[ ক্রিকেটের অঞ্চলে কানাডার পথচলা নতুন নয়। ২০০৩ সালে বিশ্বকাপে তারা টেস্ট খেলুড়ে বাংলাদেশ কে হারিয়েও দেয়। কিন্তু তাদের সে পথচলা স্থায়ী হয়নি, যে অবস্থায় তাদের থাকার কথা তারচেয়ে তারা এখন অনেকটাই পেছনে পড়ে রয়েছে। তাদের বেশকিছু মেধাবী খেলোয়ার ও দেখেছে পৃথিবী। তাদের অনেককেই অনেকে চিনেনা,তাদের এক-দুইজন কে একটূ পরিচয় করিয়ে দেবার ক্ষুদ্র চেষ্টা ]
জন ড্যাভিসনঃ
কানাডার ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত ক্রিকেটার তিনি। অস্ট্রেলিয়ার ঘড়োয়া ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন সাউথ অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে। মূলত মারকাটারি ব্যাটসম্যান হিসেবেই বহুল পরিচিত তিনি, কিন্তু অফ-ব্রেকে হাত ঘুড়ানোতেও কম পারদর্শী নন। ২০০২ সালে তিনি নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন এবং ২০০৩ বিশ্বকাপে অংশ নেন।
২০০৪ সালে তিনি ইন্টারকন্টিন্যান্টাল কাপের অধিনায়ক মনোনিত হন। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৩৭ রানে নেন ১৭ উইকেট, যা ছিল জিম ল্যাকারের পর সেরা(১৯৫৬)। এর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭৬ বলে ১১১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন। সেই বিশ্বকাপেই নিউজিল্যান্ড এর বিপক্ষে ৬২ বলে ৭৫ রানের আরেকটি ক্যামিও খেলেন।
২০০৭ বিশ্বকাপে তিনি আবারো নিউজিল্যান্ড কে ২৩ বলে ৫০ রানের একটি ছোটখাট ঝড় উপহার দেন, যা ছিল বিশ্বকাপ ইতিহাসের তৃতীয় দ্রুততম। ২০১১ বিশ্বকাপের পর তিনি অবসর গ্রহন করেন।
২০১৩ অ্যাশেজ চলাকালে তিনি অস্ট্রেলিয়া দলের স্পিন কোচের দায়িত্বে ছিলেন। সেইসময় তার হাত ধরেই মূলত আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় আসেন নাথান লিওন এবং জাভিয়ের ডোহার্টি।
আশিষ বাগাইঃ
বর্তমান কানাডা জাতীয় দলের অধিনায়কের জন্ম ভারত এর দিল্লীতে। ১১ বছর বয়সে পাড়ি জমান কানাডা তে, সেখান থেকে অংশ নেন যথাক্রমে অনুর্ধ্ব-১৫ এবং অনুর্ধ্ব-২১ বিশ্বকাপে কানাডার জার্সি গায়ে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে কানাডার স্বপ্নের ম্যাচে অভিষেক হয় এই উইকেট-কিপারের। তার পর থেকে কানাডার হয়ে প্রতিটি ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করার রেকর্ড করেন তিনি। কানাডার হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মালিক এই ক্রিকেটার, ১৩৭ রান যা ছিল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। এছাড়াও তার আরেকটি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরী ও রয়েছে আয়ারল্যান্ড এর বিপক্ষে।
এই ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক রানের গড় ৩৮+, যা যে বর্তমান যুগে বেশ ভালই বলা চলে। কানাডার কাপ্তান হিসেবে দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন।
হেনরি ওসিন্ডেঃ
উগান্ডায় জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটারের বেড়ে ওঠা সেখানেই। এমনকি উগান্ডা জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ ও খেলেছেন। ডানহাতি এই পেসার ছিলেন কানাডা দলের পেস অ্যাটাকের মূল ভরষা।
২০১১ বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে জয়ে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন এবং ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন।
ক্রিকেট কানাডার ভিত অতটা শক্ত নয়, তাই তাদের ক্রিকেটারদের ধারাবাহিকতা এবং সুযোগের বেশ অভাব। এর জন্যই মূলত তার মত অনেক ক্রিকেটারই মেধা থাকা সত্ত্বেও উপরে উঠতে পারেননি।
রিজওয়ান চিমাঃ
পাকিস্তানে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা এই সাবেক কানাডিয়ান অধিনায়কের। ২০০৫ সালে ভাবনার অতীত ঘড়োয়া পারফর্মেন্স এর মাধ্যমে আবির্ভাব ঘটে এই মারকাটারি ব্যাটসম্যান এর। তিনি এতটাই আক্রমনাত্নক ছিলেন যে তখনকার বোদ্ধারা তাকে আফ্রিদী এবং জয়াসুরিয়ার পরেই রাখতেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬১ বলে ৮৯ রান এবং আনকোরা বোলিং করেও ৩উইকেট নিয়ে তিনি সর্বপ্রথম আলোচনায় আসেন। সেবছরই শ্রিলঙ্কার বিরুদ্ধে ৪৩ বলে ৬৮ রানের ভয়ডরহীন ইনিংসটিও অনেকের মনে দাগ কাটে।
টি-২০ যুগের সূচনালগ্নে তিনি ছিলেন তৃতীয় সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট ওয়ালা ব্যাটসম্যান। বেশ ভয়ডরহীন ভাবেই তিনি তার দলকেও নেতৃত্ব দেন ২০১১ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত।
ক্রিকেটে কানাডার পথচলা অনেকদিন ধরে হলেও তাদের অবকাঠামো এখনো অতটা উন্নত নয়। এবং তাদের বেশিরভাগ ক্রিকেটের বাইরের দেশ থেকে আসা। ভিসা জটিলতায় অনেক ক্রিকেটার অনেক সময় বিশ্বকাপ খেলা থেকেও বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নাহলে ক্রিকেট কানাডা থেকে অনেক মেধাবী ক্রিকেটারের উঠে আসা আমরা হয়ত দেখতে পেতাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