরে অজস্র মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে এই মুম্বাই, যুগিয়েছে অন্ন। আজও প্রতিদিন অসংখ্য জীবিকান্বেষী মানুষকে সাদর অভ্যর্থনা জানায় প্রায় ২.৫ কোটি অধিবাসীর শহর মুম্বাই। কিন্তু প্রায় সকল মহানগরীর মতই মুম্বাইয়েরও আছে এক অন্ধকার জগৎ, এ হল মুম্বাইয়ের সেই ভয়ংকর অপরাধ জগৎ যা কেবল তার শান্তিপ্রিয় বাসিন্দাদেরই নয় বরং ভারতসহ ভারতের বাইরেও বহু মানুষের ঘুম কেড়েছে। হাজী মাস্তান, মুদালিয়ার থেকে দাঊদ ইব্রাহীম, ছোটা শাকিল -মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রকরা এই স্বপ্নের নগরীর ইতিহাসকে রক্তে রঞ্জিত করতে কখনই কুণ্ঠিত হয় নি। তাদের লিপ্সা-হিংসা ছবির মত মুম্বাইয়ে বহু রক্ত ঝরিয়েছে আর আজও ঝরিয়ে যাচ্ছে। মুম্বাইয়ের সেই লোমহর্ষক অপরাধ জগৎ নিয়েই কিছু না বলা কথা, কিছু গুঞ্জন ধারাবাহিক পর্বে তুলে ধরার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।


