somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমিয়াখুম বিজয়ের গল্প - বান্দরবান ভ্রমণ পঞ্চম পর্ব

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৩ তারিখ সকাল ৭ টার মাঝেই সবাই ঘুম থেকে উঠে পরলাম। দীর্ঘ জার্নি পড়ে আছে সামনে। সাদেক ভাই এর রান্না ততক্ষণে প্রায় শেষ। উঠে দেখি হাত পায়ের গিঁটে গিঁটে ব্যাথা। কিছু করার নেই আজকেই কেওক্রাডং পৌঁছাতে হবে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ৮ টার মাঝেই বের হয়ে গেলাম সবাই, গন্তব্য থাইখং।

সকালটা মোটামুটি ঝিরিপথ ধরেই হাঁটতে হয়েছিল। আমাদের অনভিজ্ঞতার কারণে সাদেক ভাই সোজাসুজি পাহাড় না টপকে ঝিরি ধরে আনে আমাদের। তার কথা অনুযায়ী উনি নিজেও এই রাস্তায় আসে নাই। পাহাড় দেখে দিক ঠিক রেখে আমাদের নিয়ে গিয়েছে। তবে এবারের ঝিরিপথ আগের যে কোন ঝিরির চেয়ে বাজে। পথে অনেক জায়গাতেই নদী পার হতে হল পাথরের উপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে। কিছু কিছু পাথর এত পিচ্ছিল যে পড়ে গেলে হাত পা ভাঙ্গারও ভয় আছে। ঝিরি হলেও গতি তাই কিছুটা কম ছিল। ঝিরির শেষাংশ ছিল জঘন্য বাজে, টারজান এর মত লতায় ঝুলতেও হয়েছে দুএক জায়গা পার হওয়ার জন্য। সঠিক মনে করতে না পারলেও প্রায় ২.৫-৩ ঘণ্টা পর আমরা থাইখং এর গোড়ায় হাজির হলাম।



ঝিরিপথ

শুরু হল আমাদের ওঠা, থাইখং হয়ে কেওক্রাডং পৌঁছাতে হবে আজকের মাঝে। থাইখং এ যাওয়ার ট্রেইলটা আমিয়াখুম এর মত বাজে না হলেও খুব ভালও ছিল না। একটা জায়গায় প্রায় ৮০ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে হালকা বাঁক খেয়ে উঠে গিয়েছিল। প্রায় দৌড়ে উঠেছিলাম ওই জায়গাটা, এরপর থেকেই ভাল রাস্তা শুরু হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং এরপর ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়েছি, অন্তত ভয় পেতে হয়নি শারীরিক কষ্ট হলেও। সূর্য ইতিমধ্যে মাথার উপরে উঠে গেছে, গরমে অবস্থা আরও কাহিল হবার জোগাড়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম কিছুক্ষণ হাঁটা এভাবেই চলতে চলতে একটা ছাউনি পেয়ে সবাই বসলাম সেখানে ছায়া পেয়ে। সৌভাগ্যক্রমে ওখান দিয়ে তখন একটা আদার গাড়ি যাচ্ছিল। ওরা আমাদের থাইখং এর গোরস্থানে নামিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেল। মোটামুটি ঘণ্টা খানেকের পথ তো অন্তত কমবে। আমরা সবাই গাড়িতে উঠে বসলাম। এইবার দুর্ভাগ্যক্রমে ৩০ সেকেন্ড অতিবাহিত হবার পূর্বেই গাড়ির ইঞ্জিন থেমে গেল। গাড়ির ইঞ্জিন এ সমস্যা ছিল। আদার সাথে অতিরিক্ত প্রায় ৭০০ কেজি ওজন নেয়া গাড়ির পক্ষে সম্ভব না। বাধ্য হয়ে গোমড়ামুখে সবাই আবার হাঁটা শুরু করলাম।



আমাদের বিশ্রামের একটি মুহূর্ত



আদার গাড়ি

দুপুর নাগাদ থাইখং পাড়ার গোরস্থানে পৌঁছালাম। সেখানে টেলিটক এর নেটওয়ার্ক আছে। সবাই একে একে বাসায় ফোন করে জানালাম সবাই সুস্থ আছি। প্রায় পাঁচ দিন নেটওয়ার্ক এর বাইরে ছিলাম। সবার বাসাতেই চিন্তায় অস্থির, সেই চিন্তায় আমরাও কিছুটা অস্থির। ফোন করতে পেরে হাঁটার গতিও বেড়ে গেল কিছুটা। মনে খানিকটা ফুরফুরে ভাব এসে গিয়েছিল  ।





কেওক্রাডং যাওয়ার পথে

কেওক্রাডং সরাসরি বেশ কাছে মনে হলেও একটা পাহাড়ের রেঞ্জ ধরে প্রায় সার্কেলে ঘুরে সেখানে পৌঁছাতে হবে। এই হাঁটা যেন শেষ হওয়ার নয়, হাঁটছি তো হাঁটছি, হাঁটা আর শেষ হয় না। এর মাঝে আবার আমাদের খাবার পানি সব শেষ। পিপাসায় সবার অবস্থাই কাহিল। মাঝে মাঝে চরাই উৎরাই পার হতে হচ্ছে, প্রায় অভ্যাস বশেই হাঁটছিলাম তখন। শেষ দুই আড়াই ঘণ্টা ব্যাক্তিগত ভাবে আমার কোন অনুভুতিই ছিল না, সব ভোঁতা হয়ে গেছে। কেনান পাড়া অথবা পাসিং পাড়ার আগের তিনটা সাইন কার্ভের কথা এখনও মনে পড়ে অবশ্য। ওখানে বেশ কষ্ট হয়েছিল।



কেনান পাড়া



পাসিং পাড়া

অবশেষে সন্ধ্যার একটু আগে আগে কেওক্রাডং পোঁছালাম। তখনকার অনুভূতি ব্যাখ্যা করা একটু কঠিন। ৫ দিনের কষ্ট কিছু সময়ের জন্য সম্পূর্ণ ভুলে গিয়েছিলাম। যে পাহাড় গুলি এতদিন জ্বালিয়েছে সেগুলোকে পায়ের নিচে দেখা সত্যিই একটি অসাধারণ অনুভূতি। অনুমান করি বগালেক দিয়ে ঢুকলে হয়ত এই অনুভূতি পেতাম না।



কেওক্রাডং এর পিকে




ইহা আমি B-)



যার কথা না বললেই না আমাদের গাইড সাদেক ভাই

রাত কাটালাম কেওক্রাডং এর কটেজে। দু দিন পর আরামের একটা ঘুম হয়েছিল, জন প্রতি তিনটা করে কম্বল পেয়েছিলাম। খাওয়া দাওয়া সেরে ফেললাম প্রায় সাথে সাথেই। একেকজন মোটামুটি গলা পর্যন্ত খেলাম। খাওয়ার শেষ দিকে হঠাৎ দেখি আরেক ট্যুরিস্ট দল হাজির। পরিচিত হতে গিয়ে দেখি এরাও ভার্সিটির জুনিয়র। ওরা এসেছে জাদিপাই থেকে। এবার যাওয়ার সুযোগ না হলেও পরেরবার আশা করি মিস হবে না।

পরবর্তী পর্বে থাকছে বগালেক হয়ে বান্দরবান শহর ফেরা।

পূর্ববর্তী পর্ব সমূহের লিঙ্ক

প্রথম পর্বঃ Click This Link

দ্বিতীয় পর্বঃ Click This Link

তৃতীয় পর্বঃ Click This Link

চতুর্থ পর্বঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:০৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×