somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত-৮

২৬ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৪:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সুধা আনিতে গরুড়ের স্বর্গে গমন:

গরুড় দাদাকে সূর্যের রথের সারথী করে মাকে মুক্ত করার জন্য স্বর্গে সুধা আনতে গেলেন।

এর পূর্বে ক্ষীরসিন্ধুর মাঝে দুঃখী মার সাথে দেখা করতে গেলে কদ্রু বিনতাকে রম্য-দ্বীপে কাঁধে করে নিয়ে যেতে বলেন।
বিনতা নিলেন কদ্রুকে, গরুড় নিলেন শতপুত্রকে। গরুড় সূর্যলোক দিয়ে গেলে বহু নাগ মারা যায়। কদ্রু ইন্দ্রের স্মরণে গেলেন। ইন্দ্র সকল জলধরকে মেঘে আকাশ ঢেকে দিতে বললেন। প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলে নাগেরা সূর্যের তেজ থেকে বাঁচল। অপূ্র্ব সুন্দর রম্য দ্বীপে শেষ পর্যন্ত নাগেরা পৌছাল। নাগেরা গরুড়কে আবার পিঠে করে আর এক দ্বীপে নিয়ে যেতে বলল।
গরুড় মার কাছে গিয়ে সে কথা জানাল।
বিনতা বললেন –তুমি দাসীপুত্র, তাই তাদের আজ্ঞা শুনতে হবে।

বিনতার দাসী হওয়ার কারণ শুনে গরুড়ের ক্রোধ হল। কদ্রুর কাছে সে জানতে চাইল কি ভাবে তার মাকে দাসীবৃত্তি থেকে মুক্ত করা যাবে। কদ্রু স্বর্গের অমৃত নিয়ে আসতে বললেন।

সুধা আনার আগে গরুড়ের খিদে পেল। মা তাকে সমুদ্রে গিয়ে নিশাচরদের খেতে আজ্ঞা দিলেন। এও বললেন সেখানে এক ব্রাহ্মণ আছেন, তাকে যেন না খায়। কারণ অগ্নি, সূর্য, বিষ-এর প্রতিকার আছে। কিন্তু ব্রাহ্মণের ক্রোধের থেকে নিস্তার নেই।
গরুড় জিজ্ঞাসা করলেন কি ভাবে ব্রাহ্মণকে চিনবেন!
বিনতা বললেন যাকে খেতে কষ্ট হবে সেই বুঝবে ব্রাহ্মণ।

বিনতার আশীর্বাদ নিয়ে গরুড় সুধা আনতে চললেন। চারপাশ কেঁপে উঠল। খিদের জ্বালায় গরুড় এক নিশ্বাসে সব মুখে পুড়লেন। কিন্তু পেটে জ্বালা শুরু হলে মার কথা মনে পড়ল এবং ব্রাহ্মণকে উদর থেকে বের হয়ে আসতে অনুরোধ করলেন। ব্রাহ্মণ তার ব্রাহ্মনীকে নিয়ে বের হলে গরুড় আবার স্বর্গের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।

পথে পিতা কশ্যপের সাথে দেখা হলে তিনি পিতাকে খাদ্যের সন্ধান দিতে বললেন। কশ্যপ বললেন দেব-নরের বিখ্যাত এক সরোবর আছে সেখানে হাতি ও কচ্ছপের যুদ্ধ হচ্ছে, তার বৃত্তান্ত আগে শুন।
.............................................

গজ-কুর্ম্মের বিবরণ:

বিভাবসু ও সুপ্রতীক দুই ভাই। এরা মুনিপুত্র এবং মহাধনী। শত্রুরা হিংসা করে তাদের মধ্যে কলহ লাগাল। সম্পত্তির জন্য তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল।

সুপ্রতীক, ছোটভাই, সে সম্পত্তির সমান ভাগ দাবি করতে লাগল। এভাবে বারবার বিভাবসুকে সম্পত্তি নিয়ে বিরক্ত করলে বিভাবসু রাগ করে ভাইকে শাপ দিল, হস্তী হয়ে সুপ্রতীক বনে বনে ঘুরে বেড়াবে। সুপ্রতীকও দাদাকে শাপ দিল, সে কচ্ছপ হয়ে জলে বাস করবে।

শত্রুর কথায় দু’ভাই বিবাদ করে সংসার নষ্ট করল।
শেষ পর্যন্ত একজন বনে আর একজন জলে গিয়ে বাস করতে লাগল। কখনও সামনাসামনি হলেই তারা যুদ্ধে মেতে উঠত।

কশ্যপ গরুড়কে বললেন তাদের গিয়ে ভক্ষণ করতে। এতে পৃথিবীর মঙ্গল হবে। পিতার আজ্ঞা পেয়ে খগরায় সেই স্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
আকাশপথে দেখলেন গজ ও কুর্ম্মের সাঙ্ঘাতিক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তিনি দুজনকে নখে ধরে উড়ে গেলেন এবং কোথায় বসে খাবেন তা ভাবতে লাগলেন।

এ সময় শত যোজন বিস্তৃত রৌহীণবৃক্ষ তাকে আমন্ত্রণ জানালেন তার ডালে বসার জন্য। ডালে বসলে ভারে ডাল ভেঙে গেল।


সেই ডালে বালখিল্য মুনিরা অধোমুখে জপ করছিলেন। তা দেখে গরুড় ভয় পেলেন। ডাল মাটিতে পড়লে মুনিদের মৃত্যু হবে, এই ভয়ে সে ঠোঁটে ডাল ও দুই নখে গজ ও কুর্ম নিয়ে উড়তে থাকলেন।

এভাবে বহুদিন গরুড় উড়তে লাগলেন। পিতা কশ্যপ গন্ধমাদন পর্বত থেকে গরুড়ের দুর্দশা দেখে মুনিদের স্তব শুরু করলেন। ছয় সহস্র মুনি সন্তুষ্ট হয়ে হিমগিরি পর্বতের দিকে গমন করলেন।

খগেশ্বর পিতার আজ্ঞায় সেই ডাল জীবজন্তুহীন পর্বতে ফেলে সেখানেই গজ-কুর্ম ভক্ষণ করলেন।

এরপর সুধা আনতে স্বর্গের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
তার পাখার ঝাপ্‌টায় পর্বত উড়ল, সূর্য অন্ধকারে ঢেকে গেল, মেঘ-বৃষ্টি শুরু হল।

এসব দেখে ইন্দ্র বৃহস্পতিকে এই অশান্তির কারণ জানতে চাইলেন।

বৃহস্পতি বললেন –তোমার পূর্বের পাপের জন্য গরুড় এখানে আসছেন। সে সুধা স্বর্গ থেকে অবশ্যই নিয়ে যাবে। এত শুনে ইন্দ্র রেগে গেলেন। তিনি সকল দেবতাদের যুদ্ধে প্রস্তুত হতে বললেন।
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ১
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ২
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৪
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৫
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১০ রাত ১:৫৮
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×