প্রথম পর্ব


দ্বিতীয় পর্ব


তৃতীয় পর্ব


চতুর্থ পর্ব


পর্ব ৫: গ্যাং ওয়ার

৮০ এর দশক পর্যন্ত মুম্বাই এর পরিবেশ ছিল অনেকটাই শান্ত। তখনকার সময় মাফিয়া চক্রগুলোর মূল আকর্ষণ ছিল মাদক আর স্বর্ণ চোরাচালান। ভরদ খুন আর ভূমি দখলে জড়িয়ে পড়লেও তা ব্যাপক আকারে হয় নি। অন্তত মুম্বাইয়ের বাকি ইতিহাসের কাছে তা কিছুই না। এই ইতিহাস জুড়ে আছে মূলত কাসকার ভাইদের নাম। মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডে কাসকার ভাইদের আবির্ভাব ঘটে ১৯৭৫-৭৭ সাল পরবর্তী জরুরী অবস্থার পর। সেই সময়ের তরুণ দুই ভাই এর মধ্যে একজন আজ দুনিয়া জোড়া পরিচিত মাফিয়া ডন দাঊদ ইব্রাহীম কাসকার। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, শাবির আর দাঊদের পিতা ছিলেন পুলিশের হেড কনস্টেবল! বড় ভাই শাবির ইব্রাহীম কাসকার এর হাত ধরেই তার অপরাধ জগতে হাতেখড়ি। শুরুতে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ ছিল বড় ভাইয়ের হাতে। পরে ভাই নিহত হওয়ার পর দাঊদ হয়ে ওঠে সর্বেসর্বা। মুম্বাইয়ের অপরাপর ডনদের হাতে কাসকার ভাইদের পার্থক্য হল তাদের শুরুটাই হয়েছিল খুনাখুনি দিয়ে। বসু দাদা নামের মুম্বাইয়ের ডোংরি এলাকার এক ডনকে আক্রমণ এর পরেই শাবির আর দাঊদকে চিনতে শুরু করে মুম্বাইয়ের সন্ত্রাসীরা। বসু আর তার সাগরেদদের লোহার রড আর খালি হওয়া সোডা বোতল দিয়ে বেধড়ক মার মেরে তাদের হটাতে সক্ষম হয় দুই ভাই। মার খেয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় বসু। ধীরে ধীরে তাদের প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে। একসময় মুম্বাইয়ের অভিজাত অপরাধীর তালিকাভুক্ত হয় কাসকার ভাইয়েরা। ততদিনে ভরদরাজন মুদালিয়ার আর হাজী মাস্তান অনেকটা নিষ্ক্রিয়। মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতে তখন রইল কেবল করিম লালার নেতৃত্বাধীন পাঠানরা আর শাবির-দাঊদ দুই ভাই। তরুণ শাবির এর চোখে তখন মুম্বাই নিয়ন্ত্রণের স্বপ্ন। ৭০ পার হওয়া করিম লালার কাছে ক্ষমতা থাকবে তা মনপূত হল না শাবিরের। ক্ষমতা দখল নিয়ে যুদ্ধ বেঁধে যায় দুই পক্ষে। রক্তপাত শুরু হল আর তা চলতেই থাকল। কোন পক্ষই ছাড় দিতে রাজি না। মুম্বাইয়ের ইতিহাসে প্রথম গ্যাং ওয়ার ছিল এই যুদ্ধ আর এতে বিপুল অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে সারা শহর জুড়ে। অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যেতে থাকলে বিচলিত হয়ে পড়ে খোদ অপরাধীরাও। এই অবস্থায় এগিয়ে আসে হাজী মাস্তান। মাস্তানের গ্রহণযোগ্যতা উভয়পক্ষের কাছেই ছিল। তাই তার দাওয়াত কারও পক্ষেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হল না। বাদী, বিবাদী আর বিচারক সকলেই যখন মুসলমান তখন ধর্মীয় রীতিনীতির চেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কিছু থাকে না। পবিত্র কুরআন ছুঁয়ে হাজী মাস্তানের সামনে দুই পক্ষ ওয়াদা করে যে তারা আর ঝগড়া করবে না। তবে বোঝাপড়া করে মোটেই সন্তুষ্ট ছিল না কোন পক্ষ। পাঠান গ্যাং এর আমিরজাদা আর আলমজেব এসময় আগর বাজারের উঠতি ডাকাত মান্য সুরভের দ্বারস্থ হয়। সুরভে তখন শীর্ষে আরোহণের চিন্তায় মগ্ন। বিপুল টাকা আর উপরি খ্যাতির লোভে পাঠানদের প্রস্তাব লুফে নেয় সুরভে। ১৯৮১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী শাবিরকে খুন করার সিধান্ত হয়। গভীর রাতে শাবিরের গাড়ির পিছু নেয় সুরভের বাহিনী, আমিরজাদা আর আলমজেব। শাবির তখন তার প্রেমিকা, স্থানীয় নাচিয়ে চিত্রার সাথে বান্দ্রার দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে তেল নেওয়ার জন্য গাড়ি থামলে তাকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে ঘাতকরা। চিত্রাকে বলা হয় গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত অন্যত্র সরে যেতে। আকস্মিক পরিস্থিতিতে তখন স্বভাবতই বিস্মিত শাবির। চিত্রা সরে গেলে চতুর্দিক থেকে বৃষ্টির মত ছুটে আসতে থাকে বুলেট। অধিকাংশই গাড়ির গায়ে লাগে আর শাবিরের গায়ে বিদ্ধ হয় পাঁচটি বুলেট। তার নিথর দেহ পেছনে ফেলে সুরভের বাহিনী এবার এগিয়ে যায় ছোট ভাই দাঊদের দিকে। পরিকল্পনা ছিল বড় ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার আগেই দাঊদকে খুন করে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলা। কিন্তু সৌভাগ্যবশত ফটক পাহারায় থাকা দাঊদের এক সহযোগী সুরভে আর আমিরজাদার গাড়ি দূর থেকে চিনে ফেলে। আক্রান্ত হওয়ার মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে দাঊদের সহযোগীরা বাড়ির সুরক্ষায় নির্মিত অতিকায় স্টিলের দরজা আটকে দেয়। দুই পক্ষের গোলাগুলি বেশ কিছুক্ষণ চললেও তাতে কেউ খুব একটা হতাহত হয় নি। শেষ রাতের দিকে দাঊদের কানে যায় শাবিরের মৃত্যুর খবর। ভাইয়ের মৃত্যুতে পাগলপ্রায় হয়ে ওঠে দাঊদ। প্রতিশোধ স্পৃহায় উন্মত্ত দাঊদ মেতে ওঠে হত্যার উৎসবে। একের পর এক খুন হতে থাকে পাঠান গ্যাংস্টাররা। ৫০ জনেরও বেশি পাঠান পরিবারসহ খুন হয় যার মধ্যে পাঠান নেতা করিম লালার পরিবারের সদস্যরাও ছিল। সুরভে আর তার প্রধান সহযোগী মুনির তখন পলাতক। একপর্যায়ে দাঊদের হাতে ধরা পড়ে মুনীর কিন্তু সুরভে সময়মত পৌঁছে ছিনিয়ে নেয় মুনীরকে।



ষষ্ঠ পর্ব


সপ্তম পর্ব


শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪০
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×