somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত -৭

২৩ শে জুন, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
নাগগণের প্রতি কদ্রুর অভিসম্পাত ও বিনতার দাসীত্বের বিবরণ:

শৌনকাদি মুনিদের অনুরোধে সৌতি পুনরায় কদ্রু ও বিনতার প্রসঙ্গে আসেন।


উচ্চৈঃশ্রবা

সৌতি বলেন -কদ্রু ও বিনতা একদিন সুলক্ষণ যুক্ত একটি সুন্দর ঘোড়া দেখলেন।

কদ্রু বলেন –বিনতা, অশ্বটিকে দেখে বলত তার বর্ণ কি রূপ!

বিনতা বললেন –অশ্বটি শ্বেতবর্ণের। তিনি কদ্রুকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি কোন বর্ণের দেখেছেন!

উত্তরে কদ্রু বলেন –কৃষ্ণবর্ণের।

দুজনের এরপর কলহ লাগে। তখন দু’জনে প্রতিজ্ঞা করলেন যার কথা মিথ্যা হবে সে অন্যজনের দাসী হয়ে থাকবেন। এই বলে দু’জনে ঘরে চলে গেলেন। ঠিক হল যেহেতু সূর্য অস্ত যাচ্ছেন, তাই পরেরদিন দু’জনে দিনের আলোয় ঘোড়াটি দেখবেন।

ঘরে গিয়ে কদ্রু তার সহস্র পুত্রকে ডাকলেন। পুত্রদের সব কথা জানালেন।
পুত্রেরা বললেন -কি করলে মা! সাদাবর্ণের বলেইতো ঘোড়াটি অর্থা উচ্চৈঃশ্রবা বিখ্যাত।

কদ্রু বললেন –অশ্বের রঙ সাদা হলে যেকরে হোক তাকে কৃষ্ণবর্ণের কর। কারণ বিনতার কাছে আমি পণ করেছি, হারলে তার দাসী হতে হবে।

সমস্ত ঘটনা শুনে নাগেরা বিরস বদনে মাকে বললেন –বিনতাও তাদের কাছে কদ্রুর সমান। তাকে তারা কি ভাবে দুঃখ দেবেন!

একথায় কদ্রু রেগে গেলেন এবং শাপ দিলেন জন্মেজয়ের যজ্ঞে সকল নাগ ভস্ম হবে।

কদ্রুর শাপ শুনে সকল দেবতারা খুশি হলেন। কারণ সকলে বিষাক্ত সাপেদের হিংসা করে। তাদের বিষে মানুষের মৃত্যু হয়। তার থেকে বাঁচতে ব্রহ্মা কশ্যপকে তার মন্ত্র দিলেন। কশ্যপের থেকে তা মর্তে প্রচার হল।

মায়ের বচনের নাগেদের ভয় হল। তারা গিয়ে উচ্চৈঃশ্রবাকে ধরল এবং তাকে নিজেদের দিয়ে ঢেকে দিল। ফলে উচ্চৈঃশ্রবার বর্ণ কালো হয়ে গেল।

সকালে বিনতা ও কদ্রু ঘোড়া দেখতে এলেন। পথে সমুদ্র পড়ল, যাতে পর্বতের মত বড় বড় জলচর! কেউ শত, কেউবা বিংশতি যোজন বড়। এগুলি ছিল কুমীর, কচ্ছপ ও মৎস।

এসময় তারা উচ্চৈঃশ্রবা যেখানে ছিল সে স্থানে উপস্থিত হলেন এবং দেখলেন তার বর্ণ কালো।

দেখে বিনতা বিষণ্ণ হলেন, কারণ কথা মত তাকে কদ্রুর দাসী হতে হবে।
.....................

গরুড়ের জন্ম ও সূর্যের রথে অরুণের সারথ্যকার্য্যে নিয়োজন:
যখন বিনতা কদ্রুর দাসীরূপে অবস্থান করছেন তখন মহাবীর গরুড়ের জন্ম হয়।


গরুড়
ডিম ফেটে হঠাৎ বের হয়ে তার আকৃতি বাড়তে থাকে। দিন যত বাড়তে লাগল তার তেজ ও তত বাড়ল। তার নিশ্বাসে পাহাড়ের চূড়াও যেন উড়ে যায়। বিদ্যুতের মত গায়ের আকার, লালবর্ণের চোখ, কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মাথা আকাশকে ছুঁল।

দেবদানব সবাই ভয়ে তঠস্থ। সবাই যেন ‘যুগান্তের অগ্নি’ দেখছেন।
সকলে অগ্নি স্তব শুরু করলেন। অগ্নি বললেন ভয়ের কিছু নেই।
তিনি দেবতাদের আত্মসম্বরণ করতে বললেন। তিনি দেবতাদের কশ্যপ-পুত্র গরুড়ের স্তব করতে বললেন।

দেবতাদের স্তবে গরুড় সন্তুষ্ট হলেন এবং নিজেকে সম্বরণ করলেন।

গরুড় তার দাদা অরুণকে নিয়ে গিয়ে সূর্যের রথে উপর বসালেন।


সূর্যের সারথি অরুণ

সূর্যের তেজে ত্রিভূবন পুড়ছিল, অরুণের আচ্ছাদনে তা নিবারণ হল।

মুনিরা এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে সৌতি বললেন –যখন নারায়ণ দেবতাদের অমৃতবন্টন করছিলেন তখন গোপনে রাহু তা পান করেন। সূর্য তা জানিয়ে দিলেন। সুদর্শনচক্রে রাহুর মুন্ডু কাটা গেল। এরপর রাহু সূর্যকে তার এই কর্মের জন্য গ্রাস করত।

সূর্যকে দৈত্য গ্রাস করছে দেখে দেবতারা পরিহাস করলে, সূর্য ক্রোধ করে বললেন তিনি ত্রিভুবন পোড়াবেন।

দেবতারা ভয়ে ব্রহ্মার কাছে গেলেন। ব্রহ্মা তাদের অভয় দিলেন। তিনি বললেন- কশ্যপ ও বিনতার পুত্র অরুণ সুর্যের তেজ কমাবেন। দীর্ঘদিন এই কষ্ট সহ্য করার পর অরুণের উদয়ে দেবতারা সন্তুষ্ট হলেন।
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ১
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ২
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৪
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৫
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১০ রাত ১:৪৯
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×