somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প দা তি ক

০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



লিংক--৬ ৭পদাতিক


সুবোধ এখানে আসার পর আজকাল ঊর্মিলা বিকেলের বাজারেও দোকান দেয়। বাইরে গেলে সারাদিন এতকাল মনের মধ্যে বাচ্চাগুলো থাকতো। এখন সেখানে সুবোধও থাকে। বেড়ে গেছে পরিশ্রম। রাতে ফিরে শ্রান্ত শরীরে শুয়ে পড়ে ঊর্মিলা ঘুমনোর আগে তাই সুবোধের সঙ্গে দু’ চারটে কথা বলে।
--সুবোধ ঘুমাইলি?
--না।
--দিনেত খালি পড়ে পড়ে ঘুমাস
--না, ঘুম আর হয় কই,পোলাপানের যন্ত্রণা
--হাতের একটা কাজ শিখ না—এখানে হাতের কাজে পয়সা।
--হ;--ঘুমোওতো এখন
ঊর্মিলার চোখ এমনিতেই ভারী হয়ে আসে। বয়সে বড় বলে এই সব উপদেশমূলক কথা বলে দু’চারটে। এটা বলা কর্তব্যও মনে করে সে।কিন্তু সুবোধ শুনলেতো। হু হা করে এড়িয়ে যায়। এদিকে ঘুম কম সুবোধের। রাতে দু’তিনবার ওঠে। বাইরে যায়। ফিরে এসে জল খায়।বিড়ি খায়। বাচ্চারা কোনোটা কাশতে কাশতে জেগে যায়। ওটাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে পেচ্ছাব করিয়ে আনে। ঊর্মিলা তখন হয়তো ঘুমে বেহুশ।

রাত নিঝুম হয় এখানে খুব অল্প সময়ের জন্য। সুবোধ টের পায় ঘরের পাশ দিয়ে মানুষের আনাগোনা, কথাবার্তা।রাত জেগে জেগে সুবোধ এসবে অভ্যস্থ হয়ে গেছে।প্রান্তিক জীবন বলতে আসলে কী বোঝায় সুবোধ এখন বুঝতে পারছে। প্রতিরাতেই তার মাথার ভেতর চলে এক তীক্ষ্ণ হিসেব নিকেশ। কী হবে এরপর? কীভাবেই বা হবে? ঊর্মিলার ঐ ‘হাতের কাজ’ এর কথার গুরুত্ব না দিলেও তার ভেতর চলতে থাকে একটা বেরোবার পথের সন্ধান।

দরজার শব্দ শুনে সুবোধ একটু গলার আওয়াজ করলো।
--কী রে এখনও জাইগা আছিস?—বলতে বলতে ঊর্মিলা বাইরে গেল। ফিরে এসে বললো—শরীরটা ঠিক আছেতো সুবোধ?
-হ, ঠিক আছে।
মশারি তুলে সুবোধের কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কিনা। আজ দিনের বেলা নাকি একটু জ্বর জ্বর ভাব ছিল। ঊর্মিলা ঘরে এসেই শুনেছিল। না, এখন গা গরম নেই। কিন্তু কপাল থেকে হাত সরাতে গিয়ে টের পেল সুবোধ হাত টেনে ধরেছে।
--কী রে
--বওনা একটু , কথা কই
--কী কথা—হাত ছাড়, বসছি।
ছোঁড়াটার গলাটা কেমন যেন ভারী ঠেকলো না! নিজের গা-টাও যেন কেমন গুলিয়ে উঠলো।
মশারিটা সরিয়ে ঊর্মিলা বসলো সুবোধের কাছে। হাই তুললো। বলল—বল, কী বলবি।এত রাইতে আবার কী মনে পড়লো তোর। বলতে বলতে ভাবলো ছোঁড়াটার মতি গতি বোঝা দায়। রাতভর জাগে। কী ভাবে কে জানে? দেশের কথা বললে বেশি উত্তর দেয় না।কতদিন থাকবে কে জানে! নিজের থেকে-তো কিছু কয়-ও না। জিজ্ঞেস করলে হু হা ছাড়া উত্তর নেই।–কীরে ক, কী কইবি।
--বলছি তুমি এই কামটা ছাড়। সবজি আনার কামটা, খাটনি খুব—
--ও মা কী কস, ছাড়লে খাওন দেবে কে শুনি
--আমি ব্যবসা করবো।
--আচ্ছা!—কীয়ের ব্যবসা, কী বেচবি—
--কেন মদ!
--মারা পড়বি, একদম মারা পড়বি
--কেন অনেকেই-তো করে
--তুই পারবি না।
--পারবো।
--আচ্ছা এখন ঘুমো।–এই বলে ঊর্মিলা উঠতে যাবে, আবার টের পেল শাড়িতে টান।
--কী হলো?-
--না।
ঊর্মিলা টের পেল টানে যথেষ্ট জোর। বুকটা তার ধ্বক করে উঠলো।
--কী রে, পাগলামি করিস না, ছাড়—
কোন কথা নেই। শুধুই টান। আরো—
--কী হলো তোর—হ্যাঁ—কী রে,--কথা বলছিস না যে বড় ---

ঊর্মিলা আর কিছু বলতে পারলো না।গলার কাছে একটা অবোধ্য যন্ত্রণা যেন দলা পাকিয়ে আটকে যাচ্ছে। সংসারে সবটাই যেন আর গা সওয়া হয় না। গা-সওয়ার বাইরেও যে সওয়ার জন্য একটা আলাদা কিছু লাগে। কথা বলতে গেলে আর বলা যাচ্ছে না, গলা বুজে আসছে। সুবোধ যেন আর সুবোধ নয়। অচেনা লাগছে।
অন্ধকার ততক্ষণে ভাঙতে শুরু করেছে। ভাঙা ভাঙা অন্ধকারে যেন শুরু হয়েছে প্রাণ সঞ্চার।তার মধ্যে কে ঊর্মিলা, কে সুবোধ—প্রশ্নগুলো আর কাজ করছে না। শুধু সন্তর্পণে ভাসতে ভাসতে তারা পরস্পরের কাছে আরো গভীর হয়ে উঠতে লাগলো। (ক্রমশ:)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:২৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×