বর্তমান শতকে বাংলা সিনেমার হালচাল নিয়ে ধারাবাহিকে আজ সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো রঙ্গীন চশমা (২০০৪) ছবির কাহিনী। সেহিসেবে এটি তৃতীয় ছবি যার কাহিনীসংক্ষেপ এই ধারাবাহিকে তুলে দেয়া হলো। এরপরের পর্বগুলোতে এই তিনটি ছবিকে আশ্রয় করেই একটা সার্বিক বিশ্লেষণ করা হবে। তবে তার আগে আজকের ছবির কাহিনীর ব্যবচ্ছেদে ব্লগারদের অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানাই। আগের দুই পর্বে ব্লগাররা এই দায়িত্ব অতি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন।
রঙ্গীন চশমা ছবির কাহিনীর ধাঁচ বাঘের বাচ্চা ও বিদ্রোহী সালাউদ্দিন ছবি থেকে কিছুটা আলাদা। কারণ এই ছবিটি মান্না-মুক্ত। বাঘের বাচ্চা ও বিদ্রোহী সালাউদ্দিন চরিত্র দুটোর প্রধান অভিনেতা ছিলেন মান্না। রঙ্গীন চশমা ছবির কাহিনী শুরু একজন স্কুলবালকের কিডন্যাপ হওয়া ও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। তার কপালে সাপের ছোবল দেখা যায়, পোস্টমর্টেমে সাপের ছোবলেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। এই মৃত্যুর তদন্ত করছে তানিয়া নামের এক পুলিশ অফিসার। তানিয়া এক পর্যায়ে জানতে পারে কার্তিক দাশ নামের এক অর্থলোভী লোকের কাজ এটা যে শিশু-কিশোরদের অপহরণ করে পণের টাকায় এক হাজার কোটি টাকার মালিক হবার টার্গেট নিয়ে এপথে নেমেছে।
তানিয়া কার্তিকের খোঁজে কার্তিকের ‘রেড জোন’-এর ভেতরে চলে যায়, কার্তিক তার ‘রঙিন চশমা’ দিয়ে সবকিছু দেখতে পায়। কার্তিক তার সহচরী মিস লেফট ও মিস রাইটকে দায়িত্ব দেয় তানিয়াকে শেষ করার। এই দুই সহচরীর বিশেষ ক্ষমতা হলো তারা নিমিষে মানুষ থেকে সাপ ও সাপ থেকে মানুষে রূপান্তরিত হতে পারে। তারা সাপের বেশে তানিয়ার মুখোমুখি দাঁড়ায়, তানিয়া তার উদ্যত পিস্তল দিয়ে সাপদুটোকে না গুলি করে ভয়ে দৌড়ে পালায়। তাকে বাঁচাতে মাটি ফুঁড়ে এক কুংফু মাস্টারের আগমণ ঘটে। তার বিশেষ কলাকৌশলে সাপ দুটো পরাস্ত হয়ে পালিয়ে যায়। দুই সহচরীর কাছ থেকে কার্তিক শোনে কুংফু মাস্টারের চোখেও রঙিন চশমা ছিল। কার্তিক বুঝে যায় এ ‘ওজেডএ’ অর্থাৎ ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম ছাড়া আর কেউ নয়। ফ্ল্যাশব্যাকে জানা যায় এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা করে এক রঙিন চশমা আবিষ্কার করেছেন যেটা চোখে দিয়ে দুপাশে চাপ দিলে কাক্ষিত সবকিছু দেখা যায়, পাশাপাশি চশমার রশ্মিতে অন্যকে হতাহত করা যায়। বিজ্ঞানী ওজেডএ-র মতো বাহুবলে বলীয়ানদের এরকম চশমা দিতে চান যারা দেশের ও জনগণের জন্য কাজ করবে। কিন্তু ওজেডএ-র শিষ্য কার্তিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করে চশমাটা ছিনতাই করে। বিজ্ঞানী মৃত্যুর মুহূর্তে আরেকটি চশমা, বোন সুজানা ও অসমাপ্ত গবেষণাকর্ম ওস্তাদের হাতে তুলে দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
এভাবে কার্তিক দাশ তানিয়া, ওস্তাদ ও সুজানার সাধারণ শত্রুতে পরিণত হয়। তানিয়ার প্রেমিক রতন তাদের সঙ্গে যোগ দিলে কার্তিকের প্রতিপক্ষের তালিকা আরেকটু বাড়ে। কিন্তু দুষ্কৃতিকারীদের হাতে মিথ্যে ধর্ষিত হবার ভাণ করে মিস ব্ল্যাক ও মিস হোয়াইট, তাদের উদ্ধারে রতন হাজির হয় এবং সর্পে রূপান্তরিত ব্ল্যাক ও হোয়াইটের কামড়ে রতন অজ্ঞান হয়। তাকে কার্তিকের আস্তানায় এনে এই হুমকি দেয়া হয় বিদেশীদের কাছে পাচারের জন্য দেশের কিছু অমূল্য সম্পদ লুট করে না এনে দিলে তানিয়াকে হত্যা করা হবে। রতন অমূল্য সম্পদ কার্তিকের আস্তানায় এনে দেয়, কিন্তু সিসিটিভিতে তানিয়ার কাছেই ধরা পড়ে যায় যে সেই এই লুণ্ঠন করেছে। তানিয়া পুলিশ অফিসার হলে কী হবে, নায়িকা হয়ে নায়ক রতনকে ধরা তাকে মানায় না। রতনকে হাতের কাছে পেয়েও তানিয়া তাকে ধরতে ব্যর্থ হয়, দশ-বারোজন পুলিশও পারে না, তাকে ধরে ফেলে ওজেডএ। কিন্তু রতন তানিয়ার নিরাপত্তার কথা ভেবে কিছুতেই স্বীকার করে না সেই এই কাজ করেছে, বলে প্রযুক্তির যুগে এ নিশ্চয়ই কম্পিউটারের কারসাজি। তানিয়া ও সুজানাকে সর্পদ্বয় ও কার্তিকের গুণ্ডাপাণ্ডারা কার্তিকের কাছে ধরে নিয়ে যায়। কার্তিক তাদের দুই গ্লাস পানীয় পান করায়। তানিয়া ও সুজানা কার্তিকের অনুগত সর্পে পরিণত হয়। কিন্তু ওজেডএ জেল থেকে রতনকে উদ্ধার করে এবং দুজনে মিলে তাদের প্রেমিকাকে উদ্ধার করতে ও কার্তিককে ধ্বংস করতে তার আস্তানায় হামলা চালায়। কার্তিক ও ওজেডএ-র মধ্যে চশমার রশ্মির লড়াই হয়। কার্তিক পরাস্ত হয়। ব্যাপক মারামারির পরে সত্যের জয় হয়।
পরিচালনা: এ আর রহমান
অভিনয়: ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম, আলেকজান্ডার বো, পলি, শানু, মিশা সওদাগর।
দ্রষ্টব্য: এই ধারাবাহিকটি গীতি আরা নাসরীন ও ফাহমিদুল হকের 'বাংলাদেশের চলচ্চিত্র: সংকটে জনসংস্কৃতি' (শ্রাবণ, ২০০৮)-এ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১১:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




