somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত-২

০৫ ই জুন, ২০১০ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জরৎকারুর বিবরণ:

জটাচার্ব্ব বংশে জরৎকারু মুনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পরম যোগী ছিলেন। উলঙ্গ, উন্মত্ত অবস্থায় তিনি দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতেন।

একদিন এক বনে তিনি অদ্ভূত দৃশ্য দেখলেন। বনে এক বিরাট গর্ত। গর্তের উপর একটি প্রাচীন বৃক্ষের মূল ধরে অনেকগুলি মানুষ ঝুলছে।
একটি ইদুঁর আবার সেই মূলটি কাটছে।
জরৎকারু সেই মানুষগুলিকে এরূপ ঝুলে থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। বললেন ইদুঁরটা মূল কেটে ফেললে তারা ঐ বিরাট গর্তে পরে মরবে তবু কেন এই ঝুলে থাকা।

তখন তারা বলল – আমরা জটাচার্ব্ব বংশে জন্মে ছিলাম। এখন নির্বংশ হয়ে পড়ছি বলে এই অবস্থা। শেষ বংশধর জরৎকারু নামে এক মূর্খ সেই এই দশার জন্য দায়ী।
সবশুনে জরৎকারু চমকে উঠলেন। তিনি নিজ পরিচয় দিয়ে তাঁদের আদেশ প্রার্থনা করলেন।
পিতৃগণ তাকে বিবাহ করে বংশরক্ষা করতে বললেন। জরৎকারু বললেন তিনি যত্ন সহকারে বিবাহ করবেন না প্রতিজ্ঞা করেছেন। কেউ যদি তার নামে কন্যা যেচে দেন তবে তিনি সেই কন্যাকে বিবাহ করবেন।
এত শুনে পিতৃপুরুষরা অন্তর্ধান হলেন।
দৈববানীর মাধ্যমে জরৎকারু জানতে পারলেন তিনি বর্তমান বলেই ঐ শিকড়টি এখনও ছেড়েনি। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পিতৃপুরুষরা বংশলোপের ফলে ঐ বিরাট গহ্বরে পতিত হবেন। যে ইদুঁরটি মূল কাটছিল তিনি ছদ্মবেশী ধর্মদেব।

সবশুনে জরৎকারু মহাবনে প্রবেশ করলেন এবং ‘কন্যা কার আছে দেহ’ বলে তিনবার ডাক দিলেন।



নাগরাজ বাসুকি
ঐ বনে বাসুকির এক অনুচর ছিল। সে বাসুকিকে গিয়ে জরৎকারুর কথা বলল। বাসুকি সব শুনে খুশি হলেন। তার বোনকে নিয়ে ঐ বনে জরৎকারুর কাছে গিয়ে তার বোনকে বিবাহ করতে অনুরোধ করলেন।

জরৎকারু বললেন যদি তার নামে কন্যার নাম হয় তবেই তিনি কন্যাকে বিবাহ করবেন।

বাসুকি বললেন তার বোনের নাম জরৎকারী। জরৎকারুর জন্যই তার জন্ম। এতদিন তিনি বোনকে বহু যত্নে বড় করেছেন মুনির জন্যেই।

জরৎকারু বিবাহে সম্মত হলেন। সকল নাগ এই বিবাহের সংবাদ শুনে সুখী হল।
..................

নাগেদের উৎপত্তি এবং অরুণের জন্ম:

এই পর্যন্ত শুনে মুনিরা সৌতিকে জিজ্ঞাসা করলেন বোনকে জরৎকারুর কাছে নাগরা দিল কি প্রয়োজনে। জরৎকারীর জন্ম কেন জরৎকারুর জন্যই!

সৌতি তখন সবিস্তারে এর কারণ জানালেন।

দক্ষের কন্যা কদ্রু ও বিনতা তাদের স্বামী কশ্যপের বহু সেবা করেন। খুশি হয়ে কশ্যপ তাদের বর দিতে চাইলেন। কদ্রু সহস্র নাগকে তার পুত্র হিসাবে চাইলেন। বিনতা কেবল দুটি পুত্র প্রার্থনা করলেন।

মুনির বরে দু’জনেই গর্ভবতী হলেন। তারা বনে চলে গেলেন। সেখানেই দু’জনে প্রসব করলেন।
কদ্রু সহস্র ডিম ও বিনতা দুটি ডিম প্রসব করলেন। ডিমগুলি তারা স্বর্ণপাত্রে রেখেছিলেন। পাঁচশ বছর বাদে সহস্র ডিম ফুটে কদ্রুর সহস্রনাগ-পুত্রের জন্ম হল।

তা দেখে বিনতার হিংসে হল। সে একটি ডিম ফাটালে তার থেকে লাল বর্ণের এক অপূর্ব অর্ধাঙ্গবিহীন পুত্র বের হলেন।
ইনিই অরুণ।
ক্রোধে তিনি জননীকে শাপ দিলেন, অকালে বিনতা যেমন তাকে অঙ্গহীন ভাবে জন্ম দিয়ে কষ্ট দিলেন, তেমনি যে বোনকে হিংসা করে একাজ করা সেই বোনেরই দাসী তাকে হতে হবে।
আরো বললেন, অপর ডিমে মহাবীর্যবন্ত বীর আছেন। সহস্র বছর বাদে সে আপনিই ফুটবে। সেই তার শাপমোচন করবে।

এসময় কদ্রু ও বিনতা একসঙ্গে বাস করছিলেন। দৈবের ঘটনায় একদিন তারা উচ্চৈঃশ্রবা নামে অপরূপ ঘোড়াটিকে দেখতে পেলেন। এই ঘোড়াটি সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠেছিল।
এত শুনে মুনিরা সৌতিকে সমুদ্র মন্থনের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।
.......................

উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................
পাদটীকাঃ
সহস্রনাগ - সহস্রটি নাগ
..................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত- ১
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৫:৩৭
৪৭টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×