[ আমাদের চারিপাশে এত বড় বড় প্ল্যায়ারদের ভিড়ে কিছু খেলোয়ার আড়ালেই থেকে যায়। অনেকে তাদের সম্বন্ধে জানলেও অনেকে জানেন না, তাদের একটু তুলে ধরার ক্ষুদ্র চেষ্টা ]
মোহাম্মদ নবী:
এই ক্রিকেটারের বেড়ে ওঠা পাকিস্তানের পেশোয়ারে। সেখানেই ক্রিকেটের দীক্ষা। আফগানিস্তানের বারুদ বেগে এগিয়ে যাওয়ার পেছনের অন্যতম কান্ডারী তিনি। ২০১৩ সালে তিনি অধিনায়কত্ব পান, ইন্টারকন্টিন্যান্টাল কাপের জন্য। এরপর থেকেই মূলত আফিগানিস্তানের মূল জয়রথ শুরু হয়। এর আগেও তিনি টি-২০ দলের খন্ডকালীন অধিনায়ক ছিলেন ২০১০ সালে এশিয়া কাপে।
মূলত একজন অফ-স্পিনার হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করেন নবী। ব্যাটিং অর্ডারে ব্যাট করতেন নিচের দিকে। আফগানিস্তানের পক্ষে প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই জিম্বাবুয়ে একাদশ এর বিরুদ্ধে সেঞ্চুরী হাকান, আইসিসি ইন্টারকন্টিন্যান্টাল কাপে। সেই থেকেই সবাই তার ব্যাটিং এর প্রতিভা টাও দেখে, শেষের দিকে নেমে গুরুত্বপূর্ন সময়ে দ্রুত রান করার ক্ষমতা তার আছে। তার অধিনায়কত্ব আফগানিস্তান প্রথমবারের মত ২০১৪ সালের এশিয়া কাপে হারিয়ে দেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ কে! সদ্যসমাপ্ত জিম্বাবুয়ে সফরে আফগানিস্তান তাদের ইতিহাসের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয় করে, সেখানেই নবী তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরী এবং সেই সাথে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট। আসছে বিপিএল এ তিনি রংপুর রাইডার্সের হইয়ে মাঠে নামবেন।
শাপুর জাদরানঃ
৬ ফুট ২ ইঞ্চির এই দানব বর্তমানে এশিয়ার অন্যতম দ্রুতগতির বোলার, নিয়মিত ৮৫+ মাইলে বোল করে থাকেন। এই ক্রিকেটারের জীবন এত সহজ ছিল না বেড়ে ওঠা আফগানিস্তানের রিফিউজি ক্যাম্পে। সেখান থেকেই স্বপ্নে স্বপ্নে ক্রিকেটে চলে আসা। ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে আফগানিস্তান যথাক্রমে ওয়ার্ল্ড লিগ ডিভিশন ভাইভ এবং ফোর এ জয়ী হয়, এর মূল সৈনিক ছিলেন শাপুর জাদরান।
ক্ষ্যাপাটে মেজাজের এই বোলার বিপিএল এ খুলনা রয়েল বেঙ্গলস কে একবার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এ ছাড়া বলতে গেলে কোথাও তার মেধার মূল্যায়ন করা হয়নি। টি-২০'র বড় বড় আসরের জন্য তিনি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। বেশি বেশি সুযোগ দেয়া প্রয়োজন তার মত যারা সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
মোহাম্মদ শেহজাদ:
খর্বাকৃতি কিন্তু কিছুটা স্থূলকায় এই কিপার ব্যাটসম্যান আফগানদের পক্ষে সর্বপ্রথম ডাবল সেঞ্চুরী করেন আয়ারল্যান্ড এর বিপক্ষে ইন্টারকন্টিন্যান্টাল কাপ এ! মূলত তিনি একজন মারকাটারি ব্যাটসম্যান এবং তাকে আফগানিস্তানের একমাত্র টি-২০ স্পেশালিস্ট বলা হয়। তিনি বিখ্যাত হন তার একটি আন-অর্থোডোক্স শট "উপর কাট" এর মাধ্যমে।
ওয়ানডে তে অধারাবাহিকতায় এখন তাই কিছুটা ব্রাত্য দলে। কিন্তু টি-২০ দলে খেলে যাচ্ছেন বেশ ভালভাবেই এবং কিছুদিন আগের টি-২০ কোয়ালিফায়ার এ বেশ ভাল রান দেয় তার ব্যাট।
হামিদ হাসানঃ
বর্তমানে আফগানিস্তানের দ্রুততম বোলার তিনি। তিনি- একমাত্র আফগান যার বোলিং গতি রেকর্ড করা হয় ৯০+ মাইল ঘন্টায়। তিনিই কিছুদিন আগে আফগানিস্তানের হয়ে সর্বপ্রথম ওয়ানডে তে ৫০ উইকেট এর মাইলফলক স্পর্শ করেন, যা ছিল বিশ্বের ইতিহাসের ৭ম দ্রুততম।
দারুন উগ্র এই ক্রিকেটারের ও বেড়ে ওঠা রিফিউজি ক্যাম্পে! বিপিএল এর প্রথম আসরে বরিশাল বার্নার্স তাকে বেশ ভাল দামেই দলে ভিড়িয়েছিল। এছাড়া তিনি উল্লেখযোগ্য বলতে গেলে পাকিস্তানের ঘড়োয়া আসরেও মাঠ কাপিয়ে থাকেন। তার আরো বেশি বেশি সুযোগ পাওয়া উচিৎ, নিজেকে প্রমান করার জন্য সুযোগ ব্যাতিত কোন কিছুই নেই।
আফগান বেশিরভাগ ক্রিকেটারের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা রিফিউজি ক্যাম্পে! সেখান থেকে প্রতিনিয়ত জীবনের সাথে যুদ্ধ করে তারা আজকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বুকে বল, কবজি তে জোর তাদের কম না। তারা তার স্বাক্ষর ও রেখে চলেছেন। তারা আরো এগিয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু ঘড়োয়া টি-২০ আসরগুলোতে তাদের আরো সুযোগ দেয়া গেলে তা সকলের জন্যই আকর্ষনীয় হয় উঠতো।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৮