[ ক্রিকেটে কেনিয়ার পথচলা বেশ পুরোনো। ২০০৩ সালে সহ-আয়োজক হয়ে তারা বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌছায়। এছাড়াও তাদের রয়েছে বেশকিছু দৈত্য বধের কাব্য। এছাড়াও তাদের দেশ পেয়েছে বেশকিছু নামকরা ক্রিকেটার। তাদের সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। সেই ক্রিকেটারদের তুলে ধরার ক্ষুদ্র চেষ্টা ]
স্টিভ টিকোলোঃ

কেনিয়ার সর্বকালের সফলতম এই অধিনায়ক জন্মেছিলেন ক্রিকেটিয় পরিবারেই। তিনি যখন বয়সভিত্তিক দলে খেলছেন। কেনিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক রান সংগ্রাহক ও তিনি-ই। এছাড়াও তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক কেনিয়ার জার্সি গায়ে।
মূলত তিনি একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ৩ নম্বরে খেলতে নেমে অভিষেক ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে ৭৬ রান করে সকলের নজরে চলে আসেন। এরপর থেকে যতদিন খেলেছেন নিজের সামর্থ্যের প্রমান রেখেছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩টি শতক এবং ২৪ টি অর্ধ-শতকের মালিক তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি তে তার একটি ১৪৭ রানের ইনিংস ও রয়েছে। ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা ও রইয়েছে তার। হার্ড হিটার টাইপের এই ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক টি-২০ তে খেলার সুযোগ কম পেলেও ২টি অর্ধ-শতক ঝুলিতে ভরে নেন।
মূলত ব্যাটসম্যান হলেও কাজের সময় মিডিয়াম পেসে পারদর্শী ছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার ৯৬টি উইকেট রয়েছে। বেশ কবার তিনি ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি ও পেয়েছেন। অধিনায়ক হিসেবে ছিলেন দারুন আক্রমনাত্নক, যার মাধ্যমে তিনি পেয়েছেন অনেক সাফল্য।
আফ্রিকা একাদশ এবং বিশ্ব একাদশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন একাধিকবার।
২০১২ সালে ছিলেন উগান্ডা ক্রিকেট দলের কোচ। পরবর্তিতে কেনিয়া অনুর্ধ্ব-১৯ দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ২০১৪ সালে কেনিয়া জাতীয় দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দায়িত্ব ও পালন করেন কেনিয়ার এযাবৎকালের সেরা ক্রিকেটার টিকোলো।
কলিন্স ওবুইয়াঃ

সেসময়ে শেন ওয়ার্ন এর পর অন্যতম সেরা লেগ- স্পিনার মনে করা হত তাকে। তার অসাধারন পারফর্মেন্সের দৌলতেই কেনিয়া ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌছায়। শ্রিলঙ্কার বিরুদ্ধে ২৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে তিনি দলকে পৌছিয়ে দেন সেমিতে। সেবার তিনি পুরো টুর্নামেন্টে ১৩ উইকেট লাভ করেন।
লেগ-স্পিনার হিসেবেও স্বীকৃত হলেও তার ব্যটের হাতটাও খারাপ ছিলনা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার রানসংখ্যা প্রায় ২০০০। ২০০৩ বিশ্বকাপের পর তিনি কাউন্টি খেলেছেন ওয়ারউইকশ্যায়ার এর হয়ে। তারপরই তার অ্যাপেন্ডিক্স এর অপারেশন হয় এবং ক্রিকেট থেকে একটা খন্ডকালিন অবসর নেন, সেখান থেকে ফিরে এসে বোলিং এ আগের মত স্বাচ্ছন্দ ভোগ করছিলেন না। তাই ব্যাটিং এর দিকে নজর দেন, সেখান থেকে তিনি একজন পুরোদস্তর ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ার পার করেন। ২০১১ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার ৯৮ রানের ইনিংস তারই স্বাক্ষী। এপর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অর্ধ-শতকের সংখ্যা ১১টি। আশা করি ৩৪ বছর বয়সী কলিন্স আরো রান করবেন এবং দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবেন।
টমাস ওডোয়োঃ

