somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প দা তি ক

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



লিংক---পদাতিক/৮


জাহানারাদের ঘর আর ঊর্মিলার ঘরের মধ্যেকার দূরত্ব খুব বেশি হলে তিন হাত। প্রথম প্রথম সুবোধের অস্বস্থি হতো। শুনেছে ওর স্বামীর নাম কমল। দু’ একদিন দেখেওছে,কিন্তু কথা হয় নি। একটু গম্ভীর প্রকৃতির। ক’দিন আগে ঊর্মিলার সুত্রে জানা গেছে যে জাহানারাকে এই নামে এখানে কেউ চেনে না। সবাই শিবানী বলেই জানে। জানে কমলের দ্বিতীয় পক্ষের বউ। ক’মাস আগে দেশ থেকে বিয়ে করে এনেছে। কার কোথায় দেশ, কে কোথা থেকে আসে, কে কোথায় যায়—এসব নিয়ে এখানে মাথা ঘামানোর চল নেই। কিন্তু ঘটনা এতো সরল পথে চলছে না। গত ক’দিন ধরেই একটা চাপা কান্নার আওয়াজ জাহানারাদের ঘর থেকে প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। ঊর্মিলাকে বলা হলে ঊর্মিলা শুধু মাথা ঘামাতে বারণ করে । বলে, ছেলেটা, অর্থাৎ কমল, খুব ভালো ছেলে নয়। পেশায় সে রিক্সা চালক । এটাই জানে সবাই। কিন্তু আদতে সে রিক্সা চালক হলেও আরো অনেক গোপন কাজের সঙ্গে যুক্ত। যেমন মাঝে মাঝে তার থানা পুলিশ করতে হয়। জেল হাজতে যেতে হয়। মাঝে মাঝে কিছুদিনের জন্য উধাও-ও হয়ে যায়। এই যেমন জাহানারাকে নিয়ে আসার আগেও কয়েক মাস উধাও ছিল। সেই সময় নাকি ও বাংলাদেশে গিয়ে লুকিয়ে ছিল।ঐ সময়েই জাহানারাকে বিয়ে করবে বলে ফুসলিয়ে নিয়ে আসে। জাহানারা জানতো ও মুসলমান। একদিন কমলের হাত ধরেই জাহানারা পালায়। কোন স্বপ্ন দেখেছিল কে জানে। বিয়ের বয়স হওয়া মেয়ে বাড়ি থেকে পালানোতে দরিদ্র বাবা নুরু মিয়া সমাজের কাছে কিছুটা অপদস্থই হয়। যদিও নীতি কথার পেছনে একটা দায়মুক্তির ব্যাপার থাকায় বিষয়টা ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যায়। তা ছাড়া দারিদ্র আর কন্যাসন্তান সংসারে অবাঞ্ছিত; সেটা বলাবাহুল্য বলে কথা আর বেশি এগোয় না। জাহানারার মা, কুলসুম, অন্য আর দশটা দমিত নারী-সত্তার মতো অবগুণ্ঠনের আড়ালে একটা গোপন বিবেচনা ছিল যে,--দেখতে শুনতে-তো কমল উপযুক্ত। ইন্ডিয়ার ছেলে। মেয়েটার হয়তো একটা হিল্লে হয়ে যাবে। কিন্তু এখানে এসে বস্তিতে ঢোকার আগেই তাকে হাতে শাখা আর মাথাতে সিঁদুর পরতে হলো। নাম বলে দিল—বলতে হবে শিবানী। কিন্তু বিয়ে-তো দূরের কথা কমল হিন্দু কি মুসলমান তাও আজ অবধি বুঝতে পারলো না। জানতে চাইলে ধমক দেয়। ঊর্মিলা এ-সব বেশ কিছুটা জানে। কিছুদিন আগে নাকি কমল জাহানারাকে ঊর্মিলার ঘরে যাতায়াতের ব্যাপারে শাসিয়েছে। সেই থেকে মেয়েটি যেমন আর আসে না, ঊর্মিলাও আর যায় টায় না।

যে কাজগুলো ভদ্রলোক-সমাজের লোকেরা সাধারণত খবরের কাগজে পড়ে, সেই কাজগুলো বা সেই সব কাজের লোক এখানে ঘর থেকে বের হলেই দেখা যায়। সুবোধ যেহেতু এখানে এখন পরিচিত, তাই সেও এখন এসব জানতে পারে চা এর দোকান বা সিগারেটের দোকানে গিয়ে দাঁড়ালে। তাদের একান্ত প্রতিবেশী কমল সম্পর্কে সে অনেক তথ্য এভাবেও জেনেছে। বস্তির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অপরাধের চিত্রটা এখন তার কাছে বেশ পরিষ্কার। যেমন কমল, সারাদিন ঘরে থাকে। রিক্সা নিয়ে বের হয় সন্ধ্যের পর। রাত দু’টো বা তিনটে পর্যন্ত সে রিক্সা চালায়। আসলে সে তখন নানা ধরনের চোরাচালানের কাজ করে। কখনো সে নির্দিষ্ট স্থান থেকে বিশেষ কিছু মহিলাদের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয়। এক কথায় রাতের শহর শিলিগুড়িতে সে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। ভালো রোজগার।এক সময় সে ডাকাতিও করেছে।দেখেছে তাতে ঝুঁকি বেশি। এটাই এখন তার পছন্দের জীবিকা। এই সুত্রে তার পরিচয় হয়েছে যেমন শহরের মান্যগন্য মানুষের সঙ্গে, তেমনি পরিচয় হয়েছে পুলিশ বা গোয়েন্দাদের সঙ্গেও। গোয়েন্দাদের সোর্স হিসেবেও তার একটা আলাদা কাজ আছে। তবু মাঝে মাঝে থানা জেল হাজত করতে হয় আইনের প্রতি মান্যতা দেখানোর জন্য। কিন্তু খুব সম্প্রতি সুবোধ যা জানতে পারলো সেটা ঠিক সে হজম করতে পারলো না। সেটা হলো কমল একটি অন্তর্দেশীয় মেয়ে-পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত। কথাটা শোনার পর ঊর্মিলাকে জানাতে গিয়ে শোনে ঊর্মিলা তা আগেই জানে। --হ ,এই সব আমার জানা আছে, তুই আর কী শোনাবি। আগের বউটার বেলায় বলছিল, হে নাকি বাপের বাড়ি গিয়া মারা গেছে। কীসের মারা গেছে—মিছা কথা—হারামজাদা বেইচ্যা দিছে—এই-ডারেও হুনতাছি বেচবো— শিবানীরে কইছি বাইরে যাইতে কইলে যাইবি না একদম। কথাবার্তা চলতাছে—লোক জন রাইত বিরাতে আসে—হেই দেইখ্যা মাইয়া ভয়ে কান্দে--। সুবোধ স্তব্দ হয়ে শোনে। (ক্রমশঃ)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×