"লজ্জ্বা শরম নেই তোর ?"
- কি করলাম ?
একফালি হাসি দিয়ে পাশের বাড়ির মেঝকাকী ঠিকই চলে যায়। তখন ক্লাস ৫ এ পড়ি। স্নান কততাম সব কিছু খুলে। মা গায়ে পানি দিয়ে দিত। গায়ে সাবান দিয়ে দিত। আর এক ছিল জাল। মাছ মারতে যে জাল বানান হয় , তার নতুন একটা কেটে বানাত মা।
"ইস গায়ে কি লাগছে এসব , শুনি ? সারাদিন খেলা ! "
"আস্তে ঘষা দাও! লাগে তো ! "
"না লাগলে ময়লা যাবে ??"
গায়ের ময়লার তত্ত্ব এই যে ভারসিটি পেরিয়ে গেলাম এখনো খুব একটা ভাল জানিনা। পরিষ্কার করা দরকার তাই করি।
বাবার অত্যন্ত মাছ মারার শখ , কিন্তু মা রাত্রে বেলা এভাবে বেরাতে দেয় না। কারণ একটাই নদীতে কত কিছুই থাকে। বাড়ি যদিও আমাদের নদীর পাশে , তবে নদীতে কোন কারণ ছাড়া কখনো নামতে দিত না। এতটাই কেয়ার।
প্রাইভেট কি জিনিস ৮ এ উঠার আগে বুঝি নি। বুঝবই বা কেমনে ? দাদুর হাতের কড়া মার আর বকুনি খেয়ে খেয়ে পার করলাম ক্লাস ৭। দাদু মারা গেলে হয়ত ১০ম শ্রেনী অব্দি প্রাইভেট শব্দটা মুখে নেয়া হতনা।
একদমই ভাল ছাত্র ছিলাম না বলে নিজের আক্ষেপ তা আজো যায়নি। ভাল ছাত্র হব কিভাবে ? ছাত্র ভাল হতে গেলে তো ব্রেইণ(!) লাগবে। সাথে লাগবে চেষ্টা। আমার চেষ্টা ছিল কিভাবে ভাল ভিডিও আর ফটো তোলা যায়। একটা স্টুডিও আছে মানে ছিল আমাদের , সেখানেই সারা দিন পরে থাকা। এক বাবাকে খুব ভয় করতাম বলে উনি অফিস থেকে বাড়ি আসার আগে দোকান থেকে বাড়ি আসতাম। তবে যাই হোক , এই যে এত বড় বিবাহ অনুপযোগ্য অথচ বেশী বয়সী হয়ে গেছি , এ পরযন্ত সব মিলে বাবা গায়ে তুলেছে মাত্র ৩ বার।
১) একবার লাঠি দিয়ে মার খেয়েছি, কারন_ টাকা দিয়ে ক্রিকেট।
২) ঝাড়ু দিয়ে মার খেয়েছি - কারণ_টাকা দিয়ে ক্রিকেট খেলা !
৩) পাটকাঠির কয়েকটা টুকড়া দিয়ে ভীষণ মার খেয়েছিলাম , সাথে হাসপাতালেও নেয়া লেগেছিল , কারণ ছিল ভয়াবহ! এক সম্মানীয় লোককে (!) রাজাকার বলে গালি দিয়েছিলাম। কারন সে লোক মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দেয়।
এই আরকি।
সত্যি বলছি , আমার বাবা মায়ের লাভ ম্যারেজ ।বন্ধুমহল বলত আমি নাকি ভাল প্রেমের চিঠি লিখতাম । সাধারণ কবিতা লেখা শুরু আমার প্রথম প্রেমে পড়া ক্লাস ৮ থেকে। এক নিতান্ত সুন্দরী মেয়ের প্রেমে (!) পড়েছিলাম। আমার বন্ধুরা ক্লাস ৫ থেকে মেয়ের পিছনে ঘুরে। অথচ মেয়েদের সাথে এত মেলামেশা করি ! কারন আমার সেই ছোট্ট বেলার কানামাছি , পান্তাভাত , গোল্লাছুট এসব খেলার সাথীরা কিছু কয়েক সমবয়সী বন্ধু আর বেশীরভাগই বান্ধবী গোষ্ঠী। তবে এত মিশা সত্ত্বেও আমার সাথেই পরা মেয়ে রুপা যখন প্রেম করে, আমি তখনও সত্যি সত্যি কমপ্লাইন খেতাম।
অষ্টম শ্রেনীতে যখন স্টুডিওর একমাত্র ভিডিও এডিটর আমি ছিলাম , তখন বিয়ে ,বিয়ের পর কি হয় , ছেলে মেয়ের ভালবাসা এসব নিয়ে জ্ঞান পাই। না এসব জানতে আগে হলে , পরিবেশ অমন চাই। আমার চারিদিকের পরিবেশ আমার বুঝার পর থেকে ৫-৬ বছর অমন ছিল না। এই যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি , কে জানি কার মেয়েকে নিয়ে পালাল , কে অকাজে গিয়ে ধরা পড়ল, বিয় হল , এসব নিয়ে কৌতুহল যেমন বাড়ে তেমন বুঝতেও পারি। ক্লাস ৮ এ সরকারী স্কুলে ভর্তি হই গ্রাম ছেড়ে।
গ্রাম আর শহরের দুরত্ব মাত্র কয়েক কিমিঃ মাত্র। শহরের স্কুল। ভাল ভিডিও গেমস খেলতাম। ১টাকা প্রতি কয়েন। দিন কদিন যেতে না যেতে এক প্রাইভেটে , ম্যাডামের মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম। বন্ধুদের সামনে প্রপোজ ও করেছিলাম। ম্যাডাম জেনে বাবাকে বলল। এরপর আমার গোটা ক্লাস এইট জুড়ে স্কুলে যেতে হয়নি। শুধু প্রাইভেট আর এক্সাম। বাবার ট্রান্সফার হলে নাইনে আমাকে আবার গ্রামে যেতে হয়। সেই যে স্কুল ছেড়েছি আর কোনদিন স্কুলে যেতে হয়নি কেবল পরীক্ষা ছাড়া। গ্রামের স্কুল তার উপর। স্কুল না চিনলেও পাশের খেলার মাঠ ঠিকই চিনত। মার গুলো খেয়েছি না এখানে এসেই। আমার বাবা পাষাণের মত মারতে পারে , আবার ভাত খেয়ে দুদিন পাষাণের মত কাটিয়েও দেয়।
অনেক বছর বাদে শুনলাম ম্যাডামের সেই মেয়ে মেডিকেল পাশ করে বের বাইরে চলে গেছে। বাকীটা থাক ইতিহাস।
জীবনের একটা বড় অভিজ্ঞতা হল- কার্জন হল। এ যেন ইতিহাস রচয়িতা ।
শুধু এতটুকু বলব, কার্জনে আর রেজিষ্ট্রার ভবনে আর যেতে হবে না এটা আমার সুভাগ্যই বটে। উপরওয়ালার কাছে এর জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞ। আমাকে ঐ পরীক্ষার দিনদুলি পার করিয়ে দেয়ার জন্য। বাকীসব দিনের জন্য ধন্যবাদ।
চাকুরী আমি করব না আগে থেকেই জানি। সে এনার্জি আর পাওয়ার মত ব্রেইন কোন দিনও ছিল না। সিধকাটি আমার ঐ স্টুডিওতেই। এখন দোকানটা বেশ বড়। আগে , মফস্বলে ছিল। এখন শহরে। যায় দিন ভাল , আসে দিন রঙিন। এই হোক জীবন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৯