এই ক্রিকেটারের ছদ্মনাম ছিল "কালো বোথাম"! মিডল অর্ডারে দুর্দান্ত ব্যাটিং এবং মিডিয়াম পেসে কার্যকরী বোলিং এর জন্য তাকে এ নামে ডাকা হত।
তিনি কেনিয়ার পক্ষে একমাত্র ক্রিকেটার যে একইসাথে ৫০ উইকেট এবং ১০০০ রান সংগ্রহ করেন একইসাথে। পরবর্তিতে তিনি কেনিয়ার পক্ষে সর্বপ্রথম ১০০ উইকেট লাভের স্বীকৃতি অর্জন করেন, তিনি কেনিয়ার পক্ষে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক বর্তমানে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার একটি শতক ও ৮টি অর্ধশতক রয়েছে।
কেনিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশিবার(৬বার) ম্যাচসেরার খেতাব পান তিনি। ক্রিকেটের প্রসারে ওডোয়ো'র ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তিনি এখনো কাজ করে যাচ্ছেন ক্রিকেটের প্রচার ও প্রসারে।
তন্ময় মিশরাঃ

ভারতে জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটার কে বলা হয় কেনিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে মেধাবী ক্রিকেটার। ২০০৬ সালে তার অভিষেক হয় কেনিয়ার জার্সি গায়ে। ২০০৭ সালে তিনি ভারতীয় এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর ৩বছরের জন্য কেনিয়ার ক্রিকেট থেকে সরে থাকেন। আইপিএল ৫ এ তাকে ডেকান চার্জার্স দলে ভিড়িয়েছিল, পরবর্তীতে ২০১৪ সালেও বেঙ্গালুরু রয়েল চ্যলেঞ্জার্স তাকে কিনেছিল বেশ ভাল দামেই। এর কারন ছিল একটাই, তন্ময় ভারতীয় পাসপোর্টধারী হওয়া সত্ত্বে তাকে ভারতীয় কোটায় খেলানো সম্ভব ছিল।
কেনিয়ার জার্সি গায়ে পঞ্চাশের কম ম্যাচ খেলেও তার ঝুলিতে রয়েছে ৮টি অর্ধ-শতক। তার ব্যাটিং গড় ৩৪+! যা যে কোন কেনিয়ান ব্যাটসম্যান এর জন্য বিশাল।
২০১৫ বিপিএল এ ঢাকা ডায়নামাইটস তাকে কিনে নিয়েছে। নিঃসন্দেহে তা একটি অসাধারন সিদ্ধান্ত। তন্ময় এর মত মেধাবী ক্রিকেটারদের উঠে আসার ঢাল হতে পারে বিপিএল এর মত টুর্নামেন্টগুলো।
জিম্বাবুয়ের কাছাকাছি দেশ হওয়ার সুবাদে ক্রিকেটে পদচারনা কেনিয়ানদের। কিন্তু এপর্যন্ত তারা কম মেধাবী ক্রিকেটারদের জন্ম দেয়নি।একদা তাদের কিছু খেলোয়ারদের নাম শুনলে বিপক্ষ দলের গলা শুকিয়ে যেত। কিন্তু কেনিয়া ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি বলে আজ ক্রিকেটে কেনিয়া একটু অপরিচিত নাম অনেকটা। এর পেছনে অর্থনৈতিক মন্দাও দায়ী। আমরা তাও আশা করবো কেনিয়া তাদের হারানো ঐতিহ্য আবারো ফিরিয়ে আনবে এবং ক্রিকেট কে করবে আরো বেশি আকর্ষনীয়
ছোট দলের তারকারাঃ প্রথম পর্ব(আফগানিস্তান)
ছোট দলের তারকারাঃ দ্বিতীয় পর্ব(কানাডা)
ছোট দলের তারকারাঃ তৃতীয় পর্ব(বারমুডা)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



